নিজস্ব প্রতিবেদক| সকালে পার্লামেন্ট মের্ম্বাস ক্লাব অডিটরিয়ামে (২নং এল-ডি হল) নারী সংসদ সদস্যদের সাথে ‘‘বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারী সংসদ সদস্যদের ভূমিকা বিষয়ক’’ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এম. পি। বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এম.পি।
সম্মানিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাকিয়া পারভীন খানম এমপি; নেত্রকোণা; সৈয়দা রুবিনা আক্তার এম পি; ২৮, অ্যাড. জাকিয়া তাবাসসুম এমপি ৩৩২, মহিলা আসন-৩২ দিনাজপুর; লুৎফুনন্নেছা খান, এমপি; শামসুন্নাহার,এম পি; রওশন জাহান সাথী এমপি প্রমুখ। সভার শুরুতে প্রয়াত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রয়াণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্¥ সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে বর্তমান সরকারের নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে শান্তিমিশন, সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী, বিচারবিভাগ, কুটনৈতিক মিশন, প্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অধিক সংখ্যক কার্যকর উপস্থিতি দৃশ্যমান হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে হলেও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এসকল চ্যালেঞ্জ সমূহের মধ্যে রয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নির্বাচনকালীন সহিংসতা, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নারী বিদ্বেষী প্রচার প্রচারণা। চ্যালেঞ্জসমূহকে মোকাবেলা করে জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীদেও সম্পৃক্ত করে উন্নয়নকে স্থায়ী করার লক্ষ্যে কয়েকটি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় (সংযুক্ত-১- লিখিত বক্তব্য)।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এম. পি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ এর সময়কাল বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের দাবি বাস্তবায়নের স্বর্ণযুগ ছিলো। সারা বাংলাদেশের নারীদের দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। অনেক অর্জনও আছে। ১৯৭২ এর সংবিধান অনুসারে সকল শ্রেণীর নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির দূরদর্শিতাসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় জাতির পিতার নেতৃত্বে।
তাদের সরাসরি নির্বাচনে কোন বাধা নেই। এজন্য নারীদের নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। এর পেছনে থাকা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে। যতক্ষণ রাজনীতিতে নারীর ৩৩% প্রতিনিধিত্ব ও ৫০:৫০ অংশগ্রহণ না হচ্ছে ততক্ষণ সংরক্ষিত আসন রাখার কথা উল্লেখ করেন তিনি। কেবল বাংলাদেশেই নয় বিশ^ব্যাপী নারীরা রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে পিছিয়ে আছে। জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার কাজ করছে।
নারীদের জীবনে থাকা প্রতিবন্ধকতা দূর করে আগামী প্রজন্মের জন্য সমতাপূর্ণ দেশ গঠনে গণতন্ত্র অপরিহার্য। আমরা এমন গণতন্ত্র চাই যা নারীর অগ্রগতির জন্য সহায়ক হবে। তিনি এসময় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উপর জোর দেন।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এম.পি বলেন, বর্তমানে নারীরা আগের চেয়ে অনেক এগিয়ে অনেক স্বাধীন। কাজের জন্য নারীদের দক্ষ হতে হবে, মাননীয় স্পীকারের কর্মদক্ষতার উল্লেখ করে তিনি বলেন দক্ষ যোগ্য নারীকে সঠিক জায়গায় নির্বাচন করে তাদের কাজের সুযোগ দিলে নিজ যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবেন। সংসদে নারীর অংশগ্রহণ অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে। এলক্ষ্যে সরকার প্রধান কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
সংসদে নারীদের তিনি ক্ষমতায়িত করেছেন। বর্তমানে ৫টি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে নারীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন প্রতিটি ধর্ম অনুসারে প্রচলিত পারিবারিক আইন অনুযায়ীও নারীকে তার প্রাপ্য দেয়া হচ্ছে না, এটি আগে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ, এর সাথে নারী আন্দোলনের একটা সম্পর্ক আছে। নারী জনপ্রতিনিধিদের কাছে নারী সমাজের প্রত্যাশা রয়েছে। পুরুষ নির্মিত সমাজে নারীদের প্রত্যেককে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করার মনোভাব থাকতে হবে। সকল নারীর প্রতি সহিংসতাকে বন্ধ করতে নারী জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন নারীর সমস্যা সমাধানের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি প্রশ্ন রাখেন নারীদের অধিকারের বেলায় কেন ধর্মীয় আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়? সংবিধানের ভিত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত সকল আইনের বাস্তবায়ন, নারীর উত্তরাধিকার আইন, অভিন্ন পারিবারিক আইন বাস্তবায়নে সরকারসহ সকল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আলোচনার আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত সম্মানিত সংসদ সদস্যবৃন্দরা বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান নারীর মেধা প্রজ্ঞা কাজে লাগানোর জন্য পথ করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কাউকে পিছনে ফেলে নয় সকলকে সাথে নিয়ে এগোতে হবে। নারীরা পেছনে পড়ে থাকলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবেনা। কাজেই নারীদের উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে নারী সাংসদ সদস্যরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।
সমঅধিকার চাওয়া নয়, অর্জন করতে হবে; রাজনীতিতে নারীদের ৩৩% প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী আন্দোলনকারী সংগঠন, সরকার প্রতিনিধি ও সিভিল সোসাইটিকে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে; তৃণমূলের নারীদের এগিয়ে নিয়ে আসতে সাংসদদের জোরালোভাবে কাজ করতে হবে; স্থানীয় সরকারের নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে; বরাদ্দে বৈষম্য দূর করতে হবে; সাসংদদের নির্বাচিত হওয়ার পর কাজের শুরুতে ওরিয়েন্টেশন দিতে হবে; নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে; নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারী নির্যাতনকারীদের প্রকৃত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে; উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীদের সচেতন করতে হবে।