বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা লক্ষীপুর। এটি রহমতখালী নদীর তীরে অবস্থিত। চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত এই জেলার উত্তরে চাঁদপুর, দক্ষিণে নোয়াখালী ও ভোলা, পূর্বে নোয়াখালী এবং পশ্চিমে বরিশাল জেলা ও মেঘনা নদী। লক্ষ্মীপুর জেলা ১৩শ’ শতাব্দীর শুরুতে ভুলুয়া রাজ্যের অংশ ছিল। বলা হয়ে থাকে যে, মোগল ও ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর সময়ে লক্ষ্মীপুর একটি মিলিটারী আউটপোস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপাদন হতো ও রপ্তানী চলত। এ থেকেই এখানে লবণ আন্দোলনের সূত্রপাত।

জেলার লোকজনের নীল বিদ্রোহ ও স্বদেশী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। স্বদেশী আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী এই এলাকা পরিভ্রমণ করেন এবং রামগঞ্জের শ্রীরামপুর রাজবাড়ী ও কফিলাতলি আখড়াতে অবস্থান করেন। এ ছাড়া ১৯২৬ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানে আসেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এখানে ১৭টি বড় ধরনের লড়াই হয়। জেলার বধ্যভূমি, গণকবর, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ আজও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার নামকরণ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক কৈলাশ চন্দ্র সিংহ “রাজমালা” বা “ত্রিপুরার ইতিহাস” বর্ণনায় লিখেন যে, বাঞ্চানগর চাকলা, সমসেরাবাদ মৌজা, লক্ষ্মীপুর মৌজা পাশাপাশি অবস্থিত ছিল, যা থেকে প্রমাণিত হয় বাঞ্চানগর চাকলার মধ্যে লক্ষ্মীপুর নয়, বরং বর্তমানের লক্ষ্মীপুর গ্রাম ও তার কাছাকাছির বিস্তৃত এলাকা নিয়েই লক্ষ্মীপুর মৌজার ব্যপ্তি ছিল। এ থেকেই লক্ষ্মীপুর নামের উৎপত্তি।

আবার কারো মতে, ১৮৬০ সালে সম্রাট শাহ্জাহানের ছেলে শাহ্ সুজা ভূলুয়া দখলের আরাকান রাজ্য হয়ে শ্রীপুরে পৌছান। এরপর লক্ষ্মীদহ্ পরগনা থেকে যাত্রা করেন এবং ভূলুয়া দখলে ব্যর্থ হয়ে আরাকানে ফেরত চলে যান। অর্থাৎ শাহ্ সুজার ভূলুয়া গমনের কাহিনী থেকে লক্ষ্মীদহ পরগনার নাম পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এই লক্ষ্মীদহ থেকেই লক্ষ্মীপুরের নামকরণ চলে আসে। এ ছাড়া সুরেশ চন্দ্রনাথ মজুমদার তার গবেষণামূলক বই “যোগী বংশ”তে উলে-খ করেন, দালাল বাজারের জমিদার রাজা গৌরী কিশোর রায় চৌধুরীর বংশধর লক্ষ্মী নারায়ণ রায়ের নামানুসারে জেলার নাম হয়ে যায় লক্ষ্মীপুর। তবে, অনেকের মতে বঙ্গোপসাগর ও মেঘনার মোহনায় অবস্থিত এই জেলা প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসে ব্যাপক গুরুত্ব রাখার কারণে “লক্ষ্মীপুর” নামকরণ করা হয়, যার অর্থ “সৌভাগ্যের নগরী”।

লক্ষ্মীপুর জেলার মোট আয়তন ১,৪৫৬ বর্গ কি. মি. যা, সমগ্র বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ১%। এলাকার বিচারে এটি উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯টি জেলার মধ্যে আয়তনে ১৪তম স্থানে এবং বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৬তম স্থানে রয়েছে।>4টি পৌরসভা, ৫০টি ইউনিয়ন, ৩০টি ওয়ার্ড, ৫১৫টি মৌজা/মহল-া ও ৫৩৭টি গ্রাম নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা। লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ,কমলনগর ও রামগতি জেলার 5টি উপজেলা। ১৮৬০ সালে নোয়াখালী জেলার অধীনে তৎকালীন লক্ষ্মীপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৯ সালে এটি উপবিভাগে রূপান্তরিত হয়। এর পরে ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় উনড়বীত হয়। ১৮৬০ সালে লক্ষ্মীপুর শহর গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়, যা ১২টি ওয়ার্ড ও ২২ টি মহল-া নিয়ে গঠিত।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমিভিত্তিক সীমা নির্ধারণের জন্য তিনটি সূচক বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে জোয়ার-ভাটার প্রভাব, লোনা পানির অনুপ্রবেশ এবং ঘূর্ণিঝড়/জলোচ্ছ্বাস। এর ভিত্তিতে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর তীরবর্তী এবং সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ উপজেলাকে অন্তর্বতী উপকূলীয় এলাকায় পড়েছে।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে