জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে রফতানি আয় কমে অর্ধেকে নেমে এসছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থলবন্দর দিয়ে রফতানি হয়েছিল ৬৮০ কোটি টাকার পণ্য। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে মাত্র ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য-যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩০৪ কোটি টাকা কম। এ ছাড়া তলানিতে ঠেকেছে বন্দরের আমদানি বাণিজ্য। ফলে আশানুরূপ রাজস্ব পাচ্ছে না বন্দর এবং শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, এক সময় এই স্থলবন্দর দিয়ে অর্ধশতাধিক পণ্য ভারতে রফতানি হতো। কিন্তু বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি পণ্য রফতানি হচ্ছে। মূলত এখন হিমায়িত মাছের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে বন্দরের রফতানি বাণিজ্য। তবে মাছ রফতানি কমার কারণেই বন্দরের রফতানি বাণিজ্য কমেছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

বন্দরের তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য চললেও ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত এ বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্য রফতানি হয়। বছর পাঁচেক আগেও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রফতানি হওয়া পণ্যের তালিকায় ছিলো- হিমায়িত মাছ, পাথর, রড, সিমেন্ট, তুলা, ভোজ্যতেল, এলপি গ্যাস, প্লাস্টিক, শুঁটকি ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছোট হয়ে এসেছে সেই তালিকা। বর্তমানে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট ও প্লাস্টিকসহ হাতেগোনা কয়েকটি পণ্য যাচ্ছে ভারতে।

রফতানিকৃত পণ্যের অর্ধেকই হিমায়িত মাছ। আর মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, পুঁটি, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া ও পাবদাসহ সব ধরনের চাষের মাছ। প্রতি কেজি মাছের রফতানিমূল্য আড়াই মার্কিন ডলার। ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি হয় ভারতে। তবে, গত কয়েক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রফতানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মাছ রফতানি হলেও এখন তা কমে অর্ধেকে নেমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বন্দরের রফতানি আয় কমেছে। মূলত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তাজা মাছ পাচারের কারণে রফতানি ক্রমেই কমছে বলে অভিযোগ মাছ রফতানিকারকদের।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: ফারুক মিয়া বলেন, ‘আখাউড়া উপজেলার সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত তাজা মাছ পাচার হচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হিমায়িত মাছের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিষয়টি বিজিবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এটি বন্ধ না করতে পারলে যেকোনো মুহূর্তে হিমায়িত মাছের রফতানি বন্ধ হয়ে পড়বে।এদিকে, ভারত থেকে পণ্য আমদানিও এখন অনিয়মিত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে গম, ভুট্টা পাথর ও পেঁয়াজ। নিজেদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির সুযোগ না পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। এতে করে বন্দরের রাজস্ব আদায়ও তলানিতে ঠেকেছে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে রফতানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকার পণ্য। আর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬১ হাজার ৫২৮ টাকার পণ্য। আমদানি পণ্য থেকে শুল্ক কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৮ টাকা। তবে বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে রফতানি হয়েছিল ৬৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকার পণ্য।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেল যোগযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক পণ্য এখন নিজ দেশ থেকেই সংগ্রহ করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। ফলে রফতানি বাণিজ্য ফের বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে আমদানি বাণিজ্যের মাধ্যমে এখনো বন্দরটির ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। সেজন্য যখন যে পণ্যের চাহিদা, সেটি আমদানির সুযোগ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক। বিডি টাইমস নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে