তালাত মাহমুদ, বিশেষ প্রতিনিধি।। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পররাষ্ট্র বিষয়ে যেসব অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা এবং অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগিতা চলমান থাকবে। অন্যটিতে উন্নয়ন অর্থায়নের ক্ষেত্রে চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করা হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায় উন্নয়ন অর্থায়নের মতো উদ্বৃত্ত সামর্থ্যের দেশ নেই বললেই চলে। আর চীন, রাশিয়া থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত খুব কঠিন। সহজ শর্তে ঋণের জন্য আমাদের নির্ভরশীলতা থেকে যাবে উন্নত বিশ্ব এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলোর ওপর। পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক তাই উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলতেই হবে। নির্বাচন–উত্তরকালে কতটা সহজ হবে সে কাজ। তাই বিদেশের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতেই হচ্ছে।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে সিই সি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মাত্রা বা ইন্টারন্যাশনাল ডাইমেনশন আছে। এটাকে খাটো করে দেখা যাবে না। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে। দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের দপ্তর চিঠিটি গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে চিঠির বিষয়টি তুলে ধরেছেন রুহুল কবির রিজভী। চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করতে রাষ্ট্রীয় মদদে অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা চলছে। বিএনপি বক্তব্য, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেরা তালিকা করে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিশেষত অগ্নিসন্ত্রাসের বানোয়াট অভিযোগে তারা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের টার্গেট করছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।

বাংলাদেশের ভোট পূর্ব পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ব্রাসেলসে পাঠানো একটি বার্তায় বিরূপ পূর্বাভাস দিয়েছে ঢাকার এক ইউরোপীয় মিশন। আগামী ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপারে ‘সত্যিকার কোনো বিরোধী প্রার্থীর’ উপস্থিতি থাকছে না। বরং ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্রমবর্ধমান অসংগঠিত প্রার্থীদের মধ্য থেকে ভোটারদের একজনকে বেছে নিতে হবে। প্রতিযোগিতাহীন এমন নির্বাচনে ভোটারদের কাক্সিক্ষত উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভোটগ্রহণের দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের মানুষ ক্রমেই নির্বাচনকে ‘বিশেষ নির্বাচন কার্যক্রম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে গত ১৭ই ডিসেম্বর একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলকে দেয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। ওই সাক্ষাৎকারে আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপি’র নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তবে বিএনপি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। দেশে অস্থিতিশীলতা এড়াতে বিরোধীদের কারাগারে পাঠানো ছাড়া সরকারের কাছে কোনো গত্যন্তর ছিল না বলেও আব্দুর রাজ্জাক উল্লেখ করেছিলেন।

বিএনপির সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খানের সাথে বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচনী অবস্থা নিয়র আলোচনা করেন। বাংলাদেশের নির্বাচন মূল্যায়ন করতে কয়েক মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সদস্যরা। এর আগে তারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য-কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় তারা নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আগামী ৭ জানুয়ারি যদি একতরফা নির্বাচন হয়, তাতে বিদেশের সাথে আমাদের দূরত্ব আরও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে অর্থনীতির সংকট বাড়বে। নির্বাচনের পরেই আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, বৈদেশিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে