অতিরিক্ত সময় সামাজিক মাধ্যমে কাটানো বিপদজনক। সোশ্যাল মিডিয়া চেক করা ছাড়া আপনি কি দিনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিতে পারেন নাকি মনে হয় কিছু একটা মিস করছেন? কোন একটা মেসেজ কিংবা মেইল চেক করতে গিয়ে আপনি কি নিজের অজান্তেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকে পড়েন? যদি উপরোক্ত একটি প্রশ্নের উত্তরও হ্যাঁ হয়, তবে এখনই আপনার সোশ্যাল একাউন্ট ঠিকভাবে সাজানোর উপযুক্ত সময়! এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আপনার জীবন ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এটি হতাশা বাড়ায়, আত্মমর্যাদা কমিয়ে দেয় এবং আত্মপূজার (নিজেকে নিজের কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হওয়া) মনোভাব সৃষ্টি করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার অবসাদ বাড়ায় এবং ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।ইন্সটাগ্রাম অথবা স্ন্যাপচ্যাট স্ক্রল করতে করতে কখনো কি আপনি এমন অনুভব করেছেন যে, আপনার জীবন খুবই একঘেয়ে, বিরক্তিকর? অথবা কখনো মনে হয়েছে টুইটার কিংবা ফেসবুকে পাওয়া ভালো বা খারাপ যেকোনো সংবাদ আপনার মস্তিষ্ককে আচ্ছন্ন করে রেখেছে?
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, রাসূল (সা) প্রতিনিয়ত আমাদেরকে সময়ের অপচয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। কেননা এটি শয়তানের কূটকৌশলের দরজা খুলে দেয়। এখন, কীভাবে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সময় কমাতে পারবেন। নিচের টিপসগুলো এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
ডিঅ্যাক্টিভেশন
আমরা একেবারে মূল পরামর্শের মাধ্যমে শুরু করতে পারি। আপনি যদি এটা মানেন অথবা নাও মানেন, আপনাকে এটা খুঁজে বের করতে হবে যে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার কোন অ্যাপ/অ্যাকাউন্ট ন্যুনতম ব্যবহার করেন কিংবা কোন অ্যাকাউন্ট ব্যবহারে উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। এরপর সে অ্যাকাউন্টটি ডি অ্যাক্টিভেট করুন। বরং এটিই হবে উত্তম পন্থা।
‘কেন’র উত্তর খুঁজে বের করুন
দূরবর্তী বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য? সময়ের সকল সংবাদের সাথে যুক্ত থাকার জন্য? কেন আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার সময় ব্যয় করেন? এটা কি আপনার ব্যবসায়িক একাউন্ট? এরপর ভাবুন সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমিয়ে আর কোন কোন উপায়ে আপনি এই ‘কেন’গুলো পূরণ করতে পারবেন।
দিনের প্রথম কাজ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢু দেয়ার অভ্যাস বদলান
যদি আপনি ঘুম থেকে ওঠার পরই ইনস্টাগ্রাম স্ক্রলিংয়ের উদ্দেশ্যে ফোন খুঁজতে হাত বাড়ান তবে থামুন! এর পরিবর্তে – এলার্ম বন্ধ করুন, ঘুম থেকে ওঠার দু’আ পড়ুন এবং বিছানা থেকে নামুন। নিজের বিছানা গুছিয়ে হাত মুখ ধুঁয়ে ফেলুন, নাস্তা বানান এবং দাঁত ব্রাশ করুন। এটা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, ঘুম থেকে ওঠার পরপরই কোন অ্যাপে ক্লিক করা কখনোই একটি সাফল্যমন্ডিত দিনের শুরু হতে পারে না। এই টিপসটি তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যারা দুশ্চিন্তা এবং অবসাদ নিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন। সোশ্যাল মিডিয়ার যেকোনো খবরাখবরে আচ্ছন্ন না হয়ে এটিই আপনার কাছে নতুন দিন শুরু করার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হতে পারে।
স্মরণ করুন, আমরা যা-ই দেখি তার সবকিছুর দায় আমাদেরই নিতে হবে
কিছু সময় আমরা হয়তো ভুলে যাই যে, সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা কীভাবে সময় ব্যয় করছি, সেই হিসাবও আল্লাহ নেবেন। তাই, আপনি যদি নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হন, তবে টাইমলাইন থেকে প্রশ্নবিদ্ধ বা সন্দেহজনক পোস্টগুলো মুছে ফেলুন। এবং আপনার হোমপেইজ যদি অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় ছবি, কারও প্রতি গীবত, অভিশাপ অথবা অন্যের গুনাহ সংক্রান্ত কথাবার্তায় পূর্ণ থাকে তবে অ্যাকাউন্টটিই মুছে ফেলুন। তার পরিবর্তে নতুন একাউন্ট খুলুন। বিগত দিনগুলোর কাজের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হোন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। এ সবকিছুই আপনার দুনিয়া এবং আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনবে।
সোশ্যাল মিডিয়া কতটুকু ব্যবহার করছেন তা লক্ষ্য করুন
সম্প্রতি ‘অ্যাপল’ তাদের আইফোনগুলোতে একটি ‘টুল’ চালু করেছে যেটি আপনার ফোন ব্যবহারের সময়টুকু হিসেব করে আপনার ব্যবহৃত অ্যাপসগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেবে। অন্যান্য ফোনের ক্ষেত্রে একটি থার্ড পার্টি অ্যাপ আপনাকে জানাতে সাহায্য করবে কতটা সময় আপনি ফোনের পেছনে ব্যয় করেন।
আপনার ফোনের অধিকাংশ সময়ই কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় হয়? আপনি দিনের ২,৪,৬ এমনকি ৮ ঘন্টাও ব্যয় করেন এখানে? এই বিশাল সময়ে আর কী কী করা যেতে পারে? আপনি কি সে সময়টা সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যয় করেন?
আনফলো, আনফলো এবং আনফলো!
‘আনফলো’ করা এমন এক ধরনের আর্ট যেটিকে কেন্দ্র করেই আরেকটি নিবন্ধ লেখা যাবে। তবে, আপনার সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট থেকে অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের আনফলো করার অর্থ হলো বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পাওয়া। তাই এরকম ব্যক্তিদের আনফলো করে দিন। আপনাকে যারা কমজোর ও অযোগ্য মনে করে হেয় করে কথা বলে সেসব বন্ধুদেরকে আনফ্রেন্ড এবং আনফলো করে দিন।
সেক্সুয়াল কন্টেন্ট, বর্ণবাদী মন্তব্য, বিভিন্ন হারাম কাজকর্ম প্রচারের সাথে জড়িত পোস্টসহ অশ্লীল বা সংবেদনশীল বিষয়বস্তুর সাথে জড়িত অ্যাকাউন্টগুলো আনফলো করুন। সবশেষে, যে একাউন্টের ভিডিও ও পোস্টগুলো আপনাকে ঘন্টার পর ঘন্টা সামাজিক মাধ্যমে আটকে রাখে সেগুলো থেকেও সরে আসুন।
দায়িত্বশীল হিসেবে যা প্রয়োজনীয় তা ফলো করুন
যেগুলো আপনার জীবনে সত্যিকার অর্থেই কাজে দিবে সেসব ফলো দিয়ে রাখুন। প্রথমে আপনি সেসব একাউন্টগুলোয় ফলো দিন যেগুলো ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ। বিভিন্ন ধরনের ইসলামী আর্টিকেল সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট যেমন – About Islam, Virtual Mosque, The Muslim vibe প্রভৃতি ওয়েবসাইটগুলো বিজ্ঞ কন্টেন্ট লেখক দ্বারা পরিচালিত যাদের লেখার মাধ্যমে আপনি সত্যিকার অর্থেই উপকৃত হবেন। এসব কনটেন্ট ছাড়াও এমনকিছু ফলো করুন যেগুলো আপনাকে জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপানে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। এবং এগুলো ফলো করতে গিয়ে সতর্ক নজর রাখুন সবদিকে যাতে আবারও আপনার ফলোয়িং লিস্টে বিশৃঙ্খলা দেখা না দেয়।
সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস গড়ে তুলুন
আপনার মানসিক, আবেগিক দিক এবং রুহের প্রতি খেয়াল রাখুন। এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনার আত্মা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে সে ব্যাপারে দৃষ্টি দিন। প্রয়োজনে যতটা যাওয়া দরকার, ততটা পথ এগিয়ে যেতে সাহসী হোন। আমি সম্প্রতি এক মাস সময় যাবত সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম এবং এতে নিজেকে দেয়ার জন্য প্রচুর সময় হাতে পেয়েছি। আপনি যখন এ সময়টা হাতে পাবেন তখন কীভাবে তা কাজে লাগাবেন সে ব্যাপারে আগেই ভেবে রাখুন। নয়তো সেই আগের মত ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আসক্ত হয়ে যাবেন। এই সময় প্রিয়জনের সাথে দেয়া, পড়াশুনা, গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ সম্পাদন, নতুন কিছুতে দক্ষতা অর্জন কিংবা পুরনো কোন শখ পূরণের জন্য ব্যয় করতে পারেন।
তো এখন?
আমরা সবাই নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি আমাদের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। আমরা যদি এর থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাতে আমরাই উপকৃত হবো। আমি মনে করি, এই টিপসগুলো আপনাকে অধিক কর্মচঞ্চল, মানসিকভাবে উৎফুল্ল করতে ভূমিকা রাখবে ; সেইসাথে আল্লাহর সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলবে।
হানা আলাসরী সম্পর্কে কিছু কথা>
হানা আলাসরী ইয়েমেনি আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটির একজন সংগঠক এবং ‘MAS Youth’ সংস্থার একজন কর্মনিষ্ঠ সদস্য। তিনি মূলত মুসলিম যুব সমাজের উন্নয়ন, ইসলামী শিক্ষা এবং ইয়েমেন সংকট নিয়ে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ডেট্রয়েট মারসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন PA স্কুলে মেডিসিন বিষয়ে অধ্যয়নরত।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ