ব্রাহ্মাবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫ শিক্ষার্থী বাংলাদেশে এই প্রথম মেডিকেল রোবট তৈরি করলো রোবটের সেন্সরে আঙ্গুল রাখলেই দেখা যাবে হৃদস্পন্দন (হার্টবিট) ও অক্সিজেনের পরিমাণ। হাতে থাকা থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরিমাপ করা যাবে শরীরের তাপমাত্রা। রক্তচাপ উচ্চ নাকি নিম্ন সেটিও জানাবে রোবট। এছাড়া রোবটটিতে যুক্ত করা সেন্সরের মাধ্যমে জানা যাবে কোলেস্টরল, ইউরিক এসিড, ব্লাড সুগার ও ব্লাড গ্রুপ।

অবিশ্বাস্য মনে হলেও মাত্র ১৫ দিনে এমনই এক রোবট তৈরি করেছে বলে দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাঁচ শিক্ষার্থী। এটি তৈরিতে তাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো. আবুল কাশেম। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের বিভাগের নামেই রোবটটির নাম দিয়েছেন ‘মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল’।

রোবট তৈরির সঙ্গে নিয়োজিত শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান জানান, আমরাই বাংলাদেশে প্রথম মেডিকেল রোবট তৈরি করেছি। সাধারণত একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যে ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় তার সবগুলোই এই রোবট দিয়ে করা সম্ভব। হাসপাতালে ডাক্তার না থাকলেও এই রোবট যেন বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে সেজন্য এটিকে আরও আধুনিক ও উন্নত করার চেষ্টা করছি। যদি এটি মেডিকেলে কাজে আসে তাহলেই পরিশ্রম স্বার্থক হবে।

এই শিক্ষার্থী আরো জানান, মানুষের শরীরের রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, হার্টবিট, কোলেস্টরল, ইউরিক এসিড ও ব্লাড সুগার পরিমাপসহ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে এটি সক্ষম। এজন্য রোবটটিতে যুক্ত করা হয়েছে বি.পি মনিটর, ই.সি.জি সেন্সর পালস্ অক্সিমেটরি সেন্সর, জি.সি.ইউ সেন্সর, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও থার্মাল স্ক্যানার। আর চলাফেলা করার জন্য ক্যামেরা ও আল্ট্রাসনিক সেন্সর লাগানো হয়েছে।

ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে রোবটটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এর সিংহভাগই যোগান দিয়েছেন বিভাগের সকল শিক্ষার্থীরা। আর কিছু টাকা দিয়ে সহযোগীতা করেছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। গত ৭ জানুয়ারি রোবট বানানোর কাজ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। টানা ১৫ দিন কাজ শেষে পরিপূর্ণ রোবট বানাতে সক্ষম হয় তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদকাসক্ত কাউকে সনাক্ত করতে এবং অগ্নিকান্ডের খবর দিতে রোবটটিতে নতুন ফিচার হিসেবে অ্যালকোহল ডিটেক্টর ও ফায়ার অ্যালার্ম যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। রোবটটি যে কোনো জায়গা থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরির কাজও করছে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী।

ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান, সারা দেশের ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে শুধুমাত্র নয়টিতে ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগ চালু রয়েছে। মূলত এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকে। ২০০৫ সাল থেকে এই বিভাগটি চালু হলেও পাশ করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়নি। ফলে বেসরকারিভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

তার মতে, বর্তমান করোনা ভাইরাস ইস্যুতেও এই রোবট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে কেউ না গেলেও রোবটটি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে গিয়ে তার শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, হার্টবিট ও অক্সিজেনের পরিমাপ করতে পারবে। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কাজও করতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম বলেন, মেডিকেল রোবট এর ধারণা আমাদের দেশে একেবারেই নতুন। শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয়। যদি এই রোবট চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাজে আসে তাহলে আমরা এটিকে সানন্দে গ্রহণ করবো।

জহির সিকদার
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে