সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বানবাসী মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক ডুবে গিয়ে উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও সরকারি দফতর গুলোতে উঠেছে পানি। বন্যাকবলিত হয়ে পড়া সিলেট নগরের আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিতে ভাসছে নগর থেকে গ্রামগঞ্জের বাড়ি-ঘর, হাটবাজার। রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেক এলাকার সঙ্গে জেলা ও উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীসহ সিলেট সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৩০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন ৮টি সড়কে ৫৫ কিলোমিটার বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিসিক এলাকার ৫০০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডের প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার সড়কে বন্যার পানি উঠে গেছে। এসব সড়কের অনেক স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন সিলেট জেলার ১০টি উপজেলার ৬৬টি সড়কে ২৩০ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে জেলা ও উপজেলা সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্ন হয়েছে। অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবীর এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, টাকার অংকে পাকা রাস্তা ক্ষতিপ্রস্ত হওয়ার পরিমাণ ১৭২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তিনি বলেন, বন্যা কবলিত জেলার গোয়াইনঘাটে ২৭টি সড়কে ৮২ দশমিক ১৩ কিলোমিটার, কানাইঘাটে ১৫টি সড়কে ৩০ দশমিক ৫ কিলোমিটার, জৈন্তাপুর উপজেলার ১১টি সড়কের ৩২ দশমিক ০১ কিলোমিটার, সিলেট সদরের ১২টি সড়কে ২১ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার, গোলাপগঞ্জে ১০টি সড়কে ২২ দশমিক ০৩ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জে ৪টি সড়কে ৩৪ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, দক্ষিণ সুরমার ৪টি সড়কে সাড়ে ৩ কিলোমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ১টি সড়কের দেড় কিলোমিটার, ওসমানীনগর উপজেলায় ১টি সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার, বালাগঞ্জে ১টি সড়কে দেড় কিলোমিটার।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তফিকুর রহমান বলেন, সারি গোয়াইনঘাট ২য় থেকে ১৬তম কিলোমিটার পর্যন্ত ১২ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার সড়ক ১ থেকে সাড়ে ৪ ফুট উচ্চতার পানির নিচে তলিয়ে যানবাহন চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে। সিলেট-তামাবিল-জাফলং সড়ক ১ দশমিক ২০ কিলোমিটার ১ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। কানাইঘাটের দরবস্ত-কানাইঘাট-শাহবাগ সড়ক ৭ থেকে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার ১ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ৩য় থেকে ৫ম এবং ৮ থেকে ১৩তম কিলোমিটার পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটারে ১ থেকে ২ ফুট পানি উঠেছে। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রশিদপুর-লামাকাজি সড়ক ১৫ থেকে ১৭ তম কিলোমিটার পর্যন্ত ২ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ২ থেকে ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ-ছাতক সড়ক ১ থেকে ১২তম কিলোমিটার পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৫ পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৫ কিলোমিটারে ১ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় পানিতে তলিয়ে গিয়ে যান চলাবল বন্ধ রয়েছে। শেওলা সুতারকান্দি সড়কে ১ থেকে ৪র্থ কিলোমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ৫ থেকে ১ ফুট পর্যন্ত পানি উঠে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও (টুকেরবাজার) সড়কে ৫ থেকে ৯, ১১ ও ১২তম কিলোমিটারের মধ্যে ১ থেকে সাড়ে ৩ ফুট পর্যন্ত পানি উঠে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথের ৫৫ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে অনেক স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।