কাজী বর্ণ উত্তম।। যে কোন সংকট কালে উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম নেয়,রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা থাকেন তারা তার নাগরিকের দ্বায়িত্ব নেয় নিরেপক্ষ ভাবে। কোভিড-১৯- করোনা ভাইরাস মোকাবিলার ব্যর্থতা সামলাতে ট্রাম্প প্রশাসনের এতো দিন চীনের উপর দিয়ে বেশ চোটপাট চলছিল যা এখনো অভ্যাহত। ট্রাম্পের একটা বড় অস্ত্র ছিল অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প, যা এই করোনা কালে ধুয়েমুছে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নভেম্বরের নির্বাচন আমেরিকা বাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে উঠছে দিন কে দিন বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপলিসে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে হত্যার মধ্যে দিয়ে উত্তাল আমেরিকা সেই পুরানো মদ নতুন বোতলে পরিবেষণ করছে। ফ্লয়েড হত্যার মধ্যে দিয়ে ট্রাম্পের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দেওয়া হল। হত্যা কান্ডের পর ট্রাম্পের টুইটারে বক্তব্য নিরেপক্ষ রাষ্ট্র নায়কের মত না হয়ে উসকে দিল যাতে আন্দোলন আরও বেগবান, আন্দোলনের উল্টো দিকে সাম্প্রদায়িকতা আরও বৃদ্ধি পাবে, যা আগামীতে শ্বেতাঙ্গদের ভোট আবারও তার ভোট ব্যাংকে পরতে সাহায্য করবে।তবে আশার আলো বর্তমান চলমান আন্দোলনে সাদারা বেশ সক্রিয়। লন্ডন সহ ইউরোপের বেশ কিছু জায়গায় এটা নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। সুর আর অসুরের লড়াইয়ে যে জিতবে তার উপর নির্ভর করছে আগামীর পৃথিবী।

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প জয় পান, একজন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের গোঁড়া সমর্থক তিনি যা নির্বাচনি প্রচারণায় দেখা যায়-তিনি হেরে গেলে সাদারা কোন দিন আর হোয়াইট হাউসে যেতে পারবে না, পুরুষ প্রেসিডেন্ট চান না মহিলা প্রেসিডেন্ট চান। এর পরেও আশ্চর্যজনক ভাবে জয়লাভ করেন। সেটাই তিনি অনেক কাজে–কর্মে দেখিয়েছেনও। তাঁর শাসনামলে মার্কিন রাজনীতি চরম দ্বিধাবিভক্ত। তাই ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের কথা তাঁর কাছ থেকে ভাবাও যায় না। পরিসংখ্যান বলে যুক্তরাষ্ট্রে দশকের পর দশক ধরে বর্ণবাদ চলে আসছে। শ্বেতাঙ্গের চেয়ে তিন গুণ বেশি কৃষ্ণাঙ্গ মারা যায় পুলিশের হেফাজতে।জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়া পর যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ চলছে,বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহমর্মিতার পরিবর্তে ‘অন্যায় কাজের’ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এই গণবিক্ষোভকে শুধু বামপন্থীদের অরাজকতা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেও কিছুই ঘটেনি বলে তিনি দাবি করে আসছেন। তিনি বলেছেন, “লুট শুরু হলে গুলি শুরু হবে।”

মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য তিনটি হুমকির কথা ওবামা ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নিজের বিদায়ী ভাষণে বলেন। তার একটি হল বর্ণবাদ অপরটি হল অর্থনৈতিক বৈষম্য, তৃতীয়টি হল সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভক্তি। আর চলমান প্রেক্ষাপটে ওবামা বলেন – ” আমি শুনেছি কেউ কেউ বলছেন, আমাদের অপরাধ বিচার ব্যবস্থায় বর্ণবাদী বৈষম্যের পুনরাবৃত্ত সমস্যায় প্রমাণিত, যা কেবলমাত্র বিক্ষোভ এবং সরাসরি ব্যবস্থা নিয়েই এর বদল আনা সম্ভব আর ভোট এবং নির্বাচনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কেবল সময়ের অপচয়। আমি এর সঙ্গে আর ভিন্নমত পোষণ করতে পারছি না।” বাহ্যিক ঘটনা বলির সাথে অন্তর্জগতের একটা সম্পর্ক আছে তাই কাব্যিক ভাবেই শেষ করি লেখাটি….

“অসুরের খোঁজে ভিন্ন সুর
ইতিহাস লিখবেন ইতিহাস বিদরা।
মাত্র দুটি সপ্তাহ, পনের টা দিন,
মহা মূল্যবান আজ আমেরিকাবাসীর জন্য
সিদ্ধান্ত হীনতা, ব্যবসায়িক হিসাব, দোদুল্য মনতা
অষ্টাশি দিনে এক লক্ষ আমেরিকান কবরে।

মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান ভুলে
দাম্ভিক মার্কিন সরকার,
অমানবিক ও কুৎসিত চেহারা প্রকাশ করছে।
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের জেরে
বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিলে মিছিল চলছে –
ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, পোর্টল্যান্ড, লস অ্যাঞ্জেল
সহ আমেরিকা জুড়ে,
পৃথিবী কে গনতন্ত্র শেখানো আমেরিকা
নিজের ভিতই আজ নড়বড়ে।
শুট করা হবে বলে হুশিয়ারি
বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢেলে আরও উত্তালতায়।

অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই
লড়াই থেকে শিক্ষা,
বাহ্যজগতে যেমন চলছে
সুর আর অসুরের নিয়ত যুদ্ধ
তেমনি চলছে অন্তর্জগতে।

আশাবাদী বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে
অসুর সাম্রাজ্যের পতনের ধ্বনি
ওহে আমেরিকা বাসী নায়কের মত এগিয়ে যাও
বিশ্ববাসী তোমার পদধ্বনি তে আলো দেখছে
তুমি গড়বে নতুন গৌরবগাথা।

কতগুলো কালো ঘোড়া
চালাচ্ছে আজ বিশ্ব টা কে।
পৃথিবীর গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে
অহঙ্কার, ক্রোধ, কর্কশ ব্যবহার, অবিবেচকেরা,
অসুরদের দাপটে দমবন্ধ ময় এক বিশ্ব।
উত্তরণের জন্যেই করোনা মহামারির আগমন
ক্ষত বিক্ষত মৃত্যুর মিছিলই তৈরি করছে নতুন সূর্য
যে সূর্য দেখাতেই আমেরিকানরা রাজপথে।।”

লেখক : কাজী বর্ণ উত্তম, লেখক ও কলামিস্ট
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে