বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ ১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪টি আসন জিতেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, ১৮-তে হয়েছে মিডনাইট নির্বাচন। আর ২৪-এ হয়েছে ডামি নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ডামি সরকার ছিল বলেই সামান্য একটু ফুঁতে উড়ে গেছে।

ঠাকুরগাঁও জিলা স্কুল বড় মাঠে সোমবার বিকালে দলের কর্মী সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবার হুঙ্কার দিচ্ছে তারা ফিরে আসবে। আবার দেশ দখল করবে। আবার আগের মতো তাণ্ডব চালাবে। কিন্তু স্বৈরশাসকরা একবার পালিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। বিশ্বের ইতিহাসে বিগত সময়ে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসকরা আর ফিরে আসেনি। আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে গেছে। এর আগে বেলা ১১টায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে পথসভায় বক্তৃতা করেন জামায়াত আমির। সেখানে তিনি বলেন, যারা বিভিন্ন সময়ে দেশ শাসন করেছেন, তারা জনগনের আমানত রক্ষা করেন নাই। নিজেদের পকেটে পুরেছেন। দেশের সম্পদ তছরুপ করেছেন। সেই সম্পদ তারা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। আগে টাকা পাচার করেছেন, পরে পালিয়ে সেখানে হাজির হয়েছেন। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত তারা মানুষ খুন করেছেন।

শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের খানসামা বীরগঞ্জ কাহারোল উপজেলা জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঠাকুরগাঁওয়ের সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে জামায়াত আমির আরও বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে হওয়া খুন, গুম, লুটপাটের বিচার করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে হবে। আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু ধুয়া তুলে ফায়দা লুটে সংখ্যালঘুদের সর্বনাশ করে ইসলামপন্থিদের ওপর দায় চাপিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭২ থেকে জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত সব অপরাধের তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতকে সীমা লঙ্ঘন না করারও আহ্বান জানান শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ভারত যেন বাংলাদেশের অশান্তির কারণ না হয়। শফিকুর রহমান বলেন, সমতার ভিত্তিতে সব জেলার উন্নয়ন করতে হবে। ঠাকুরগাঁওয়ে মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এটি বৈষম্য করা হয়েছে। আগামী একনেকে ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য যেকোনো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন, জেলা জামায়তের আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান, সাবেক আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম প্রমুখ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। বীরগঞ্জের পথসভায় ১৭ বছর বয়সিদের ভোটার করা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে স্বাগত জানান ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের আমরা পতন ঘটাতে পারি নাই। আমাদের ছেলেমেয়েদের নেতৃত্বে তা সম্ভব হয়েছে। অগ্রভাগে তারাই ছিলো, এটা আমাদের গর্বের। প্রধান উপদেষ্টা ১৭ বছর বয়সিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। কেউ কেউ এটা মানতে চান না। আমরা বলি, রাস্তায় নেমে যারা স্বাধীনতা এনেছে তারা বুক পেতে দিয়ে দিয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই ভোটার করতে হবে।

শফিকুর রহমান আরও বলেন, যে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে-তাদের আমরা সম্মানিত করতে চাই। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে বৈষম্য থাকবে না। এমন একটি রাষ্ট্র চাই, যার দায়িত্ব হবে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। যেসব মানুষের সামর্থ্য থাকবে না, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র। সব পথশিশুর দায়িত্ব নেবে সরকার। এমন একটি রাষ্ট্র চাই-যেখানে অফিস, আদালত কোথাও ঘুস-বাণিজ্য থাকবে না। যেখানে কোনো চাঁদাবাজ ও দখলদারিত্ব থাকবে না। মা বোনেরা ইজ্জতের সঙ্গে বসবাস করবে। আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যেটা হবে নৈতিকতার ভিত্তিতে। শিক্ষাগ্রহণ করে আমাদের সন্তানেরা ডাকাত হবে না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে, দরদ আছে তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালায় না। বিগত দিনে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ১১ নেতাকে আওয়ামী লীগ খুন করেছে, বিচারিক আদালতের নামে তাদেরকে হত্যা করেছে। ১১ জনের একজনও বাংলাদেশ থেকে পালায়নি, পালানোর চেষ্টা করেননি। মীর কাসিম বাইরে ছিলেন, তিনিও ফেরত এসেছেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে বাংলাদেশের সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু, স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে দুটি শক্তিতে ভাগ করতে চায়। দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কোনো উদাহরণ নেই, কোনো জাতি বিভক্ত হয়ে মর্যাদা লাভ করেছে। বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে। আমরা এই বিভক্তির কবর রচনা করতে চাই। গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যমকে বলা হয়, জাতির বিবেক ও জাতির আয়না। আমাদের অনুরোধ সাদাকে সাদা বলতে হবে, কালোকে কালো বলতে হবে। যদি আমিও কালো হই তাহলে কালোই বলবেন, আমাকে ছাড় দেবেন না।

বীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ক্বারী আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ড. এনামুল হক। আরও বক্তৃতা করেন, কাহারোল উপজেলা জামায়াতের আমির তরিকুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও জেলার সাবেক আমির আব্দুল হাকিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মমতাজউদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বেলাল, রফিকুল ইসলাম খান, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমির আনিসুর রহমান প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে