ছয় লেনে উন্নীত হচ্ছে প্রায় ৭৫’কিলোমিটার দীর্ঘ খুলনা-যশোর মহাসড়ক। এজন্য তৈরি করা হয়েছে জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবনা। এখন বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা-যশোর মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসন, সড়ক দুর্ঘটনা কমানো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা নগরীর ডাকবাংলো মোড় থেকে আফিলগেট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়কও ৬ লেনে উন্নীত করার জন্য আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, খুলনার কুদির বটতলা থেকে যশোরের মুড়োলি মোড় পর্যন্ত খুলনা-যশোর মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৭৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে যশোর-খুলনা-মোংলা (এন-৭) জাতীয় মহাসড়কের খুলনা অংশ যশোরের রাজঘাট থেকে আফিলগেট, খুলনা শহর বাইপাস (এন-৭০৯) হয়ে কুদির বটতলা পর্যন্ত খুলনা অংশের দৈর্ঘ্য ৪৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার। আর যশোরের রাজঘাট থেকে মুড়োলি মোড় পর্যন্ত যশোর অংশের দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এ দুটি অংশে কাজ করবে যথাক্রমে খুলনা ও যশোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী জানান, যশোর-খুলনা-মোংলা জাতীয় মহাসড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটিতে সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৭৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। যশোরের মুড়োলি মোড় থেকে শুরু হয়ে নওয়াপাড়া বাইপাস হয়ে এবং পরবর্তীতে খুলনা শহরকে বাইপাস করে কুদির বটতলাকে সংযুক্ত করবে। পদ্মা সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যানবাহন ও জনসাধারণের সহজ, নিরাপদ, আধুনিক ও সময় সাশ্রয়ই যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার জন্য ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। খুলনা অংশে ১০৯ দশমিক ৩২ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, এডিবির অর্থায়নে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং প্রিলিমিনারি ডিজাইন তৈরির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটিতে বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (পিডিপিপি) প্রণয়ন করে সরকারের ইআরডি বিভাগে দাখিল করা হয়েছে। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক প্রাথমিকভাবে আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রকল্পের যশোর অংশে ৩২৮ দশমিক ২১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। অধিগ্রহণের জন্য কত টাকা ব্যয় হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণের জন্য যশোরের জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ২ হাজার ৮৩২টি স্থাপনা অপসারণ করা লাগবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর খুলনা সার্কিট হাউজে সংশ্লিষ্ট সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। বৈঠকে অংশ নেয়া খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ, বৈধ ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে সহযোগিতা করার জন্য খুলনা ও যশোরের জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যশোরের সঙ্গে খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে।
এ’দিকে খুলনা নগরীর ডাকবাংলো মোড় থেকে আফিলগেট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার জন্য আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। যানজট নিরসন, সড়কের বহন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ফুলবাড়িগেট, দৌলতপুর ট্রাফিক মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড়, নিউমার্কেট মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। শিববাড়ি মোড়, নতুন রাস্তা মোড় এবং আফিল গেট এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধন ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, সড়কটিকে ৬ লেনে উন্নীত করতে গেলে সড়কের উভয় পাশের ১ হাজার ৭০৭টি পাকা ভবন, ১ হাজার ১৯৭টি আধা পাকা ভবন, ২ হাজার ৬৭টি টিনের চালা, ১ হাজার ৫৯০টি গাছপালা অপসারণ এবং লাইনসহ ৪ হাজার ৩৫৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে হবে। এই কাজটি চ্যালেঞ্জিং হলেও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন করা হবে।