কাজী বর্ণ উত্তম।। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, ইন্টারনেটের জন্ম, একমাত্র পরাশক্তি হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বত্র সুযোগ,আমেরিকান ব্যবসা গুলি উৎপাদন খরচ কমাতে স্থানান্তরিত, সেই দেখাদেখি পশ্চিমা দেশগুলোও, এভাবেই বিশ্বায়নের অবিশ্বাস্য প্রসার ঘটল।যার সিংহভাগ সুযোগ পেলো চীন। উদাহরণ স্বরূপ ১৯৮০ সালে চীনের মোট জিডিপি নয় হাজার কোটি ডলার থেকে থাকে আজ এটি বারো লক্ষ হাজার কোটি ডলার। বিশ্ব এত অল্প সময়ে এত বিশাল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কখনও দেখেনি। আজকের চাইনিজ কমিউনিস্টরা মাওদের ধরণের সাম্যবাদের কাছে নেই। চায়নার শাসকেরা এটিকে “একটি চীনা চরিত্রসহ সমাজতন্ত্র” বলে অভিহিত করেছেন। এটি একটি গতিশীল পুঁজিবাদী বাজার হিসাবে উপস্থিত বলে মনে হচ্ছে, তবে কঠোর নিয়ম এবং সামাজিক বিধিনিষেধের সাথে এটি এক ধরনের একনায়ক শাসন ব্যবস্থা বা স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা। চীন এর রাষ্ট্রায়েত্ত ব্যবসায়িক বিকাশনে একদিকে প্রযুক্তি অন্য দিকে কয়েকশো বিলিয়ন পশ্চিমা ডলার ব্যয় হয়েছে ১৯৯০ বা তার পরবর্তী সময় থেকে।
ঐতিহাসিক ভাবে চীনের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে, আছে মাও সেতুং এর সমাজতন্ত্রের ইতিহাস। আমেরিকা আর তার মিত্র পশ্চিমারা কি ভেবেছিল চীন দিন কে দিন তাদের মত হবে? উত্তরটা তারাই দিতে পারবে। অর্থনৈতিক ভাবে মজবুত চীনের ভিতরের বাসনা পৃথিবী প্রকাশ্যে জানলো, চীনের প্রধান নেতা শি জিনপিং মূলত ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়া এবং কাজাখস্তানের সরকারী সফরের সময় কৌশলটি ঘোষণা করেছিলেন। “বেল্ট” রাস্তা ও রেল পরিবহনের ওভারল্যান্ডের রুটকে বোঝায়, “সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট” বলে যদিও “রাস্তা” বলতে সমুদ্রের পথগুলি বা একবিংশ শতাব্দীর মেরিটাইম সিল্ক রোডকে বোঝায়। চীন সরকার এই উদ্যোগকে “আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নত করার এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আলিঙ্গনের জন্য একটি দাবী” হিসাবে অভিহিত করেছে। প্রকল্পটির একটি লক্ষ্যমাত্রা সম্পন্ন হওয়ার তারিখ রয়েছে ২০৫০ সাল, যা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ১০০তম বার্ষিকীর সাথে মিলে যায়। পর্যবেক্ষকরা এটিকে চীন-কেন্দ্রিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বৈশ্বিক বিষয়ে চীনা আধিপত্যের চাপ হিসাবে দেখছেন।
চীন কীভাবে শ্রীলঙ্কার একটি সমুদ্র বন্দরে কে নিতে পেরেছিল। হামবানটোটা, শ্রীলঙ্কার সমুদ্র বন্দরটি – শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপাকসা উচ্চাভিলাষী বন্দর প্রকল্প যা সমীক্ষায় বলা হয়েছিল কখনোই লাভ জনক হবে না, যে কারনে ভারতসহ অন্যরা যখন মুখ ঘুরিয়ে নেয় চীন তখন নানা শর্তের ফাঁদে এগিয়ে আসে। যার শেষ পরিনতি ২০১৫ তে ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কান সরকার বাধ্য হয়ে সমুদ্রবন্দর টি নিরানব্বই বছরের লিজ এবং এর আশেপাশের পনের হাজার একর জমি হস্তান্তর করেছিল চীনের কাছে। গভীর পানির বন্দরটি চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড” উদ্যোগে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী প্রধান শিপিং রুটের নিকটে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ উপকূল বরাবর বন্দর টি।চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের তীর থেকে কয়েক শ মাইল দূরে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামরিক নৌপথ ধরে একটি কৌশলগত ঘাটি তৈরিতে সাহায্য করেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ, কৌশল গতভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মূল সামরিক নৌপথ এবং বাণিজ্যিক রুটে অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য হাম্বানটোটা বন্দর প্রকল্প চীনের আগ্রাসী পদ্ধতির একটি অংশ। চীন মূল ভূখণ্ড থেকে আর্কটিক মহাসাগর, বাল্টিক সাগর এবং অন্যান্য দূরবর্তী নৌপথে অন্বেষণ ও প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এখন পর্যন্ত চীন পয়ত্রিশ টি বন্দরকে তহবিল সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে মূল বন্দরগুলি হ’ল গবাদার, দক্ষিণ চীন সমুদ্র অ্যাটলস, সেচেলস, ওয়ালভিস বে, সাও টম এবং প্রাইসাইপ, প্রিয়েস এবং জিবুতি । এর সাথে সাথে, চীনের “ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড” উদ্যোগ বিশ্বের পয়ষট্টি শতাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে ৬৮ টি দেশ জুড়ে রয়েছে।
বন্দর নির্মাণের জন্য চীনাদের সঙ্গে করা দশ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করেছেন তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতি জন মাগুফুলি। তার পূর্বসূরি সাবেক প্রেসিডেন্ট জাকায়া কিকওয়েত এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।চুক্তির যে শর্ত ছিলো তার তীব্র সমালোচনা করেন তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘চীনাদের এই শর্ত কেবল মাত্র মাতাল লোকই গ্রহণ করতে পারে।’স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাগমায়োতে নৌবন্দরটি তৈরির জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে চুক্তি করেন তানজানিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি কিকওয়েত।যাতে শর্ত ছিলো, ত্রিশ বছরের মধ্যে তানজানিয়াকে লোন পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় বন্দরটি চীনা বিনিয়োগকারীদের হাতে চলে যাবে। আর যদি এই সময়ের মধ্যে লোন পরিশোধ করাও হয় তাহলে নিরানব্বই বছরের জন্য লিজ নেবে চীনারা। চীনা ও কিকওয়েত প্রশাসনের করা এই চুক্তিতে আরও শর্ত ছিলো, এই সময়ের মধ্যে বন্দরে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে তানজানিয়ান সরকারের বাধা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা থাকতে পারবে না।চীন প্রায়ই আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে এসব ঋণের ফাঁদ পাতে। এর মাধ্যমে তারা দরিদ্র দেশগুলিকে তাদের জালে জড়িয়ে ফেলে।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ক্রমেই কমতে থাকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হঠকারী সিদ্ধান্তে অনেকটাই হতবাক হতে থাকে মিত্র দেশগুলো। কোনো ঘটনা ছাড়াই মিত্র দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ নির্বাক করেছে পুরো বিশ্বকে। ন্যাটোতে মিত্র দেশগুলোর পাওনা পরিশোধের পুনঃপুন তাড়া, হুমকির মুখে ফেলেছে জোটকেই। কুর্দি ইস্যুকে কেন্দ্র করে, তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়াতে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, সংঘাত থামানো গেলেও দেশ দুটির মধ্যে দূরত্ব কিছুটা হলেও সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণ অনেকটাই হতবাক করেছিল সদস্য দেশগুলোর। নাফটা চুক্তি বাতিল করে দীর্ঘদিনের মিত্র কানাডা, মেক্সিকোর সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার, ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার, একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা, ইউনেস্কো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার ক্রমেই সারা বিশ্বব্যাপী দেশটির প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে। ট্রাম্পের ‘মেইক আমেরিকা, গ্রেট এগেইন’ স্লোগান বাস্তবায়নে শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা প্রাধান্য পেয়েছে। সারা বিশ্বব্যাপী সামাজিক, সামরিক যে সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র করত তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ফলে প্রেশার সৃষ্টিকারী গ্রুপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমেছে।
চীনের বিরুদ্ধেই করোনা নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠছে।চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশায় অবস্থিত ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজির ফাঁস হওয়া এক নথি থেকে জানা যায়, চীনে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন,যা সরকারি হিসাবের চেয়ে সাড়ে ছয় গুণেরও বেশি। আমেরিকা চীনে চিকিৎসক দল পাঠিয়ে ভাইরাসের উৎস খোঁজার কথা বললেও সে পথে যেতে নারাজ বেইজিং। করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে চীনের স্বচ্ছতা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়া বলে এটি খুব উচ্চপর্যায়ে স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা করা দরকার।করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবির মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার চার বৃহৎ প্রতিষ্ঠান থেকে গরুর মাংস আমদানিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন।বিবাদের জেরে ইতিমধ্যে দুই দেশের প্রধান প্রধান কৃষি পণ্যের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। ক্ষুব্ধ চীন- অস্ট্রেলিয়ার এমন দাবির ফলে অসি বার্লি আমদানিতে আশি শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করে বেইজিং।
গতবিশ বছরে ‘সার্স, অ্যাভিয়ান ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু এখন কোভিড-১৯, সব সময় সারা বিশ্বকে স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সামনে দাঁড় করিয়েছে চীন।’ তৃতীয় প্লেগ মহামারি: ১৮৫৫ সাল চীন থেকে এর সূত্রপাত হয়েছিল।স্প্যানিশ ফ্লু: ১৯১৮ সাল, এই মহামারিতে বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। পঞ্চাশ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল, তখনও পেনিসিলিন আবিষ্কার হয়নি, স্প্যানিশ ফ্লুর উৎপত্তি স্থল ছিল চীনে।এশিয়ান ফ্লু: ১৯৫৭ সাল হংকং থেকে এই রোগ চীনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে ছড়ায়। এ কারণে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে। ১৯৫৮ সালের শুরুর দিকে এশিয়ান ফ্লু দ্বিতীয়বারের মতো মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় এশিয়ান ফ্লুতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গিয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ। পরে ভ্যাকসিন দিয়ে ওই মহামারি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছিল।
সারা পৃথিবীতে টাকা স্থানান্তরের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সুইফট। এটি এক ধরনের বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম। বেলজিয়ামভিত্তিক সুইফটের ভূরাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হওয়ার কথা। কিন্তু এই স্থানান্তর হয় ডলারের মাধ্যমে, নিউইয়র্ক হয়ে। এর বদৌলতে অর্থপ্রবাহের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপরিসীম প্রভাব। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে। যেমন ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়াকে এই ব্যবস্থা ব্যবহার করতে দেয় না যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানি ব্যাংকগুলোকেও এই ব্যবস্থা ব্যবহার করতে দেয় না যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের ওপর অবরোধ কার্যকর করে এই প্রক্রিয়ায়। আবার সুইফট যদি যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনতে না চায়, তাহলে তার ওপরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয় তারা। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ভেঙে ফেলতে পারবে না। তবে চীনা কোম্পানিগুলো ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। ভিসা ও মাস্টারকার্ডের মতো মার্কিন প্ল্যাটফর্ম যাতে ব্যবহার করতে না হয়, সে জন্য চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ডিজিটাল ওয়ালেট তৈরি করছে। সেখানে রক্ষিত ই-টাকা দিয়ে সবই করা যাচ্ছে। সে জন্য ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এর মাধ্যমে চীনের সমান্তরাল ডিজিটাল ইকো–সিস্টেম তৈরি করছে। চীনারা গত বছর উনপঞ্চাশ লাখ কোটি ডলার লেনদেন করেছে এই মোবাইল মাধ্যমে। এই মোবাইল অর্থ স্থানান্তরের চীনা কোম্পানি টেনসেন্ট ও অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল এত বড় হয়ে গেছে এরা এখন বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশের এমএফএস কোম্পানি বিকাশেও বিনিয়োগ করেছে অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়ালের আলিবাবা। আলি পে এখন ৫৬টি দেশে গৃহীত হয়। কোভিড-১৯-এর কারণে তারা আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
টিকটকের বিরুদ্ধে গোপনে ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ এবং তা চীনে প্রেরণের অভিযোগ রয়েছে। অ্যাপটিকে “চীনা নজরদারি সফ্টওয়্যার অন্তর্ভুক্ত” বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সম্মতি ছাড়াই ব্যবহারকারীদের ডেটা সংগ্রহের অভিযোগে টিকটকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েচ্ছে।ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারাল আদালতে দায়ের করা একটি প্রস্তাবিত ক্লাস-অ্যাকশন মামলা অনুযায়ী, টিকটোক, ১৫-সেকেন্ডের ভিডিওগুলির জন্য বিশিষ্ট, অবৈধভাবে এবং গোপনে ব্যক্তিগতভাবে চিহ্নিতযোগ্য ব্যবহারকারীর ডেটা প্রচুর পরিমাণে সংগ্রহ এবং তা চীনে প্রেরণ করছে।টিকটোক ডাউনলোড করেছেন তবে মামলা অনুসারে কোনও অ্যাকাউন্ট তৈরি করেনি। মাস কয়েক পরে, তিনি আবিষ্কার করলেন টিকটোক তার জন্য একটি তৈরি করেছে।তিনি অ্যাপটি ব্যবহার করে পাঁচ বা ছয়টি ভিডিও তৈরি করেছেন তবে ভিডিওগুলি কখনও সংরক্ষণ বা প্রকাশ করেননি। তবুও, টিকটোক গোপনে ভিডিওগুলি এবং তার অজান্তেই তার ডেটা নিয়েছিল এবং মামলা অনুযায়ী তথ্যটি চীনের সার্ভারগুলিতে প্রেরণ করেছে।মোকদ্দমা অনুসারে টিকটোক তার ব্যবহারকারী এবং তাদের ফোন এবং সামাজিক নেটওয়ার্ক পরিচিতি, ইমেল ঠিকানা, আইপি ঠিকানা, অবস্থান এবং অন্যান্য তথ্য সহ তাদের ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। তারা ব্যবহারকারীদের ডেটা স্থানান্তর করছে তা গোপন করতে সংস্থাটি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি যখন কোনও ব্যবহারকারী অ্যাপটি বন্ধ করে দেয় তখনও এটি বায়োমেট্রিক এবং ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে।
হংকং ইস্যুতে ব্রিটেনের হস্তক্ষেপের ফল ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। চীনের পার্লামেন্টে পাশ হওয়া হংকং ‘জাতীয় নিরাপত্তা বিল’ নিয়ে ব্রিটিশ নেতারা বলেন বিতর্কিত হংকং ‘জাতীয় নিরাপত্তা বিল’ কার্যকর হলে হংকংবাসীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ব্রিটেন।ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ডমিনিক রাব হংকংয়ের ওপর চীনের ‘আধিপত্য বিস্তার’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আইনটি পুনরায় বিবেচনা করে দেখার জন্য বেইজিংকে আহ্বান জানান।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, শুল্কের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পায় হংকং। আর এই সুবিধাগুলো পরোক্ষভাবে ভোগ করে চীন।হংকংকে দেওয়া কী কী ধরনের সুবিধা খারিজ করা হচ্ছে সে বিষয়ে ট্রাম্প জানান, প্রত্যর্পণ চুক্তি, প্রযুক্তি সহায়তা, রফতানি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে হংকংকে যে সব সুবিধা দেওয়া হতো তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।হংকং ছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া চীনা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা।চীনের বিমানসংস্থার বিমানগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথে যাওয়া আসার সময় বাধা দেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সেই লক্ষে ট্রাম্প প্রশাসন একটি পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে।
তাইওয়ান জোর দিয়ে বলছে যে, এটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। চীনের সার্বভৌমত্ব দাবিমুক্ত রাষ্ট্র তাইওয়ান। কমপক্ষে ১৫টি দেশ এই দেশটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং দেশটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখছে। তবে চীন বলেছে, তাইওয়ান চীনের একটি ‘বিচ্ছিন্ন প্রদেশ’।
আর মাত্র ১৭-১৮ কিলোমিটার। ওইটুকু দূরত্ব জুড়ে নিতে পারলেই একেবারে কারাকোরাম পাসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করবে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। ঐতিহাসিক গিরিপথের ও পারেই ইয়ারকন্দ, কাশগড়, খোটান, শাহিদুল্লার মতো একের পর এক ঐতিহাসিক জনপদ। সুবিশাল শিনচিয়াং প্রদেশকে সুরক্ষিত রাখতে এই জনপদগুলোর প্রত্যেকটা চিনের জন্য সামরিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চওড়া এবং মসৃণ রাস্তা বানিয়ে ভারতীয় বাহিনী হু হু করে পৌঁছে যাবে সেই এলাকার দরজা পর্যন্ত, তা কি ড্রাগনের পক্ষে চুপচাপ মেনে নেওয়া সম্ভব! অতএব আবার পুরনো কৌশল। সীমান্ত উত্তপ্ত করে ভারতের কাজ আটকে দেওয়া।লাদাখে চীনের সঙ্গে বিরোধ শুরু হতেই ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে। অথচ বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, ইস্পাত, গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে কাগজ, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্যের মতো বহু জিনিস চীন থেকে নিয়মিত আমদানি করে ভারত। আমদানি হয় ওষুধ এবং ওষুধ তৈরির বিভিন্ন উপাদান। সেটা বন্ধ হয়ে গেলে ওষুধের দাম কী হারে বাড়তে পারে, তার সামান্য আভাস দিয়েছে করোনা লকডাউন। যদিও আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পে এবার থেকে দেশেই ওষুধের উপাদান তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে ভারত সরকার। তাতে বিদেশি বিনিয়োগের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না সেটা হচ্ছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে গেলে ভারতই বেকায়দায় পড়বে।যেহেতু ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলি পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৮–১৯ সালে প্রায় উনিশ হাজার কোটি টাকার ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করেছে ভারত।
বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, চীনের সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান। চীনা সরকার প্রথম দিকে কোভিড–১৯-এর প্রাদুর্ভাব ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তার স্বচ্ছতা প্রশ্নের মুখে।এক দেশের উপর সকল ধরনের কাচামালের নির্ভরতা কমানোর তাগিদ দিয়েছে করোনা কালে বিশ্বকে। করোনা ভাইরাসের কারণে চীন ছাড়ছে সনি ও টয়োটারা। সেই সঙ্গে চীন থেকে ব্যবসা সরিয়ে নিতে আগ্রহী জাপানের গাড়ি উৎপাদনকারী টয়োটার যন্ত্রাংশ তৈরির কোম্পানি টয়োটা বশোকু করপোরেশন, ইলেকট্রনিক জায়ান্ট শার্প ও প্যানাসনিক, ঘড়ি উৎপাদনকারী সিকো ও ক্যাসিওর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো।এরই মধ্যে জাপান চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে ২২০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ (প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা) একটি তহবিল গঠন করেছে। যেসব জাপানি কোম্পানি চীন ছাড়বে, তাদের সহায়তা দেয়া হবে এই তহবিল থেকে।৩৪টি জাপানি কোম্পানি ইতোমধ্যে কারখানা সরিয়ে চীন থেকে অন্য দেশে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে খবর এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানিগুলো চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে মরিয়া। মার্কিন প্রশাসনও এই ক্ষেত্রে সক্রিয়। যেমন ১৬ মে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন। এরপরই ইন্দোনেশিয়া জাভায় চার হাজার হেক্টর জমি প্রস্তুত করা শুরু করেছে। চীনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদকদের বেশির ভাগ ইন্দোনেশিয়ায় কারখানা সরিয়ে নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কে ও মোড় নিতে দেখা যাচ্ছে। পণ্য আমদানিতে চীনের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক দূরত্ব এখনই ঘটানো সম্ভব নয়, তবে চীনকে নিয়ে ইউরোপ যে অর্থনৈতিক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল, এখন আর সেটি নেই। কিছুদিন আগে ও ইউরোপিয়ানরা চেয়েছে চীনের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের(ইইউ) সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক—উভয় দিক থেকে বাড়ুক। কিন্তু এখন সেই অবস্থা পাল্টে গেছে। করোনার পরবর্তী সময়ে চীন আর বিশ্বের কারখানা থাকছে না। বড়রা উৎপাদন সক্ষমতার একটা অংশ চীনে রেখে বাকিটা অন্য দেশে সরিয়ে নেবে,না পুরাটাই সরিয়ে নিবে,নাকি বর্তমান অবস্থায় থাকবে-সামনের দিন গুলোতে তা আস্তে আস্তে আরও পরিস্কার হবে।
লেখক : কাজী বর্ণ উত্তম, লেখক ও কলামিস্ট
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ