যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যাপিটল হিলে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শপথ পাঠ করান প্রধান বিচারপতি রিচার্ডস। এরইমধ্যে শপথ নিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

রেওয়াজ অনুযায়ী প্রার্থনার জন্য সেন্ট জন চার্চে যান ট্রাম্প। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া। প্রার্থনা শেষে হোয়াইট হাউজে যান ট্রাম্প দম্পতি। সেখানে তাদের স্বাগত জানান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা। হোয়াইট হাউজে একসঙ্গে কফি পান শেষে গাড়িবহর নিয়ে ক্যাপিটল হিলে পৌঁছান তারা। ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডিরা। আছেন সাবেক ফার্স্টলেডি ও নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন। শপথ শেষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ট্রাম্প। ভাষণ শেষে পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউতে দেড় মাইল দীর্ঘ প্যারেডে অংশ নেবেন ট্রাম্প ও পেন্স। প্যারেড শেষে আনুষ্ঠানিক অভিষেক উৎসবে যোগ দেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এর জীবনীঃ
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড র‍্যাগানের ভক্ত। তবে রিপাবলিকান পার্টিতে সুবিধা করতে না পেরে নিজেই গঠন করেন বেশ কটি রাজনৈতিক দল। এতেও ভাগ্য সদয় না হওয়ায় ২০০১ ভিড়ে যান ডেমোক্র্যাট শিবিরে।

সেখানেও স্থির হতে পারেননি অস্থির এই ধনকুবের। পুরোনো দলে আবার ফেরেন ২০০৯ এ।
২০১২ সালে প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে যোগ দিলেও পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। পরিচিতি পান প্রেসিডেন্ট ওবামার অভিবাসন নীতি, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তার কড়া সমালোচক হিসেবে।

২০১৫। আবারও রিপাবলিকান শিবির থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়নের লড়াইয়ে ট্রাম্প। তবে এবার আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পাগলাটে আচরণ বিতর্কিত বক্তব্য তাকে এনে দেয় দারুণ জনপ্রিয়তা। ২০১৬ র ২১শে জুলাই ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পকে বেছে নেয় রিপাবলিকানরা।

প্রচারের নানা সময়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন ট্রাম্প। এক সময়ে মনে হচ্ছিল হিলারির ধারেকাছে পৌঁছাতে পারবেন না এই মার্কিন ধনকুবের। তবে ভোট এগিয়ে আসতেই জনপ্রিয়তার পালে লাগে হাওয়া। ১৯৪৬ সালে নিউ ইয়র্কের এক ধনী পরিবারে জন্ম ট্রাম্পের। বিয়ে করছেন তিনবার। বর্তমান স্ত্রী সাবেক মডেল ম্যানিলা ট্রাম্প। মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হচ্ছে মুখরা একজন প্রেসিডেন্টের শাসন। সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমেও সমান চলে যার কথার যুদ্ধ। বেফাঁস মন্তব্যেও তার জুড়ি মেলা ভার। এতে ফেঁসে গিয়ে ইউটার্ন নিতেও বেশি দেরি করেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া, নির্বাচনি প্রচারের সময়, এই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে উঠেছে, যৌন হয়রানির ডজন খানেক অভিযোগ। শুধু মুসলিম বিদ্বেষী-ই নয়। নির্বাচনী প্রচারনায় নামার পর ট্রাম্পের এমন একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য দেখতে হয়েছে বিশ্ববাসীকে।

অভিবাসীদের বহিষ্কার, ওবামাকেয়ার বাতিল কিংবা অর্থনৈতিক প্রতিপক্ষ, চীনকে ঘায়েল করতেও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে ছাড়েননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নেয়ার আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছাস দেখা গেছে ট্রাম্পের কণ্ঠে। নির্বাচনী প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি তার আক্রোশের শিকার হয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।

শুধু নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায়, তার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। মডেল থেকে শুরু করে তার অনেক সাবেক সহকর্মিও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এমনকি দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ২ দিন আগেও যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন, সুমের জারভোজ নামে এক সাবেক মডেল। কট্টর শেতাঙ্গ ট্রাম্পের বর্ণবাদি মন্তব্যের জেরে, বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশেও ঘটেছে সহিংসতার ঘটনা। মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, শপথ নেয়ার আগে এত কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট আর দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র।

মডেল থেকে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াঃ
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ক্যারিয়ার শুরু মডেলিং দিয়ে। কখনো যাননি রাজনীতির ধারে নকাছে। ফ্যাশন আর গ্ল্যামার জগত ছেড়ে কেমন হবে তার হোয়াইট হাউজ অধ্যায় তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।

১৯৯৮ সাল। নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে পরিচয় ট্রাম্প মেলানিয়ার। ট্রাম্প তখন বায়ান্নোয় মেলানিয়িার আটাশ। সামনে এগুতে ফোন নম্বর চাইলেও রিয়ালিটি শোর তারকা ট্রাম্পকে খালিহাতে ফেরান সুপার মডেল মেলানিয়া। উল্টো নিজের নম্বরই রেখে আসতে হয় ট্রাম্পকে। এরপর প্রেম সাত বছর পর বিয়ে।

অভিবাসনবিরোধী ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়াই একজন অভিবাসী। জন্ম স্লোভেনিয়ার সমৃদ্ধ এক শহরে। শান্ত মেজাজের এই মডেলকে মেলানিজা নাভস নামেই চিনতেন শিক্ষক, সহপাঠী ও বন্ধুরা। ১৮ বছর বয়সেই ঠিক করেন লক্ষ্য। মিলানের একটি মডেলিং এজেন্সিতে নাম লেখান ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার মেলানিয়া। আর এই মডেলিংয়ের রেশ ধরেই নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করেন নিন্দুকেরা। কনভেনশনের পর পরই ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে খোলামেলা ছবি। শুরু হয় সমালোচনা।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বলেন, এসব নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত না। তবে কোনো নোংড়ামি সহ্য করবো না। ট্রাম্পের ওপর আমার আস্থা আছে। তিনি একজন নিপাট ভালো মানুষ। স্লোভানিয়ান, ফরাসি, জার্মান ও ইংরেজিতে বলতে দক্ষ মেলেনিয়ার আছে নিজস্ব ব্র্যান্ডের গয়নার ব্যবসা। আর তা নিয়েই তিনি ব্যস্ত পছন্দ করেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে