নিরাপদ ও বাসযোগ্য শহরের তলানিতে থাকা ঢাকাকে সাজাতে নেয়া হয়েছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা। তবে এতে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা হলেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা উঠে এসেছে। একইসঙ্গে ড্যাপ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতিগ্রস্ততা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নগরবিদরা।
প্রস্তাবিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় রাজধানীর মিরপুরের কয়েকজন বাসিন্দার সাথে। তাদের মধ্যে একজন শাওন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্বপ্ন দেখেন, এই শহরে নিজের একটি ফ্ল্যাট হবে। এজন্য কয়েকজন বন্ধু মিলে ৮ কাঠা জমিও কিনেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই একটি করে ফ্ল্যাট পাবেন। কিন্তু নতুন ড্যাপে তাদের সে আশায় গুড়েবালি। আগে যেখানে ৮ তলা ভবন পেতেন এখন সেখানে পাবেন সর্বোচ্চ ৫ তলা।
নাগরিকরা জানান, চাকরি করে অল্প পয়সা বেতন পান, এরা আশা-ভরসা করছেন একটা ফ্ল্যাট করবেন। শেয়ারিংভাবে ৫-১০ জন মিলে। কিন্তু এই যদি আইন হয় তাহলে সেটা কিভাবে করবেন। আরেকজন জানান, অল্প টাকা জমিয়ে অনেকে যৌথভাবে বিল্ডিং নির্মাণ করছেন। এই জিনিসটা যদি না হয় তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তারা ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট পাবে না।
ড্যাপে এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় বেশ অসাম্যের অভিযোগ তাদের। তাদের দাবি, গুলশান-বনানী বা ধানমণ্ডিতে যে ধরনের নিয়ম আছে একই নিয়ম যাতে আমাদের এখানেও থাকে। ড্যাপ বাস্তবায়ন শুরুর আগে শংকা জানিয়েছে ডেভেলপার কোম্পানীর সংগঠন রিহাবও। ব্যবসা বন্ধের উপক্রমের কথা বলেন। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা পুর্নমূল্যায়নের দাবি তাদের। রিহ্যাব সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, বৈষাম্যমূলক ড্যাপ প্রণয়ন হয়েছে, এটি যেন অতিসত্তর আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সমন্বয় করা হয়। অন্যদিকে, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার কৌশল প্রশংসনীয় হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
ড্যাপ প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পুরান ঢাকাকে কিভাবে যানজট নিরসন করা যায়, ওখানে যে হ্যারিটেজগুলো আছে যেগুলো আমাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে তা যাতে আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেজন্য আমরা ঢাকা আরবান রি-জেনারেশন নামে একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বিশেষ করে পুরান ঢাকাকে নতুন করে সাজাতে রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। ড্যাপকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভিত্তিক বললেও নগর পরিকল্পনাবিদরা আশাবাদী, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সমন্বয়ে এটি বাস্তবায়নযোগ্য হয়ে উঠবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ধারণাকে বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের যে প্ল্যানিং সেলগুলো বা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ইউনিট, বাস্তবায়ন ইউনিট- তাদের সক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি রাজউকের সঙ্গে অন্য নগর সংস্থাগুলো কাজ করে তাদের যদি সমন্বয়টা বাড়ানো যায় তাহলে কিন্তু এই পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজউকের কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব নগরবিদদের।