প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের মৌলভীবাজার। আঁকাবাকা মেটোপথ আর অসংখ্য ছোট বড় টিলায় ভরপুর এই জেলা। রয়েছে অসংখ্য চা বাগান আর মাধবকুণ্ডের মতো দৃষ্টিজোড়ানো জলপ্রপাত। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো দর্শনার্থীরা।

সিলেট বিভাগের অন্তর্গত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থিত মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক। পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে অন্যতম বিখ্যাত এই স্থানটিতে বর্তমানে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। এই ইকোপার্কের অন্যতম আকর্ষণ হলো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, পরিকুণ্ড জলপ্রপাত, শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান, এবং চা বাগান। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ইকোপার্কটির ভেতরে তৈরি করা হয়েছে রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট ।

সম্প্রতি, ইর্কোপার্কটির কিছু সংস্কার কাজ করানোর ফলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হরে। সংস্কারকাজের মধ্যে রয়েছে মূল ফটক থেকে জলপ্রপাত পর্যন্ত রাস্তা মেরামত, রাস্তার দু’ধারে স্টিলের রেলিং, এবং ঝঁকিপূর্ণস্থানে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। জলপ্রপাতের পাশ ঘেষে যাওয়া খালটির উপর নির্মাণ করা হয়েছে কৃত্রিম পাখি, মৎস্যকন্যা, মাছ প্রভৃতির দৃষ্টিনন্দন সব মূর্তি।

তাছাড়া বড়লেখা-বিয়ানীবাজার মূল সড়ক থেকে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক যাওয়ার রাস্তাটিও সংস্কার করা হয়েছে। ফলে কোনো ধরনের ভুগান্তি ছাড়াই পর্যটকরা মাধবকুণ্ডের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

রংপুর থেকে আসা তরুণ তাওহীদ হাসান নভো জাগো নিউজকে বলেন, দুই বছর আগে একবার এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। তখন মূল রাস্তা থেকে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের গেট পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। কিন্তু এবার অনেক ভালো। সবকিছুই গুছানো মনে হচ্ছে।

সঙ্গে থাকা নভোর মা হেলেনা খাতুন জেসমিন বলেন, অনেক আগে থেকেই মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের নাম শুনেছিলাম কিন্তু কখনো আসা হয়নি। তাই এবার ছুটি পেয়ে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।

কেমন লাগলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মৌসুমে পাহাড়ে পানি কম থাকায় জলপ্রপাতের মূল সৌন্দর্যটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। জলপ্রপাতের পানিতে স্রোত থাকলে দেখতে ভালো লাগতো। তবে সার্বিক পরিবেশ বেশ ভালো।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাজিমা বলেন, মাধবকুণ্ডের সব কিছুই আমার গোছানো মনে হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধানের অভাবে অনেক কিছু ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা অবর্জনার কথা উল্লেখ করে মুনতাজিমা বলেন, পার্কের চারপাশটা একটু পরিষ্কার রাখলে দর্শনার্থীদের জন্য আরো ভালো হতো। তাছাড়া ইকোপার্কের মতো একটা স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখলে পরিবেশেরও ক্ষতি কম হবে বলে মনে করেন তিনি।

এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, দিনদিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে ফলে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যও ভালো চলছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যদি দর্শনীয় এই স্থানটির পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় তাহলে আরো বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশাবাদী তারা।

কিভাবে যাবেন :
ট্রেনযোগে : ঢাকা থেকে সিলেটগামী যেকোনো ট্রেনে কুলাউড়া পর্যন্ত টিকিট কাটতে হবে। টিকিট মূল্য-২৫৫ টাকা। কুলাউড়া স্টেশন থেকে বিয়ানীবাজার অথবা বড়লেখাগামী কোনো বাসে অথবা সিএনজি অটোরিকশা করে কাঁঠালতলি বাজারে নেমে রিকশাযোগে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত যাওয়া যাবে।

বাসযোগে : সায়দাবাদ বাসস্টেন্ড থেকে বিয়ানীবাজারগামী বাসে ( রূপসীবাংলা, শ্যামলী, এনা,তাজ) বাসে গিয়ে কাঁঠালতলি বাজার থেকে রিকশাযোগে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত যাওয়া যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে