দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্ডারওয়ার্ল্ড আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই আন্ডারওয়ার্ল্ড সক্রিয় হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বছরের শেষ বা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে হতে পারে নির্বাচন। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ইতোমধ্যে নিজেদের জাহির করতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অলিগলিতে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণকারীদের একত্রিত করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে অরাজকতা তৈরি করার নীলনকশা কষছে। কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছে। এদের অনেকে রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে। এসব তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থীদের টার্গেট হচ্ছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে কারাগারে বসেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে অশান্ত করার চেষ্টায় আন্ডারওয়ার্ল্ড।দীর্ঘদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে নতুন গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করছে কেউ কেউ। নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে এই আন্ডারওয়ার্ল্ড এর সক্রিয় তৎপরতা সবসময় বাড়ে। এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক গোপন সূত্র বলছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফায়দা লুটতে পেশাদার অপরাধী বা অবৈধ অস্ত্রের চক্রগুলো নড়াচড়া শুরু করেছে। ভারত সীমান্তের অরক্ষিত কিছু এলাকাসহ যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা বিভিন্ন কৌশলে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করানো হচ্ছে।

জানা গেছে, র‍্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চরমপন্থী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা নিহত হলেও তাদের অস্ত্রভান্ডার রয়ে গেছে সুরক্ষিত। ফলে মাঠ পর্যায়ে ক্যাডাররা ওই অস্ত্র ব্যবহার করে ইউপি নির্বাচনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে। এ কারণে নির্বাচনের সময় বা এর আগে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রার্থী কিংবা তাদের কর্মীরা গণহারে খুন হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ’অঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে মেহেরপুরের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। যে কোনো মুহূর্তে মেহেরপুরে অঘটন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে জেলার গাংনী থানার একাধিক প্রার্থীকে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি লাল পতাকার নাম ব্যবহার করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের বাড়ির সামনে বোমা রেখে যাচ্ছে চরমপন্থীরা। এরপর চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। চাঁদা না পেলে বোমা ফাটিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। গত ২১ মার্চ চরমপন্থীদের বোমার আঘাতে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে ব্যানা খা নামে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা চরমপন্থী ভাড়া করে বোমা ফাটিয়ে তাকে হত্যা করেছে বলে তার বন্ধুরা দাবি করেছেন।

অপরদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামে গত ২৩’শে মার্চ রাতে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এনাম মেম্বারের সমর্থক রাহাত আলী সর্দার ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। এনাম মেম্বার অভিযোগ করেছেন, তার প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান শাহীনের লোকজন তাকে হত্যা করেছে। এদিকে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন সালাউদ্দিনের দাবি, এনাম মেম্বার এবার চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চান। নির্বাচনে তিনি জিততে পারবেন না বুঝতে পেরে নিজের দলের লোক হত্যা করে তার ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন। চেয়ারম্যান শাহীন ও এনাম মেম্বার এক সময় অতি ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া অঞ্চলে চরমপন্থীদের মদদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ ইউনিয়নে এবারের নির্বাচনে বেপরোয়া সহিংস ঘটনা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। এদিকে মেহেরপুরের একাধিক সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেছেন, তাদের পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি লাল পতাকার নামে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল আওয়াল, ষোলটাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবদাল হোসেন কালু, মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী জিয়া উদ্দিন বিশ্বাস, ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মশিউর রহমান সাবান ও সাহারবাটি ইউপির বাবলু চেয়ারম্যান হুমকি আতঙ্কে রয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় প্রায় ৬৬ জন চেয়ারম্যান চরমপন্থীদের হাতে খুন হয়েছেন। চরমপন্থীদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বহু চেয়ারম্যান। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের কয়েকটি ইউনিয়ন চরমপন্থীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এগুলো হচ্ছে সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়ন, গোসামী দুর্গাপুর ইউনিয়ন, ঝাউদিয়া ইউনিয়ন ও আবদালপুর ইউনিয়ন। এবারো এখানে চরমপন্থীরা আধিপত্য বিস্তার করতে পারে বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা।

সূত্র জানিয়েছে, ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে পরপর চারজন চেয়ারম্যান চরমপন্থীদের হাতে নিহত হয়েছেন। অবশ্য এ চার চেয়ারম্যানও চরমপন্থী সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিবর বিশ্বাস সম্প্রতি ভারতে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জাসদ গণবাহিনীর সম্পাদক ছিলেন। তার পূর্ববর্তী তিনজন চেয়ারম্যানের ভাগ্যেও একই পরিণতি হয়েছে। এছাড়া খুলনা জেলার ডুমুরিয়া, তেরখাদা, রূপসা, দীঘলিয়া, ফুলতলা, পাইকগাছা যশোরের চৌগাছা, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, কুষ্টিয়া সদরের দৌলতপুর, মিরপুর, মেহেরপুরের গাংনী, মেহেরপুর সদর, চুয়াডাঙ্গা সদর এবং আলমডাঙ্গায় চরমপন্থীদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থী নেতারা ক্রসফায়ারে বা প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হওয়ার পর থেকে এসব এলাকায় কিছুদিন চরমপন্থীদের তৎপরতা কম ছিল। এখন আবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে গেছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বারবার দাবি করলেও প্রত্যন্ত গ্রাম ও ইউনিয়নে এখনো মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে রয়ে গেছে নিষিদ্ধ সংগঠনের ক্যাডার ও তাদের মদদদাতারা।

জানা গেছে, এখানকার নিষিদ্ধ ঘোষিত বিপ্লবী কমিউনিস্ট পাট্রির প্রধান খুলনার মৃণাল ভারতে খুন হয়েছেন। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড শৈলেন ভারতের জেলে রয়েছেন। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের সম্পাদক দাদা তপন, তার ভাই আকাশ কুষ্টিয়ায় র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। জনযুদ্ধের শীর্ষ নেতা সুমন, শোয়েব, আবির হাসানসহ নেতৃত্ব পর্যায়ের সবাই বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পাট্রির প্রধান মোফাক্কর চৌধুরী, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি লাল পতাকার প্রধান ডা. মিজানুর রহমান টুটুল এবং গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ কিলাররা র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। গণমুক্তিফৌজের প্রধান আমিনুল ইসলাম মুকুল ও সামরিক শাখার প্রধান শাহীন রুমী ভারতের জেলে আটক রয়েছেন। জাসদ গণবাহিনীর প্রধান আজিবর চেয়ারম্যান এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড ওবাইদুল ওরফে লালও ভারতে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন। সবশেষ গত ১৫ মার্চ গণবাহিনীর নেতা আনোয়ার হোসেন আনু ভারতে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। তবে গণবাহিনীর বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব পর্যায়ের ক্যাডার ভারত থেকে কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন বলে জানা গেছে। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পাট্রির নেতা মান্নান মোল্লাও ভারতে অবস্থান করে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় তার সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬৬ জন জনপ্রতিনিধি খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বাগেরহাটের তেলিগাতির সাদু খাঁ,রামচাঁদপুরের রশিদ খান, বুড়িডাঙ্গার চেয়ারম্যান পিন্টু, ডেমা ইউপির আক্তার হোসেন, কালুবাড়িয়ার আতিয়ার রহমান, মানসা বাহিরদিয়া ইউপির আতর আলী, বাইনতলির হাবিবুর রহমান,মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাগবুল ইসলাম বাবলু, গাংনী পৌর চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল বাকী, সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলার কালিদাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেহের আলী, জেহালা ইউপি চেয়ারম্যান কচি, হারদী ইউপি চেয়ারম্যান মানু, আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম, জামিল ও আলী হোসেন, খাদিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের চেয়ারম্যান নূর আলী, কুষ্টিয়া জেলার ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ, আলী আকবার, খয়বার হোসেন, আজিবর বিশ্বাস, কয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমু হোসেন আমু, জামিল হোসেন বাচ্চু, কুমারখালীর হেলাল উদ্দীন, হাটশ হরিশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন সাচ্চু, নড়াইল জেলার বিচালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, ঝিনাইদহের মহেশপুরের ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সাতক্ষীরার গহর আলী ও মিজানুর রহমান।

এছাড়া খুলনার তেরখাদা উপজেলার সাটিয়দহ ইউনিয়নের চান মিয়া সিকদার, ডুমুরিয়া সদরের আবদুল মজিদ ও কবিরুল, মাগুরখালী ইউপির অতুল সাহা, দামোদরের সরদার আবুল কাশেম, আটরার শেখ সিরাজুল ইসলাম, শেখ আবদুর রউফ, কয়লাঘাট ইউপির ইন্তাজ আলী, ফুলবাড়ির রুহুল আমীন, নৈহাটির গোলাম ফারুক ও আবুল হোসেন, সুরখালীর মোস্তফা জাহান আলী, দৌলতপুরের আবু গাজী, হাবিবুর রহমান, দীঘলিয়ার আবদুল গফুর, ফুলবাড়িয়ার ইমরান গাজী, দেলুটির রবীন্দ্রনাথ, ও দামোদর ইউপির চেয়ারম্যান বাদল হোসেন খুন হয়েছেন। অপরদিকে যশোরের চৌগাছার সিংঝুলি ইউপির আশরাফ হোসেন, রাইপুর ইউপির ওয়াজেদ হোসেন, কাওসার হোসেন, নারকেলবাড়িয়ার জামিল মাস্টার, বিদ্যানন্দ কাঠির আনছার আলী, জামদিয়ার শেখ সফিউদ্দীন, বাসুন্দিয়া ইউপির মাজেদ শেখ, গঙ্গানন্দ ইউপির আবদুল জলিল, শার্শার পুটিয়খালীর নূরুদ্দীন, বেনাপোলের আবদুল করিম প্রমুখ চরমপন্থীদের হাতে নিহত হন। ডিবি প্রতিটি টিম প্রতিটি এলাকায় খোঁজ খবর নিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো অরাজকতা করছে কী না, চাঁদাবাজি করছে কী না, মানুষকে হুমকি দিচ্ছে কী না- সেটা আমাদের ডিবি টিম তদন্ত করছে। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, পলাতক ৫০ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নিয়ন্ত্রণে আছে অপরাধজগৎ। তাদের ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল ‘রেড নোটিস’ জারি করলেও গোয়েন্দারা বলছেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডেও অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা চালু করেছেন। এসব কারখানায় তৈরি হওয়া অস্ত্রের একটি অংশ বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে। তদন্তে উঠে এসেছে, দেশে অবৈধভাবে আসা ৮০ ভাগ বিদেশি অস্ত্র সীমান্ত দিয়ে আসছে। বাকি বিদেশি অস্ত্রগুলো অসাধু ব্যবসায়ীরা বৈধপথে দেশে এনে অবৈধভাবে বিক্রি করে দিচ্ছে।দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহযোগীদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে তারা।দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বড় অংশই সীমান্ত দিয়ে আসে। সীমান্ত পার করে আনা অত্যাধুনিক এসব ছোট আগ্নেয়াস্ত্র টাকার বিনিময়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারা দেশে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, গুপ্ত খুনি এমনকি কতিপয় রাজনীতিবিদদের হাতেও পৌঁছে গেছে এই অস্ত্র। যা দিয়ে করা হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ। সম্প্রতি যশোর সীমান্ত এলাকায় এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এই তরুণ একাই বিক্রি করেছেন দুই শতাধিক অস্ত্র। তাঁর মত এমন আরও ডজনখানেক অস্ত্র কারবারি খোঁজ মিলেছে।

প্রশ্ন উঠছে, সীমান্তে কঠোর নজরদারির ফাঁকি দিয়ে এত অস্ত্র আসছে কীভাবে? এর জবাবও মিলেছে সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে থেকে। তাঁরা বলেছেন, অবৈধ অস্ত্রের পেছনে আন্তর্জাতিক চোরাচালানিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাঁরাই সীমান্ত পার করে দেশে অস্ত্র চোরাচালান করছেন। আন্তদেশীয় এই অস্ত্র কারবারিদের নেটওয়ার্ক ভাঙা অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন।গত বুধবার ১সেপ্টেম্বর ২০২১. ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ভারত থেকে আনা অস্ত্র বিক্রির একটি নেটওয়ার্কের মূল হোতা আকুল হোসেনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর পরিচয় মিলেছে, আকুল যশোরের শার্শা উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা। ২০১৪ সাল থেকে তিনি অস্ত্র ব্যবসা করেন। গত ছয় বছরে ২০০ টির বেশি অস্ত্র বিক্রি করেছেন তিনি। পুলিশ বলছে, রাজধানী ঢাকা, সীমান্তবর্তী যশোর, সাতক্ষীরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সক্রিয় রয়েছেন এই চক্রের অর্ধশতাধিক সদস্য। সীমান্ত দিয়ে পার হওয়া ২০০ অস্ত্রে তদন্ত নেমে শুরুতেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, গত এপ্রিলে রাজধানীর ভাষানটেকে মুছা ওরফে চিকনা জামাল নামের এক ঠিকাদারকে গুলি করার হয়। ওই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র আকুলের দেওয়া। এমন আরও কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে তারা তথ্য গেছেন।

অস্ত্র নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্ট পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেছেন, আকুলের এই অস্ত্র রাজধানীসহ জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। সহজে হাতে পাওয়ায় তাঁর অনেক পরিচিতরা অস্ত্র কিনেছেন। অস্ত্র গেছে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডেও। সেই অস্ত্র পেয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সদস্যরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চলতি বছরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একে প্রায় একশ’ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল এএম জাহিদ পারভেজ বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে সীমান্তে বিজিবির ৬ হাজার টহল থাকে। এর মধ্যেও অস্ত্র আসছে। আমরা অস্ত্র কারবারিদের নেটওয়ার্ক ভাঙার চেষ্টা করছি। এ নিয়ে সীমন্তবর্তী দেশগুলো সঙ্গে আলোচনা চলছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে