সাম্প্রতিক সময়ের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মনোবল বেশ কিছুটা ভেঙে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে। গণমাধ্যমকে অনেকটাই এড়িয়ে চলছে। তবে এত গোপনীয়তার মধ্যেও গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে একটি মেইল পাঠিয়েছে। যে মেইলে চুরির ঘটনা থেকে শুরু করে একেবারে সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করা হয়েছে। সেই মেইলে বেশ কিছু সুপারিশ রাখা হয়েছে।
রোববার নতুন গভর্নর ফজলে কবির যোগদান করার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এমনকি, যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাভাবিক ছুটির জন্য আবেদন করেছিলেন তাদের ছুটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ খুব বেশি জরুরি না হলে আপাতত ছুটি দেয়া হবে না। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি বিভাগ ও শাখায় অতিরিক্ত নজর রাখা হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে অনেক কর্মকর্তার মনোবল অনেকটা কমে গেছে। তবে নতুন গভর্নর চাইছেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোবল অটুট থাকুক। কারণ সবাইকে নিয়ে তিনি কাজ করতে চান। চুরি করা অর্থ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সবার মনোবল ফিরিয়ে আনাও নতুন গভর্নরের এখন অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কম্পিউটার ওপেন থেকে শুরু করে মেইল চেক করার বেশ কিছু নিয়ম নীতি পরিবর্তন হতে পারে। পরিবর্তিত নিয়মে অফিস সময়কালে ব্যক্তিগত মেইল চেক করার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জবাবদিহির বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা হবে। নতুন গভর্নর খুব শিগগির বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করবেন। যে বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা তুলে ধরে বেশ কিছু পরামর্শ দেয়া হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমে কথা বলার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের কথাও জুড়ে দেয়া হবে।
অন্যদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে একই আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। কেউ আড়ালে আবডালে, আবার কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে সবার সামনেই আলোচনা করছেন। আর এর প্রভাব কিছুটা হলেও ব্যাংকিং খাতে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে গ্রাহক থেকে শুরু করে উদ্যোক্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংকার জানিয়েছেন, এর প্রভাব বেশি দিন থাকবে না। কারণ ইতিমধ্যে সরকার একদিকে যেমন সতর্ক দৃষ্টি রাখছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটর বাড়িয়েছে। তবে তিনি নবনিযুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে নিয়ে বেশ কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, এখানে এই সময়ে একজন দক্ষ ও সাহসিকতা সম্পন্ন সচিব নিয়োগ দেয়া উচিত ছিল।
গতকাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন সচিব মো. ইউনুসুর রহমান মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেন। বিকেলে অর্থমন্ত্রীর সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত কোল্ডস্টোরেজ সমিতির এক সভায় উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় পদ্মায় অর্থমন্ত্রীর প্রাক বাজেটে অংশগ্রহণ করেন। তবে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করার মানসিকতা সম্পন্ন তেমন ব্যাংকিং সচিব না পেয়ে খোদ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতাশ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নতুন ব্যাংকিং সচিব গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতেও এখন নারাজ। তবে আজ-কালের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট যে মেইল পাঠিয়েছে তাতে তারা উল্লেখ করেছে, বিষয়টি মানি লন্ডারিংয়ের এডমন গ্রুপকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিপাইনের অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা ফিলিপাইন ঘুরে এসেছেন। তারা বর্তমানে বিভিন্ন কম্পিউটার সার্ভার সুরক্ষা, মেইল ও ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সুপারিশ করেছে।