উপমহাদেশের আজাদী আন্দোলন, পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল প্রতিষ্ঠা, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী শাসকদের পতন নিশ্চিত করা, ৫৭র কাগমারী সম্মেলনে মাধ্যমে বাঙ্গালীকে স্বাধীনতা স্বপ্নে উজ্জীবিত করা, ৬৯’র গণআন্দোলন, ৭০-এ স্বাধীনতার ঘোষণা, ৭১এর মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রবাসী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও আফ্রো-এশিয়া-লাতিন আমেরিকার নির্যাতিত নিপিড়িত মানুষের মহান নেতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৪২তম জন্মবার্ষিকী আজ (সোমবার) ১২ ডিসেম্বর। মাওলানা ভাসানী রাজনীতির আলোকবর্তিকা হাতে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে এর আলো ছড়িয়ে দেন। গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। ইতিহাসে এই মহানায়ক ১৯৭৩ সালের সর্বশেষ পাসপোর্ট অনুযায়ী ১২ ডিসেম্বর, ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন সিরাজগঞ্জের সয়া-ধানগড়া গ্রামে। পিতার নাম হাজী শরাফত আলী খাঁ ও মাতার নাম মজিরন বিবি।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মওলানা ভাসানী রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি এ দেশের মানুষের জন্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিস্তার ও প্রসারে অনেক অবদান রাখেন। তিনি সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মহীপুরে হাজি মুহম্মদ মুহসীন কলেজ, ঢাকায় আবুজর গিফারি কলেজ ও টাঙ্গাইলে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রগাঢ় স্বদেশপ্রেম, প্রগতিশীল আদর্শ ও প্রতিবাদী চেতনার আলোকবর্তিকা, আজীবন শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন মওলানা ভাসানী। ১৯৩১ সালে সন্তোষের কাগমারী, ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলা এবং ১৯৩৩ সালে গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন তিনি। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ১৯৭৬ সালে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চ করেও স্মরণীয় হয়ে আছেন। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

বাংলাদেশ ন্যাপ বলছে, ভাসানীর দেশপ্রেমের রাজনীতি ধারণ করতে হবে
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জন্মবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের আহ্বান জানিয়ে জন্ম বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। গতকাল রোববার মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ১৪২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বাণীতে নেতৃদ্বয় এ আহ্বান জানান। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কোনো একক ব্যক্তির অবদান নয়। বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন, সন্দেহাতীতভাবেই মওলানা ভাসানী তাদের মাঝে অন্যতম। ভোটের রাজনীতি বা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি নয়, ভাত-কাপড়ের রাজনীতি দিয়েই তিনি মানুষকে সংগঠিত করেছেন। জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করেই তিনি আপসহীনভাবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।

আজকেও মুক্তি পেতে হলে জনগণের সংগ্রামের ওপর ভিত্তি করেই মওলানা ভাসানীর রাজনীতিকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হব। ভাসানীর দেশপ্রেমের রাজনীতিকেই আজ ধারন করতে হবে। নেতৃদ্বয় বলেন, খুব বিখ্যাত ছিল মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ‘খামোশ’ বলা। সমগ্র জাতিকে ধমক দিতে পারতেন, শাসন করতে পারতেন একজন মানুষ। সমগ্র জাতির যিনি নেতা তখন ছিলেন, তাকেও শাসন করতে পারতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীনতার ৫১ বছর পরে এখন তার কথা আলোচনা করা হচ্ছে না। তারা বলেন, ভাসানী ছিলেন একাধারে কৃষক নেতা, অন্যভাবে তাকে গণমানুষের নেতা হিসাবেও আখ্যায়িত করা যায়। জাতির দুর্ভাগ্য তাকে ভালোভাবে স্মরণ না করে অকৃতজ্ঞার পরিচয় দিচ্ছে। একশ্রেণীর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে রাজনীতিবিদরা তাকে নিয়ে এমন তুচ্ছভাব দেখাচ্ছেন। নেতৃদ্বয় আরো বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের এই অবিসংবাদিত নেতার জন্ম ও মৃত্যুদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনে শাসকগোষ্টি হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে।

মওলানা ভাসানীর দেশপ্রেম এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আদর্শের পথ ধরে স্বাধীনতার ঘোষণা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম বেগবান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে