ইংরেজি সাহিত্যে আজ পর্যন্ত যত হরর গল্পগ্রন্থ বের হয়েছে তার সবকটিতে এইচপি লাভারক্র্যাফটের কোনো না কোনো গল্পকে স্থান দিতে হয়েছে।
বলে নেয়া ভালো রহস্য সাহিত্যে হরর গল্পের স্থান অনস্বীকার্য। ভালো হরর গল্পের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর পাঠকের পছন্দমতো হরর গল্প লেখা সহজ কাজ নয়। এই কঠিন কাজটি যে কয়জন সাহিত্যিক করতেন তাদের মাঝে এইচপি লাভারক্র্যাফটের নামটা এলান পোর নামের পরেই আনতে হয়। যদিও আমাদের দেশের পাঠকের কাছে তিনি তেমন পরিচিত নন। এমনকি যারা হরর গল্প নিয়ে চর্চা করতেন তারা লাভারক্র্যাফটের নামটা চট করে ধরতে পারবেন না। হাওয়ার্ড ফিলিপস লাভারক্র্যাফট আমেরিকার রোড আইল্যান্ডে ১৮৯০ সালের ২০ আগস্ট জš§গ্রহণ করেন। বাল্যকালে তিনি প্রায় অসুস্থ থাকতেন। তবে তার মানসিক বিকাশ ঘটেছিল দ্রুত। ফলে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রোভিডেন ট্রিবিউন পত্রিকাতে জোতির্বিদ্যার ওপর কলাম লেখা শুরু করেন। ১৯০৪ সাল থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ওয়ের্ড টেলসের মতো নানা পত্রিকায় মাঝে মধ্যে গল্প লেখেন, যা থেকে তিনি অল্প টাকা পান এবং এই দিয়ে তার জীবন চলে।
এই সময়ে তিনি মিষ্টি ও ব্ল্যাক কফি খেয়ে জীবনধারণ করেন এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। গল্প লিখে তিনি কখনই যথেষ্ট উপার্জন করতে পারেননি। ফলে অভাব-অনটন ছিল তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এভাবেই চরম অবহেলা ও দারিদ্র্যের মাঝে ১৯৩৭ সালে মার্চ মাসের ১৫ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুর একযুগ পর থেকে তার লেখা হরর গল্পগুলো পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে থাকে এবং লেখক হিসেবে তার নাম দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এরপর ইংরেজি সাহিত্যে আজ পর্যন্ত যত হরর গল্পগ্রন্থ বের হয়েছে তার কটিতেই লাভারক্র্যাফটের কোনো না কোনো গল্পকে স্থান দিতে হয়েছে। তার গল্পগুলো পরবর্তীতে হরর, ফ্যান্টাসি কিংবা সায়েন্স ফিকশন চর্চায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জীবদ্দশায় তার কোনো গল্প গ্রন্থ বের হয়নি। মৃত্যুর পর তার গল্পগুলোকে একসঙ্গে করে কয়েকটি ভলিউম প্রকাশ করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দ্য আউটসাইডার অ্যান্ড আদার’স যেটা ১৯৩৯ সালের এবং ‘দ্য হান্টার অব দ্য ডার্ক অ্যান্ড আদার টাইলস’ ১৯৫১ সাল। ওপরে উল্লেখিত বই দুটির প্রতিটি গল্পই ক্ল্যাসিক হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। তিনি বিভিন্ন মিউজিক বা সুরের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তাছাড়া বিভিন্ন খেলা যেমন কাউসিয়াম রোল প্লেয়িং গেম তাকে লেখার ক্ষেত্রে বেশ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। লাভারক্র্যাফটের কিছু গল্প ছিল অসমাপ্ত যা তিনি তার জীবদ্দশায় শেষ করতে পারেননি। সেসব অসমাপ্ত গল্প পরবর্তীতে প্রচুর পরিশ্রম করে সংগ্রহ করেছিলেন অগাস্ট ডারলেথ। ডারলেথ নিজেই ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত রহস্য সাহিত্যিক, সম্পাদক এবং প্রকাশক। সর্বোপরি তিনি ছিলেন লাভারক্র্যাফটের ভক্ত। লাভারক্র্যাফটের রেখে যাওয়া প্লট এবং আউটলাইন অনুসরণ করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি গল্পগুলো শেষ করেন। সেসব গল্পের মধ্যে দ্য সারভিভোর এবং দ্য অ্যানসেন্টর অন্যতম। এই গল্প দুটিকে রহস্য সাহিত্যের পরম সম্পদ মনে করা হয়।