ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং জাতীয় খতীব সম্মেলনে তিনি বলেন, “মাদ্রাসা দিয়ে আমাদের দেশে শিক্ষার প্রসার। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া কোনো শিক্ষা পূর্ণাঙ্গতা পায় না। প্রত্যেকের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রয়োজন। মন-মানসিকতা গড়ে তোলার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার এই অনুষ্ঠানে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের পুরস্কার হিসাবে কোরআন তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী চার লাখ ৪৩ হাজার ৬৭০টি কোরআন বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
উপস্থিত ওলামাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সত্যিকার আমাদের ধর্মে কী বলা আছে সেটা আমাদের দেশের মানুষ শিখবে। তারা জঙ্গি, সন্ত্রাসী পথ পরিহার করবে।
“আর ধর্ম নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না হয়। যার যার ধর্ম সে পালন করবে- এটাই যেন সকলে শেখে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা নিজেদের ধর্ম যেমন পালন করি, আমাদের দেশে অন্যান্য ধর্মের যারা আছে, তাদের আমরা সন্মান করি। তারা তাদের ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালন করুক। তাদের যদি সেই সুযোগ যথাযথভাবে না দেই, আজকে বিভিন্ন দেশে ইসলাম ধর্মাম্বলীরা সংখ্যায় কম, তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে?”
ইসলাম ধর্মের নামে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড বন্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে ওলামাদের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ভব্যিষতে এই ধরনের কাজ যেন কেউ করতে না পারে, সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এটাই যেন সারা দেশের মানুষের মধ্যে ভালোভাবে প্রচার করা হয়। নাশকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান ইসলাম ধর্মে নেই। এটা আপনারা ভালোভাবে প্রচার করবেন।
“যারা এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আলেম ও ওলামারা সজাগ থাকবেন। আমরা আপনাদের কাছ থেকে সেই সহযোগিতা চাই। আমার ধর্ম নিয়ে কেউ কোনো কটাক্ষ করুক- সেটা আমরা চাই না।”
ইসলামের প্রচারে নিজের বাবার অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি, তেমনি তিনি একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। তিনি ছিলেন মনেপ্রাণে একজন ঈমানদার মুসলমান।”
ইসলামের চর্চা ও গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“ইসলামের প্রচার-প্রসারে জাতির পিতার অবদান মুসলিম বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড় ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন।”
জাতীয় পর্যায়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ, বেতার ও টেলিভিশনে দিনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ, ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে কদর ও শবে বরাতে সরকারি ছুটি ঘোষণা, বিশ্ব এজতেমার জায়গা ও কাকরাইল মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য জমি বরাদ্দও দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর সময়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, “কওমী শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) জামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার জন্য জমি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন।
“বাংলাদেশ ওআইসির সদস্য পদ ১৯৭৪ সালে পায়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে তাবলীগ জামায়াত পাঠান এবং একাধিক ধর্মীয় প্রতিনিধিদল সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন।”
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানের কথাও বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্র্রী বলেন, “হজ যাত্রীরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে হজ করতে পারেন সেজন্য বঙ্গবন্ধু হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজ কিনলেও জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তা প্রমোদতরীতে পরিণত করে।”
মুসলমানদের শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জন্য ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর আইডিবি চার্টারে স্বাক্ষর করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। জনগণের জন্য নয়, যুদ্ধাপরাধীদের কল্যাণে এই ব্যাংক টাকা ব্যয় করে।”
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪৩টি জেলা কার্যালয় ও এর সব জনশক্তিকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমাদের সরকার বায়তুল মোকাররম মসজিদে ১৭০ ফুট সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করেছে এবং মসজিদটিতে ৫ হাজার ছয়শ জন মহিলার নামাজ আদায়ের জন্য মহিলা নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সেইসাথে মসজিদের সাহানে ২০ হাজার মুসল্লির নামাজের স্থান সম্প্রসারণসহ মসজিদের আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঁচশ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
“আমরা চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জমিয়াতুল ফালাহ্ জামে মসজিদটি সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছি।”
মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এক হাজারের বেশি মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, ৮০টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের মূলধন এখন ৪১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ ট্রাস্ট থেকে নয় হাজার একশ তিনজন ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে সুদমুক্ত ঋণ এবং সাহায্য হিসাবে প্রায় ৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে সর্বোচ্চ এক হাজার পাঁচশ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ৭৮ লাখ ৪৪ হাজার চারশ জন কোরআন ও নৈতিকতা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে এবং এ প্রকল্পে ৭৬ হাজার ৫৯৫ জন আলেম-ওলামার কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
যে সব এলাকায় স্কুল নেই এমন এক হাজার দশটি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করে হযরত মুহম্মদ (স.) প্রতিষ্ঠিত ‘দারুল আরকাম’ নামানুসারে ‘মাদ্রাসা দারুল আরকাম’ নামে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
ধর্মমন্ত্রী মো. মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল ও জাতীয় খতীব কাউন্সিলের আহবায়ক মুহাম্মদ জালালুদ্দীন আল-কাদেরী বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল।