বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্মরণীয় দিন হিসেবে আজ সোমবার যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ঐতিহাসিক ৭’ই মার্চ পালিত হবে। ১৯৭১’সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসমুদ্রের সামনে যে যুগান্তকারী ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। সে দিনটি থেকে নতুন করে অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্য প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়।

লক্ষাধিক স্বাধীনতাকামী জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু তার ১৯’মিনিটের অসামান্য ভাষণে শোষক পাকিস্তানি শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা। তার এই ভাষণকে প্রায়ই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক গেটিসবার্গের ভাষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, যেহেতু আমরা রক্ত দিতে শিখেছি, আমরা আরও রক্ত দেব। ইনশাআল্লাহ, এদেশের মানুষকে মুক্ত করতেই হবে… প্রতিটি ঘরকে দুর্গে পরিণত করব। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে (শত্রু) মোকাবিলা করো। সেদিন বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই ভাষণ জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করেছিল, যা সমগ্র জাতিকে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার স্বৈরাচারী ও দমনমূলক শাসন থেকে স্বাধীনতার সংগ্রামে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল। সোমবার(৭’ই মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে “ঐতিহাসিক ৭ মার্চ” অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও স্টেশন ও জাতীয় দৈনিকগুলোতে দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ৭’ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতির স্বাধীনতার যাত্রাকে বাস্তবায়িত করার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে পৃথক বাণী দিয়েছেন। এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭’ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু আমাদের জন্য নয়, সারা বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করা। আমাদের মহান নেতার সেই স্বপ্ন পূরণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত “রূপকল্প-২০৪১” বাস্তবায়নে অবদান রাখার জন্য রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি, আজ বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান ও গর্বের। শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর আমরা ৭ই মার্চের এই মহান ভাষণের সুবর্ণজয়ন্তী ও স্বাধীনতা উদযাপন করেছি। এ বছর আমরা ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর ও মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।” তিনি জাতির পিতার মহান আদর্শ অনুসরণ করে তার স্বপ্নের “সোনার বাংলাদেশ” গড়ার অঙ্গীকার করারও আহ্বান জানান। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭’ই মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২০ সালের ৭’ই অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ ৭’ই মার্চকে “জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস”র পরিবর্তে “ঐতিহাসিক দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে, তাই দিবসটি এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে