আনোয়ার হোসেন ,খাগড়াছড়ি: গুইমারা উপজেলা খাগড়াছড়ির নবম  উপজেলা। ২০১৪ সালের ২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে  সরকারের  প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সম্পর্কিত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির  (নিকার) ১০৯তম সভায় খাগড়াছড়ি জেলার তিন উপজেলার তিন ইউনিয়ন নিয়ে  গুইমারা উপজেলা গঠিত হয়। রামগড় উপজেলার হাফছড়ি, মহালছড়ির সিন্দুকছড়ি  ও মাটিরাঙার গুইমারা ইউনিয়নকে নিয়ে ‘গুইমারা উপজেলা’ ঘোষণা করা হয়।  গেজেট  প্রকাশ হয় ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪।  বদলির আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়াই দীর্ঘ দিন ধরেই ইউএনও সংকটে গুইমারা  উপজেলা পরিষদে প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। নানা সমস্যায়  ভুগছে গুইমারা উপজেলা পরিষদ।

গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে  অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম  চৌধুরী। চলতি বছর জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত ৪জন উপজেলা নির্বাহী  অফিসারকে গুইমারায় বদলি করা হলেও যোগ দেননি কেউ। ৭ মাসে ৪টি বদলির আদেশ  হলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি।  বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় চট্রগ্রামের (সংস্থাপন) শাখা থেকে অতিরিক্ত  বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী সাক্ষরিত  গত ৪  জানুয়ারী ২০২৩ প্রজ্ঞাপনে তানিয়া ভুইয়া (১৭৮৪১)কে গুইমারা উপজেলা  নির্বাহী কর্মকর্তা বদলি করা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ অপর একটি  প্রজ্ঞাপনে তানিয়া ভুইয়ার গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদানের  আদেশটি বাতিল করা হয়। একই তারিখ ও আদেশে মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার  (১৭৭৪৭)কে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। ১৮মে  ২০২৩ প্রজ্ঞাপনে ব্রাক্ষনপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা  (১৭৩৩৪)কে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করে আদেশ জারি  করা হয়। ১০ জুলাই আরেকটি প্রজ্ঞাপনে সোহেল রানা’র বদলির আদেশটি বাতিল  করে মো: সাইফুল ইসলাম (১৭৯৮১) কে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  হিসেবে বদলি করা হয়। ১০জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি হলেও এখনও যোগ দেননি তিনি।

গুইমারা এলজিইডি অফিস সুত্রে জানা গেছে, গুইমারাতে ইউএনওদের বাসভবন নেই।  ২০শে ডিসেম্বর ২০২৩ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন অনুমোদন হয়।  সরকারি বরাদ্ধের পরিমান ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। বাসভবন অনুমোদন হলেও জমি  সংকটের কারনে বাসভবনের কাজ শুরু করা যায়নি।  অপরদিকে, কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরেও ভবন পায়নি গুইমারা উপজেলা পরিষদ। গুইমারা  ইউনিয়ন পরিষদের কমপ্লেক্সে স্বল্প পরিসরে চলছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক  কার্যক্রম।  ১৯শে জুলাই ২০২২ তারিখে গুইমারা উপজেলা পরিষদের ভবন নির্মান  কাজ শুরু হলেও ১ বছরে কাজের অগ্রগতি পয়ত্রিশ শতাংশ। ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে  ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা  যাবেনা বলছেন এলজিইডি অফিস।  এখনও ভাড়ায় চলছে বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম। উপজেলা যুব উন্নয়ন  অধিদপ্তর, সমাজসেবা, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, উপজেলা কৃষি অফিসসহ কয়েকটি  দপ্তরের কার্যক্রম  চলছে ভাড়াবাড়িতে। স্বাস্থ্য, ও ভূমিসেবার মত অনেক  বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরুই হয়নি। দীর্ঘ ৯ বছরে ভুমিসেবা  কার্যক্রম চালু হয়নি। নেই উপজেলা ভুমি অফিস। চালু হয়নি কোন হাসপাতাল।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দীর্ঘদিনেও গড়ে  না উঠায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত সাধারন মানুষ। স্বাস্থ্যসেবার জন্য  যেতে হয় পাশের উপজেলায় গুলোতে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত মৌলিক সেবা থেকেও  বঞ্চিত হচ্ছে নতুন এই উপজেলাবাসী।

অপরদিকে, ৯ বছর ধরে গুইমারা ইউনিয়ন  পরিষদে উপজেলার কার্যক্রম চালু হওয়ায় সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও  সদস্যরা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত নতুন কার্যালয়ে বসতে পারেননি। স্থানীয়দের  অভিযোগ, গুইমারা উপজেলা ঘোষনা হওয়ার পর প্রথম চেয়ারম্যান হন উশেপ্রম্ন  মারমা কিন্তু ৫ বছর ক্ষমতাই থেকে গুইমারার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে  পারেননি তিনি।  উপজেলা চেয়ারম্যান মেমং মারমা বলেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ  ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছি। বসার কোনো কার্যালয় পাইনি। উপজেলা পরিষদ  কমপ্লেক্সে এর কাজ নির্মান চলমান আছে। যথাসময়ে কাজ শেষ হবে। ইউএনও’র  বাসভবনের টেন্ডার হয়েছে। শিগ্রই ভবন নির্মানের কাজ শুরু হবে। গুইমারাতে  স্থায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকার কারনে প্রশাসনিক বিভিন্ন  কার্যক্রম গতি হারিয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে বর্তমান অ. দা. থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম  চেীধুরীর মুঠোফেনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।  ইইএনওদের বদলির আদেশ বাস্তবায়ন ও যোগদানের বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা  প্রশাসক মো: শহিদুজ্জামান বলেন, গুইমারাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা না  আসার প্রদান কারন হল আবাসন সংকট। বাসভবন না থাকার কারনে ইইএনওদের  গুইমারাতে আসতে অনিহা।  সম্প্রতি বদলি হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  যাতে যোগদান করে জেলা প্রশাসন থেকে এই সমস্যা সমাধানে চেষ্ঠা চলছে।

জেলা ডেস্ক ।। বিডি টাইমস নিউজ 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে