টুকে রাখার এই যে অভ্যাস তা ঠিক বই লেখার উদ্দেশে ছিল না । ঘটনার মূল্য প্রতিনিয়ত নিরূপণ করতে, পরিস্থিতি বিচার করতে, মানুষকে বুঝতে এই লেখা তাকে সাহায্য করেছে । তার গভীরভাবে নিরীক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করবার মনোভাব এতে প্রকাশ পেয়েছে । এই বিশ্লেষণ অনেক সময় চমৎকার কৌতুকরসে জারিত । নোটগুলি খুবই শান্তচিত্তে লেখা এবং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিরবিছিন্ন ভাবে সুসঙ্গতিপূর্ণ । মনে রাখতে হবে যে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও অমানুষিক শারীরিক পরিশ্রমের মাঝখানে বিশ্রামের স্বল্প মুহূর্তগুলিতে এগুলি লেখা হয়েছে – লেখা হয়েছে এই ধরনের সংগ্রামের প্রাথমিক স্তরের জতিল অবস্থায় গেরিলা বাহিনীর প্রধান হিসাবে তার ক্লান্তিকর দায়িত্বের মাঝে । অবিশ্বাস্যরূপে কঠিন অবস্থার মাঝে তার কাজের বিশেষ ধারা এবং ইস্পাতদ্রঢ় ইচ্ছাশক্তি এতে আর একবার প্রকাশ পেয়েছে ।
প্রতিদিনের ঘটনাবলির বিশ্লেষণ,দোষ-গুণ, সমালোচনা এবং পারস্পারিক অভিযোগ এমনভাবে লেখা হয়েছে বিপ্লবী গেরিলার বিকাশের পক্ষে যা স্বাভাবিক এবং অপরিহার্য;ডায়েরী লেখায় তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে ।
গেরিলা বাহিনীতে এরুপ সমালোচনা সব সময় হওয়া দরকার । বিশেষ করে যখন বাহিনীর অঙ্কুরকাল-যখন সবসময় চরম প্রতিকুল অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, মুখোমুখি হতে হচ্ছে সংখ্যার দিক থেকে বহুগুণে শক্তিশালী শত্রুর, যে সময় সামান্য অসাবধানতা বা সামান্য একটু ভুলের জন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে, এবং এসব গেরিলা বাহিনীর প্রধানদের হতে হয় অত্যন্ত কড়া । এ সময় প্রতিটি ঘটনা – তা যতই ছোট বা তুচ্ছ হোক গেরিলা-যোদ্ধাদের পক্ষে এবং নতুন নতুন গেরিলা বাহিনীর প্রধানের পক্ষে শিক্ষণীয় ।
( চে গুয়েভারার ডায়েরী থেকে… চলবে )