ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বরঃ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমে সফল হতেই হবে। কারণ সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের সফলতার ওপর নির্ভর করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। এজন্য সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সকল সদস্যের সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা মূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এবং লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে আরো কার্যকর করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা আয়োজিত সরকারি আইনি সেবা ও সুশাসন শক্তিশালীকরণ বিষয়ক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।মন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চায়। সরকারের এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে, একসেস টু জাস্টিস বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। কারণ উন্নয়ন ও আইনের শাসন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের একসেস টু জাস্টিস নিশ্চিত করতে হবে ২০৩০ সালের মধ্যেই। এই একসেস টু জাস্টিস নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিটি জেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে আইনি সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা জজকে এই কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা জজদের নেতৃত্বে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিগুলো যাতে সুষ্ঠভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারে, সে জন্য প্রতিটি জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে এবং সেখানে একজন করে সহকারী জজ/ সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট জেলায় সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের জন্য দায়বদ্ধ। অথচ কোন কোন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি কখনো কখনো প্রত্যাশিত কার্যক্রম পরিচালনায় পিছিয়ে পড়ছেন। কিন্তু আমাদের পিছিয়ে পড়লে চলবে না। সকলকে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই এই কার্যক্রমের সফলতা আসবে।
মন্ত্রী বলেন, আদালতগুলোতে বিদ্যমান মামলাজট হ্রাস করতে লিগ্যাল এইড অফিসগুলো যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সে লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের পাশাপাশি দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৮৯(এ) ধারায় সংশোধনী এনেছে। ফলে লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে অসহায়, দরিদ্র ও দুস্থ জনগণকে আইনি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি পক্ষগণের মধ্যে থাকা বিরোধ সমূহ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর পদ্ধতিতে প্রি- কেইস ও পোষ্ট- কেইস মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে আমাদের লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে এডিআর পদ্ধতিতে ১৯ হাজার ১৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির এই পরিমাণ আমাদের অবশ্যই বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ বিরোধ মামলা দায়েরের পূর্বেই প্রি- কেইস মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে, সে পরিমাণ বিরোধ মামলা দায়েরের পর অর্থাৎ পোষ্ট- কেইস মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। যদিও আমাদের আদালতগুলোতে লাখ লাখ দেওয়ানী মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। যেহেতু লিগ্যাল এইড অফিসারগণকে বিচারাধীন দেওয়ানী মামলা মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাই দেওয়ানী আদালতগুলো যাতে নিয়মিতভাবে বিচারাধীন মামলাসমূহ আপোষ মীমাংসার জন্য লিগ্যাল এইড অফিসারদের নিকট প্রেরণ করে সে বিষয়ে জেলা জজদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা জজদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশে এডিআর পদ্ধতিতে বিপুল সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। জাপানে পারিবারিক ও দেওয়ানী মামলার সিংহভাগ মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে। আমাদের আইনি কাঠামোতে এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির সকল ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন ইপ্সিত ফল লাভ করতে পারছি না, তা ভাবতে হবে। এ লক্ষ্যে জেলা জজ হিসেবে আপনাদের গতিশীল নেতৃত্ব এডিআর পদ্ধতির প্রয়োগকে ত্বরান্বিত করতে পারে। আপনারা সহকর্মীদেরকে এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে উৎসাহিত করবেন, তাদের সংগে নিয়মিত মতবিনিময় করে এডিআর পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যা চিহ্নিত করবেন এবং তা কিভাবে দূর করা যায়, এসব বিষয়ে আপনাদের উদ্ভাবনী ভাবনাগুলো প্রয়োগ করবেন।
মন্ত্রী বলেন, লিগ্যাল এইড অফিসার একজন বিচারক হওয়ায় তার মধ্যস্থতায় বিরোধ নিষ্পত্তিতে জনগণের এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে। এই আস্থা ধরে রেখে লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে সর্বাধিক জনবান্ধব করতে জেলা জজদের সচেষ্ট হতে হবে। লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবীরা যাতে সততা ও নিষ্ঠার সাথে অসহায়-দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে প্রকৃত আইনি সেবা প্রদান করতে পারেন সে বিষয়ে নিয়মিত তদারকি ও ফলোআপ করতে হবে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসাররা যাতে তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের এই মহৎ কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করে অসহায় জনগণের নিকট আইনি সহায়তা পৌঁছে দিতে পারেন সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। বিশেষ করে উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটিগুলোকে সক্রিয় করে সরকারি আইনি সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ের অসহায়, দরিদ্র ও দুস্থ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আইন সচিব মো. গোলাম সাওয়ার বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৮ জন বিচারপ্রার্থীকে সরকারি আইনি সেবা প্রদান করেছে। এছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২৮ কোটি ৮৪ লক্ষ ৯২ হাজার ৬১৫ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিয়েছে। সাধারণ জনগণের কাছে সরকারি আইনি সেবার যে চাহিদা তা এ পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমান করা যায় ।জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এ. এইচ. এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ঠধহ ঘমুঁবহ বক্তৃতা করেন।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ