বিদেশিরা আগে ৫ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারলেও এখন তা দ্বিগুণ করে ১০ লাখ ডলার করা হয়েছে।
নতুন শিল্পনীতিতে বলা হয়েছে, ৫ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ বা ১০ লাখ ডলার স্থানান্তর করে বিদেশিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চাইতে পারতেন। এখন কোনো বিদেশি ১০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ বা ২০ লাখ ডলার (বাংলাদেশের) স্বীকৃত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে জাতীয় শিল্পনীতি সংশোধন করে বিদেশিদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের ২০১০ সালের জাতীয় শিল্পনীতিকে হালনাগাদ করে বিদেশিদের নাগরিকত্ব পেতে বিনিয়োগের সীমা বাড়ানোর কথা জানান। তিনি বলেন, কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের স্থায়ী ‘রেসিডেন্টশিপ’ পেতে চাইলে তাকে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলারের পরিবর্তে এখন দুই লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।
সম্ভাবনাময় বিদেশি বিনিয়োগকারীকে ন্যূনতম ৫ বছরের ‘মাল্টিপল ভিসা’ দেয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এসব সুবিধা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশিরা বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার জন্য খুব বেশি আগ্রহী না। কিন্তু আমাদের তরফ থেকে সেই সুযোগ রাখা রয়েছে। সংশোধিত শিল্পনীতিতে বিভিন্ন শিল্পের নতুন করে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান শফিউল আলম। তিনি বলেন, উৎপাদনশীল খাতে ৫০ কোটির বেশি মূলধন এবং ৩০০ জনের বেশি শ্রমিক যেখানে কাজ করবে সেগুলোকে বৃহৎশিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সেবাখাতে ব্যয়সহ ৩০ কোটি টাকার বেশি মূলধন এবং ১২০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে সেগুলো হবে বৃহৎশিল্প। উৎপাদনশীল খাতে প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১৫ কোটি টাকার বেশি মূলধন এবং ১২১ থেকে ৩০০ শ্রমিক নিয়োজিত থাকলে তাকে মাঝারি শিল্প বলছে সরকার। আর সেবাশিল্পে দুই থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন এবং ৫১ থেকে ১২০ জন শ্রমিক কাজ করলে মাঝারি শিল্প হবে। উৎপাদনশীল খাতে ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা মূলধন এবং যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৩১ থেকে ১২০ জন কাজ করবে সেগুলোকে ক্ষুদ্র শিল্প ধরা হবে। সেবাখাতে ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন এবং ১৬ থেকে ৫০ জন শ্রমিক কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে তাকে ক্ষুদ্রশিল্প বলা হবে। এছাড়া ১০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা মূলধন এবং যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১৬ থেকে ৩০ জন বা তার থেকে কম মানুষ কাজ করে সেগুলোকে মাইক্রো শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশোধিত শিল্পনীতি অনুযায়ী সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে পারবে জানিয়ে শফিউল বলেন, খাস ও চরাঞ্চলের জমি নিয়ে ‘ল্যান্ড ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ল্যান্ড ব্যাংক থেকে ভূমি বরাদ্দে শিল্প মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে। ল্যান্ড ব্যাংকের জমি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেখানে শিল্পনগরী স্থাপন করা যাবে। শিল্পায়নে নারী উদ্যোগের বিকাশে বিশেষ সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা পাবেন তারা। সংশোধিত শিল্পনীতিতেও রফতানি শিল্পকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হবে। এদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ থাকবে। বিদেশি বিনিয়োগাকারীরা দেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের মতো কর অবকাশ, রয়ালটি প্রদান, প্রযুক্তি কৌশল ফি সুবিধা পাবেন।