বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। তা একক বিনিয়োগে হোক বা অন্য দেশের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগেই হোক তাতে কোনো আপত্তি নেই চীনের।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়ান।
এ সময় চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সোনাদীয়া সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের দুটি কোম্পানির আগ্রহ দেখালেও পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণে কয়েকটি কোম্পানির আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশ আগে সোনাদীয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করলেও এখন পটুয়াখালীর পায়রাতেও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে এখন পর্যন্ত কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হয়নি। চীন এখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সার্বিক সহযোগিতা দিতে চায়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ভৌগোলিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে চীনা বিনিয়োগ কম থাকলেও এ বছর প্রচুর বিনিয়োগকারী আসবে। বিশেষ করে জ্বালানিখাত, সরকারি প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ ও তৈরি পোশাকখাতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। তিনি জানান, আগামী ৫ বছরে বিদেশ থেকে চীন ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করবে। এ পণ্য তৈরি করে চীনে রফতানি করলে বাংলাদেশ লাভবান হবে এবং বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমে আসবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে যেমন ২০২১ সালকে টার্গেট করেছে, চীনও তেমনি ওই বছরটিকে একইভাবে টার্গেট করেছে। কারণ, ওই বছরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ পালিত হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চীন ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আগামীতে বাংলাদেশকে দেয়া চীনের সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। এটি এখন গোটা বিশ্বের সমস্যা। একটি দেশ যত শক্তিশালীই হোক, সে একা সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে পারবে না। তেমনি একটি দেশ যতই গরিব হোক এর আক্রমণ থেকে রেহাই পাবে না। সম্মিলিতভাবেই এটির মোকাবিলা করতে হবে। সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক খুন হয়। এতে পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে ‘আইএস’-এর অবস্থান রয়েছে বলে যে তথ্য দিয়েছে, তার তদন্ত না করেই চীন এ ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে না বলে উল্লেখ করেন দেশটির রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়ান।
তিনি আরো বলেন, ঐতিহাসিক দিক দিয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিবিড়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জন করতে হলে চীনে যাও।’ আবার আমাদের দেশে প্রচলিত আছে ‘জ্ঞান অর্জন করতে হলে বাংলা যাও।’ তিনি বলেন, এই বাংলা থেকেই হাজার বছর আগে অতীশ দীপঙ্কর চীনে গিয়ে জ্ঞান বিতরণ করে এসেছিলেন। এ ছাড়া এই অঞ্চল থেকেই আমরা গণিত ও দর্শনসহ গৌতম বুদ্ধের বাণীর অমূল্য শিক্ষা অর্জন করেছি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডিক্যাবের সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি ও সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান।