রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্টুরেন্ট স্থাপন ও নতুন করে হাঁটার রাস্তা বানাতে বিপুলসংখ্যক গাছ কাটা হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। উদ্যানের পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তের অনেকগুলো গাছসহ প্রায় শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তবে গাছগুলি এখন অন্যত্র সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। এদিকে উদ্যানে যেসব গাছ কাটা হবে সেগুলোতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে গাছ কাটা এখন বন্ধ থাকলেও শত শত গাছে আঁকা লাল চিহ্ন সবাইকে উদ্বীগ্ন করছে যে উদ্যানের বড় বড় সব গাছই কেটে ফেলা হবে। এই গাছ কাটা যাতে বন্ধ হয় সে জন্য লাল চিহ্ন দেওয়া সব গাছেরই নাম দেওয়া হচ্ছে একজন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র নামে। আর এই কাজটি করছেন গাছের ডাক্তার খ্যাত আহসান রনি। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেটে ফেলার জন্য লাল ক্রস এঁকে দেয়া বাকি গাছগুলো বাঁচাতে প্রতিটি গাছকে একেক জন খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা হচ্ছে।

বীর শ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতিক নামে আমরা নাকরণ করছি। কয়েক দশকের পুরনো এই গাছগুলো বঙ্গবন্ধুর ৭’ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদারদের আত্মসমর্পণ সহ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতির স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা জানতে পারছি স্মৃতিবিজড়িত এই গাছগুলো কেটে এখানে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট বা বিনোদন কর্ণার বানানোর চেষ্টা চলছে। এই গাছের ডাক্তার বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের স্বাধীনতা ও গৌরবের ধারক এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ধ্বংসের চেষ্টা অতীতেও হয়েছে, উদ্যানের অংশে বানানো হয়েছে শিশুপার্ক সহ ছোট বড় স্থাপনা। তাই আমরা গাছ কেটে উদ্যানে আর কোন কংক্রিটের স্থাপনা চাইনা। আমরা চাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে আমাদের স্বাধীনতা, বিজয় ও গর্বের স্মারক গুলো বেষ্টিত থাক সবুজ গাছে গাছে।

স্বাধীনতার ৫০’বছরেও আমরা এমন আরেকটি উদ্যান বানাতে পারিনি বরং নগরায়নের নামে ধ্বংস করেছি অনেক শ্যামলী নিসর্গ। আমরা নগরীর ফুসফুস খ্যাত এই উদ্যানটিকে আর বৃক্ষশুন্য হতে দিতে চাইনা। তার মতে, গাছগুলোকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা প্রতিটি গাছকে দেশের একেকজন বীর সন্তানের নামে নামকরণ করেছি। এই গাছগুলো শুধু গাছ তা না, এগুলো আমাদের স্মৃতির অংশ। ৭ই মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে এগুলি দাঁড়িয়ে আছে। কাজেই আত্মসমর্পণের অনেক স্মৃতি এই গাছগুলিকে ধারণ করে আছে। আমরা যেকোনো মূল্য যে কোনোভাবে গাছগুলি বাঁচাতে চাই। আমরা পাখির জন্য গাছপালাগুলি বাঁচাতে চাই। আমরা আমাদের ঢাকার ফুসফুসকে বাঁচানোর জন্য গাছপলাগুলিকে বাঁচাতে চাই। আমরা কংক্রীটের দেয়াল থেকে এসে বুক ভরা নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য গাছগুলো বাচাঁতে চাই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পার করেছি। কিন্তু আরেকটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বানাতে পারিনি। অপরিকল্পীতভাবে মূল যে পরিকল্পনা সেটার বাহিরে এসে এখানে গাছ কাটা হচ্ছে, সেটি আমরা চাই না। তবে গত ৫’ই মে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে মন্ত্রণালয় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘কিছু গাছ’ কাটা হলেও প্রায় এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উদ্যানের গাছ কাটা নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে চলছে প্রতিবাদ। ইতিমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা বন্ধ করে রেস্তোরাঁ বা দোকান স্থাপনের কার্যক্রম বাতিল চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরমস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতবর্ষী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের আশ্রয়স্থল গাছগুলো না কাটতে এবং যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, সেই জায়গায় একই প্রজাতির ৩ গুণ গাছ লাগানোর দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে