বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কোনো ফরম পূরণের সময় অভিভাবকের জায়গায় বাবার নাম লেখার বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। এখন থেকে অভিভাবক হিসেবে মা কিংবা অন্য আইনগত অভিভাবকের নামও লেখা যাবে। গতকাল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ-সম্পর্কিত একটি রায় দেন। রায়ে শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীর তথ্যসংবলিত ফরমে বাবা বা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখার স্থান যুক্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। ফলে এখন থেকে যেকোনো একজন অভিভাবকের নাম উল্লেখ করেই ফরম পূরণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। ১৪’বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল এ রায় দেয়া হয়। এর আগে ২০০৯ সালে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন যুক্ত করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ রিটটি করেছিল।
রিটের পক্ষে আদালতে ছিলেন অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা ও অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। রিটের পক্ষে আইনজীবীরা জানান, বাবার স্বীকৃতি না থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ে ২০০৭ সালে এক মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার্থী ফরমে পিতার নাম লিখতে পারেনি। ফলে সে বছর তার রেজিস্ট্রেশন কার্ড আসেনি এবং তার পক্ষে পরীক্ষায় অংশ নেয়া সম্ভব হয়নি।
গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হলে ২০০৯ সালের ২’রা আগস্ট অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি চেয়ে আদালতে রিট করে তিন মানবাধিকার সংগঠন। ওই বছরের ৩’রা আগস্ট বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর বেঞ্চ রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থী ও বিশেষভাবে শিক্ষার অধিকারে প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এ বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থী এবং অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা হবে না এ মর্মে রুল জারি করেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল এ যুগান্তকারী রায় দেন আদালত। রায়ের পর অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা বলেন, ‘পিতৃপরিচয়হীন সন্তান, যৌনকর্মীদের সন্তান যাদের বাবার পরিচয় নেই, তারা শুধু মায়ের নাম দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবে বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। সংবিধানের সমতার কারণে বাবা অথবা মায়ের পরিচয় থাকলেই যেকোনো ফরম পূরণ বা রেজিস্ট্রেশন করার অধিকার পাওয়া যাবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে পিতা-মাতার পরিচয়হীন যেকোনো শিশুর শিক্ষা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হলো।
অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার বলেন, ‘এখন থেকে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ, পাসপোর্টের ফরম পূরণসহ সব ফরম পূরণে বাবা বা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখা যাবে। এ রায়ের ফলে মা-বাবার উভয়ের নাম লেখার বাধ্যবাধকতা থাকল না। শুধু মায়ের নাম লিখেও এখন থেকে ফরম পূরণ করা যাবে।