জহির সিকদার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রি হয়েছে। টিসিবি পণ্য বিক্রি করার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা তৈরি ও কার্ড প্রদান করা নিয়ে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সহায় সম্বলহীন দুস্থ পরিবারের বেশিরভাগ পরিবার কার্ড পায়নি । পেয়েছে অবস্থাপন্ন সচ্ছল পরিবারগুলো। সরেজমিন আশুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে টিসিবি পণ্য বিক্রয় কেন্দ্র ঘুরে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পুরুষদের লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের বেশিরভাগই অবস্থাপন্ন পরিবারের লোকজন বলে অভিযোগ করলেন দূর্গাপুর ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম নামে একজন নির্মাণ শ্রমিক। তিনি অভিযোগ করলেন এখানে প্রায়  অধিকাংশ  মানুষকে কার্ড দেয়া হয়েছে তাদের বেশির ভাগই অবস্থাপন্ন এবং সচ্ছল তাদের কার্ড পাওয়ার কোন কথা নেই অথচ আমার মতো দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ কার্ড পায়নি।

তিনি আরও অভিযোগ করলেন, ওয়ার্ড মেম্বারগণ পছন্দের ব্যক্তিদের অর্থের বিনিময়ে কার্ড দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ করলেন সদর ইউনিয়নের  আফজাল নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, যারা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে কার্ড নিয়ে টিসিবি পণ্য নেয়ার কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের বেশির ভাগ সচ্ছল এরা কিভাবে কার্ড পায়? অথচ এলাকার সত্যিকার সহায়সম্বলহীন অসহায় পরিবারগুলোর বেশির ভাগই কার্ড পায়নি।

একইভাবে নারীদের লাইনে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন কার্ডধারীকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, তাদের পাকা বাড়ি আছে অবস্থাপন্ন, তারা তারপরও টিসিবি পণ্যের কার্ড পেয়েছেন বিভিন্ন ওয়ার্ড মেম্বাররা দিয়েছেন বলে। তারা কেউই নাম বলতে রাজি হননি। এভাবে অনেক সচ্ছল পরিবার কার্ড নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনেছেন। অন্যদিকে সহায়সম্বলহীন অনেক অসহায় নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে, যাদের বেশির ভাগ কার্ড পায়নি। শরীফপুর ইউনিয়নের আকলিমা আক্তার জানান, তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। দুই সন্তান নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। তিনি জানান, মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চলে অথচ অনেক বার ধর্ণা দিয়েও কার্ড জোটেনি তার। তার ওয়ার্ড মেম্বার বলেছেন পরে দেবে। কিন্তু পরে আর তো কার্ড পাওয়ার সুযোগ নেই। একই কথা জানালেন সালেহা বেগম, মনি বেগম, লাইলি বেগমসহ অনেকেই। তাদের সবার অভিযোগ, তারা কার্ড পাননি অথচ যারা সচ্ছল টাকা পয়সার অভাব নেই তারা কার্ড পেয়েছেন। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আশুগঞ্জ উপজেলার তালিকায় পারিবারিক কার্ডগুলো দৃশ্যমান থাকলেও ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকার পরও উপকারভোগিরা তাদের কার্ড পায়নি। এদিকে ঐ তালিকা ধরে সরেজমিনে গিয়ে সদর ইউনিয়নের সুমনের সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায় তাকে ফোন করে জানানো হয় তার নামে কোন কার্ড নেই।

এছাড়া একই ইউনিয়নের আলমগীর মিয়া নামের অন্য একজনকে ফোন দিয়ে সমস্ত তথ্য নেবার পর বলা হয় আপনার নামে কার্ড হলে আপনাকে ফোনে জানানো হবে। পরবর্তীতে তাকে আর জানানো হয়নি এমনকি পণ্য দেবার সময় খোঁজ নিয়ে তার কার্ড পাওয়া যায়নি।কিন্তু ততক্ষণে পণ্য দেয়া হয়ে গেছে। জনৈক ব্যক্তি আরো জানান,তাকে ইউনিয়ন অফিস থেকে ফোন দেয়া হয়।তিনি ফোনে কত টাকা লাগবে জিজ্ঞেস করায় এক হাজার টাকা লাগবে বলে জানানো হয়।পরবর্তীতে চারশ ষাট টাকার তথ্য জেনে সকালে পণ্য আনতে গেলে তার নির্ধারিত কার্ড না দিয়ে পাশের আরেকজনেরটা দেয়া হয়।এছাড়াও সদর ইউনিয়নের জাবেদ মিয়া, মো: আমির হোসেন,আড়াইসিধা ইউনিয়নের মো: মিনহাজ উদ্দিন,মো: শাহজাহান মিয়া,আবু আব্দুল্লাহ,শরীফপুর ইউপির মো: জোনায়েত মিয়া,মো: সুমন মিয়া,মো: মুছা মিয়া,রুবিনা বেগম, সুলতান, তারুয়া ইউপির ইয়াছমিন হক , চরচারতলা ইউপির নাদিরা, নাছিমা,জায়েদা বেগমসহ বিভিন্ন জনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানা যায়, তাদের কার্ড গুলো অন্যদের দিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে চরচারতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফাইজুর রহমান স্বীকার করেন, অনেককে কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, অনেক পরিবার আছে যাদের কার্ড পাওয়া উচিত কিন্তু সেই পরিমাণ কার্ড না পাওয়ায় দেয়া সম্ভব হয়নি। অনেক হতদরিদ্র পরিবারকে কার্ড দেয়া হয়নি অথচ অনেক সচ্ছল পরিবার কার্ড পেয়েছে এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।এ বিষয়ে দূর্গাপুর ও সদর ইউপির চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কোন সাড়া মেলেনি। এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে