যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এমন একটা সময় ভারত সফরে এলেন, যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশে সংঘাত চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেশ তৎপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কথা বলতে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস দুই দেশের মধ্যকার ‘টু প্লাস টু সংলাপে’ অংশ নিতে উড়ে যান দিল্লিতে।

সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং সুশীল সমাজের কাছে ক্রমাগত মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন পিটার হাস। হাস মনে করেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব নির্বাচন পরিচালিত হয়েছে, সেখানে কারচুপি হয়েছে এবং বিরোধীদের সমান সুযোগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন। তবে ইতিপূর্বে বিভিন্ন উপ-নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে ব্যর্থতা এবং স্থানীয় নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আরব অঞ্চল সফল শেষে জাপান হয়ে প্রতিরক্ষা সচিব লাইড অস্টিনকে নিয়ে দিল্লিতে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র ভারতের সঙ্গে বৈঠকের সময় পিটার হাসের নয়া দিল্লি আগমন নিছক কাকতালীয় নয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, যেহেতু বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় মোদি সরকারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং স্থিতিশীল অংশীদার; তাই বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এজেন্ডায় শীর্ষে রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তৃতা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণে। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ করা না হলেও, গত এক বছর ধরে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা প্রকাশ্যে বলেছে, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক স্বীকৃত হলেই কেবল তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (৭৮) বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি নারী প্রধানমন্ত্রী। এই ডিসেম্বরে তিনি টানা তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ করবেন। ক্রমবর্ধমান মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তার সরকার নানা সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে। দেশটিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। সরকার তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। তবে মিথ্য অভিযোগে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছে। এমন পরিস্থিতে নীরবতা বজায় রাখছে প্রতিবেশী ভারত, বাংলাদেশে যার অংশীদারিত্ব পশ্চিমাদের চেয়ে অনেক বেশি। তবে বৈঠকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রীর মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী যখন স্বাধীন ও মুক্ত হওয়ার বিষয়ে কথা বলছিলেন, তখন তাকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

ভারতে বিশেষজ্ঞরা এবং বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকরা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যের শুক্রবারের বৈঠকটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। কেননা আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই বৈঠকটি বেশ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের জন্য অনেক কিছু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে