আমাদের দেশের টিভি মিডিয়াটা মোটামুটি ননপ্রফেশনাল সিস্টেমেই চলছে আজ অবধি। এখানে সবাই সবার মত। কেউ কারো কথা ভাবার শোনার বা বলার নাই। সুতরাং এটার একটা পেশাদার পথ আমাদেরকেই তৈরি করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কিন্তু এটা কি শুধুই একটা বার্ষিক বনভোজন আয়োজনের আদিখ্যেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত? আমার মনে হয় না। এটার অতি অবশ্যই একটা শক্ত কাঠামো থাকতে হবে। একটা শক্ত গঠনতন্ত্র থাকতে হবে। নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নেই। আমাদের টিভি মিডিয়াতে ১০০০ এর ও বেশি পরিচালক আছেন নাকি শোনা যায়। কিছু টেলিভিশনের কল্যাণে ফটকাবাজ পাসিং শর্টের এক্সট্রারা পরিচালকের তকমা লাগিয়েছে এবং গাড়ি বাড়ি করে ফেলেছে। কিভাবে করেছে তা আমরা সবাই কম বেশি জানি। আবার ডেটিং করার নানান অশ্লীল কার্যকলাপ, নায়িকার নাভী দোলানো এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নাটকের নামে আমাদের ড্রয়িংরুমের পরিবেশ নষ্ট করা তথাকথিত রুচীহীন নীল নাটকের পরিচালক নামের দুষ্টু লোকেরা এখানে থাকবে কিনা বা থাকলে কিভাবে থাকবে সেটাও বড় বিবেচ্য। শাহবাগ, ছবির হাট, মগবাজার এলাকার হাজারও পরিচালককে প্রতিদিন পাওয়া যায় যারা স্বপ্নে নাটক সিনেমা বানিয়ে ফেলছেন। এরা ওখানটায় কোন ভুমিকায় থাকবেন সেটাও ভাবতে হবে। সব মিলিয়ে আমার কিছু প্রস্তাবনা আছে, জানি আমার মত খুদ্র মানুষের এই প্রস্তাবনার কোন মূল্য নেই, তবু আমি আমার মতটাকে প্রকাশ করছি।
১. নেতৃত্বে থাকতে হবে বহু সত্ত্বার মানুষ নন এমন পরিচালকদের। আরও পরিস্কার করে বলতে গেলে শুধু পরিচালনাটাই যার পেশা এমন দক্ষ মানুষদের সমন্বয়ে কমিটি করতে হবে। বড়জোর লেখক সত্ত্বাটা তার ভিতর অতিরিক্ত থাকতে পারে। এবং অবশ্যই বিতর্কিত বা অভিযুক্ত কোন পরিচালক থাকবেন না।
২. একটা শক্ত গঠনতন্ত্র থাকতে হবে যেখানে সব পরিচালকরা এক সুত্রে কথা বলতে বাধ্য হোন
৩. দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্তকে স্বীকার করেনা এমন কোন রাজনৈতিক আদর্শের মানুষ এখানে থাকবেনা
৪. ১০ টা থেকে ১০ টা নয়, কাজের সময় উইথ মেকআপ ১২ ঘন্টা, উইদাউট মেকআপ ১৪ ঘন্টা করতে হবে। কারন এখন শতকরা ৯৫ জনের ও বেশী শিল্পী ১০ টায় রেডি হননা কাজের জন্য। যদি পরে উপস্থিত হন তাহলে তাকে পরে যেতে হবে অথবা রেমুনারেশান থেকে কেটে নেয়া হবে। আবার পরিচালক যদি মনে করেন ১২ ঘন্টার বেশী কাজের প্রযোজন হচ্ছে তাহলে ঘন্টা হিসেবে তাকে অতিরিক্ত রেমুনারেশান দিবেন।
৫. কোন প্রযোজক যদি ঠিকমত টাকা পরিশোধ না করেন তাহলে প্রযোজক সমিতির সাথে পূর্ব নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী সেই টাকা প্রযোজক সমিতি প্রদান করবে অথবা ঐ প্রযোজকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া এবং তাকে সবাই বয়কট করতে হবে। ঐ প্রযোজকের সাথে অন্য কোন পরিচালক কাজ করলে তার সদস্য পদ বাতিল করা হবে। বহিস্কৃত পরিচালক কোন টেলিভিশনে কাজ করতে পারবেন না।
৬. কোন শিল্পী সিডিউল ফাঁসালে সকল পরিচালক তাকে বয়কট করা এবং তার কোন নাটক কোন টিভি চ্যানেলে প্রচার হবেনা।
৭. শিল্পীরা পরিচালক সমিতির নির্ধারিত চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করে কাজ করবেন। যদি স্বাক্ষর না করতে চান তাহলে তাকে বয়কট করা হবে।
৮. শিল্পীদের রেমুনারেশানের একটা তালিকা পরিচালক সমিতিতে থাকবে। ইচ্ছামত যাচ্চেতাইভাবে শিল্পীরা যার কাছে যা পারেন এইভাবে টাকা নিতে পারবেন না। শিল্পীদের রেমুনারেশান বাড়লে পরিচালকের রেমুনারেশানও বাড়াতে হবে এবং টেলিভিশনে নাটকের দামও বাড়াতে হবে।
৯. টেলিভিশনে নাটকের ক্ষেত্রে গ্রেডেশানের ব্যবস্থা থাকবে এবং A B C এই তিন ক্যাটগিরির জন্য নাটকের দাম নির্ধারিত থাকবে। যেমন ধরা যাক A- ৫ থেকে ৬ লাখ, B- ৪ থেকে ৫ লাখ এবং C- ৩ থেকে ৪ লাখ। একটি এক ঘন্টার নাটকের সর্বনিম্ন দাম ৩ লক্ষ টাকা হতে হবে। বিশেষ অকেশানে সেই দাম হবে দেড় গুন। টেলিভিশন চ্যানেল এইটা না মানলে সেই চ্যানেলে কোন নাটক সরবরাহ করা হবেনা।
১০. নাটক প্রচারের ১ মাসের মধ্যে নাটকের মূল্য টিভি যেন পরিশোধ করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কোন চ্যানেল না করলে সেই চ্যানেল বয়কট করা হবে।
১১. কোন শিল্পী সিডিউল ফাঁসালে তাকে সেই নাটকের সম্পূর্ন ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করতে হবে।
১২. সরকারের ১০% ট্যাক্স সম্পূর্ন প্রত্যাহারের আলটিমেটাম দিতে হবে, তা না হলে কোন টিভিতে কোন নাটক সরবরাহ করা হবেনা। ট্যাক্স যদি দিতেই হয় সেটা টিভি চ্যানেলের দ্বায়িত্ব হতে হবে।
১৩. নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্তির জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে যেন কোন রকমে দেড় লাখ টাকা ম্যানেজ করে ডিরেক্টর হওয়া কেউ এখানকার সদস্য হতে না পারে।
১৪. শ্যুটিং সেটে নরমাল খাবার ও নাস্তার বাইরে কোন খাবার সরবরাহ করা হবেনা, যদি কোন শিল্পীর স্পেশাল কিছু দরকার হয় তাহলে তিনি তার নিজস্ব অর্থ ব্যয়ে সেটা করবেন।
১৫. পরিচালক সমিতিতে আসা যে কোন লিখিত অভিযোগ ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নিশ্পত্তি করতে হবে।
১৬. প্রতি মাসের নির্ধারিত একটি দিনে নির্বাহী পরিষদের এবং প্রতি ৩ মাসে একবার সাধারন পরিষদের সভা আয়োজন করতে হবে।
১৭. প্রযোজকদের সবার প্রথমে নাট্যকার ও পরিচালকের রেমুনারেশান পরিশোধ করতে হবে, তারপর অন্যদের।
১৮. পরিচালক সমিতির অনুমোদন ছাড়া কোন সেক্টরের টাকা বাড়ানো যাবেনা, যেমন শিল্পী রেমুনারেশান, টেকনিক্যাল রেন্ট, হাউজ এন্ড লোকেশান রেন্ট ইত্যাদি।
১৯. সর্বপরি ভুলে গেলে চলবেনা একজন পরিচালক হচ্ছেন একটা শিপের ক্যাপটেন। সুতরাং এই পেশার হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে।
লেখক- শিমুল সরকার, নাট্যকার, পরিচালক