বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুলনা-কলকাতা রুটে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস-২’ ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেছেন।
একই সঙ্গে দুই দেশের সরকারপ্রধান কলকাতা থেকে যশোর ও খুলনা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত একটি বাস সার্ভিসেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।গতকাল শনিবার দুপুরে দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি এই ট্রেন ও বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। এ সময় সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন।
২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ঢাকা-কলকাতা রুটে প্রথমবারের মতো মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এদিকে দুই প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পরীক্ষামূলকভাবে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস-২’ ট্রেনটি কলকাতার উদ্দেশে বেনাপোল ছেড়ে যায়। এ সময় বেনাপোল রেলস্টেশনে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, খুলনা থেকে ৫টি বগি নিয়ে পরীক্ষামূলক এ যাত্রায় কোনো সাধারণ যাত্রী ছিল না। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ জন ব্যক্তি এ ট্রেনের যাত্রী হন। এর নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান যন্ত্রকৌশল প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন।
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, খুলনা ও কলকাতার মধ্যে নিয়মিত ট্রেন যোগাযোগ বাংলাদেশ ও ভারতের ‘কানেক্টিভিটিতে’ নিঃসন্দেহে বড় একটি মাইলফলক। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এ রুটে ট্রেন সার্ভিস চালু ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তরকারী একটি সিদ্ধান্তের ফলে ৫২ বছর পর আবার চালু হলো কলকাতা-খুলনার মধ্যে ট্রেনের এই সেবা। খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস বেশ জনপ্রিয় হবে বলে মনে করেন এ মন্ত্রী।
এদিকে দিল্লিতে বাস সার্ভিসের উদ্বোধনের পর কলকাতার রাজ্য সচিবালয় নবান্নর সামনে প্রস্তুত রাখা দুটি বাস কলকাতার কর্মকর্তারা সবুজ পতাকা নেড়ে এ সেবার সূচনা করেন। এ সময় কলকাতায় উপস্থিত ছিলেন পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি ও রাজ্যের পরিবহন সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বাস দুটি কলকাতা-বেনাপোল-যশোর-খুলনা হয়ে ঢাকা পৌঁছাবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-কলকাতা রুটে আগে থেকেই চালু রয়েছে আরেকটি ট্রেন ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’। এটি সপ্তাহে চার দিন চলাচল করে। অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে প্রথম কলকাতা-ঢাকার মধ্যে যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হয়। ২০১৫ সালে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলার মধ্যে চালু করা হয় যাত্রীবাহী বাস চলাচল। এবারে শুরু হলো কলকাতা-খুলনা-ঢাকার মধ্যে যাত্রীবাহী বাস চলাচল।
যশোর থেকে আলমগীর কবীর জানান: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রেন ও বাস সার্ভিস চালুর মধ্যদিয়ে বাস্তবায়ন হলো আরো একটি স্বপ্নের। ট্রেনটির উদ্বোধন উপলক্ষে বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে সব ধরনের আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল জোরদার।
ট্রেন উদ্বোধনী আনুষ্ঠানে বেনাপোল রেলস্টেশনে ভিডিও কনফারেন্সস্থলে উপস্থিত ছিলেন, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান, যশোর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন, বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস ছালামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সহ¯্রাধিক নেতাকর্মীরা।
সকাল ৮টা ১০ মিনিটে যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ খুলনা থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বেনাপোলে এসে পৌঁছায়। সকালে কলকাতার উদ্দেশে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়া প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ ট্রেনটিকে বিদায় জানান খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার কাজী আমিরুল ইসলামসহ হাজারো উৎসুক জনতা। সকাল ঠিক ৮টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি খুলনা স্টেশন ত্যাগ করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনটি চালু হওয়ায় খুলনাসহ যশোরাঞ্চলের লোকের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। খুলনা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় তারা যেতে পারবেন কলকাতায়। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে রোগী, পর্যটক, ব্যবসায়ীরা কলকাতায় পৌঁছাতে পারবেন। এতে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেরও সম্প্রসারণ ঘটবে। গতিশীল হবে দুই দেশের অর্থনীতির চাকা। এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চালু হওয়া বাস সার্ভিসকে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) পক্ষে এ বাস সার্ভিসটি এবার বাংলাদেশের গ্রিন লাইন পরিবহন পরিচালনা করবে।এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদল শুক্রবার বিকেলে বেনাপোল দিয়ে কলকাতায় যায়। বেনাপোল চেকপোস্টে গ্রিন লাইনের এ বাসটি পৌঁছালে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুস সালাম, বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক আমিনুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিনিধিদলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব চন্দন কুমার দে। এ বাস চলাচলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ উপকৃত হবেন। রোগী ও বৃদ্ধরা সরাসরি বাসে করে কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন। বর্তমানে ঢাকা-কলকাতা, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা, কলকাতা-খুলনা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। কলকাতা-খুলনা-ঢাকা হলো এ ধরনের চতুর্থ সরাসরি বাস সার্ভিস।
নিউজ ডেস্ক, বিডি টাইম্স নিউজ