শিল্প সংস্কৃতি শব্দটি কানে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের দেশের এক শ্রেনীর মানুষ ধরেই নেয় ওটা আর তার বিষয় নয় ওটা কোন বাংলার, ইংরাজির শিক্ষক বা কোন সমাজসেবী ডাক্তার, উকিল, সংস্কৃতি কর্মির বিষয়। আসলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রান্না-বান্না, পোশাক,ভাষা, গান, কবিতা, ছড়া,ছবি আঁকা, কৃষি কাজ সহ সকল ধরনের পেশা, প্রযুক্তির ব্যবহার, ধর্ম পালন ও শিল্প সংস্কৃতির অংশ বিশেষ। আপনার জীবনের চুলের ধরন, কথা বলার ভংগিমা সব সব কিছুই শিল্প সংস্কৃতির অংশ। যাকে সুধি জনেরা বলেন মানবীয় বৈশিষ্ট্যের উৎকর্ষ সাধন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কালে মানুষ কতগুলো শব্দের সাথে আজ বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে যেমন- লকডাউন, কোয়ারান্টাইন, আইসোলেশান, ইমিউনিটি, মাস্ক, গ্লাভস শব্দগুলো ইংরেজি হলেও চলতি ভাষায় বেশ ব্যবহার হচ্ছে। যা আগামীতে বিদেশি শব্দ হিসেবে বাংলা ভাষায় আত্তীকরণ হবে।

আমরা এক সময় শ্লোগান দিতাম “অন্ন-বস্ত্র -শিক্ষা-বাসস্থানের” নিশ্চয়তা চাই। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে চিকিৎসা বিজ্ঞান কত প্রয়োজন, কত প্রয়োজন পরিবেশ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার তা আজ মানুষ প্রতি সেকেন্ডে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তাই ধরেই নেওয়া যায় অন্ন-বস্ত্র -শিক্ষা-বাসস্থানের সাথে যোগ হবে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিবেশ প্রকৃতির নিশ্চয়তা। যা আজ মানবাধিকারের সার্বজনীন অংশ বা নিশ্চয়তার জন্য আন্দোলন করবে। এখানে লক্ষণীয় বৈশ্বিক শব্দটি -কারণ ভাইরাস সংক্রমণে কোন নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। এরই মধ্যে গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশে উৎপাদন ব্যবস্হাপনা নিয়ে কথা উঠেছে।

করোনা কালে সংক্রমণ রোধে চুল কাটা একটা নতুন সমস্যা। তাই অনেকে পুরাপুরি চুল ফেলে ন্যাড়া হয়েছেন, আবার অনেকে নিজ বাসায় একে অপরের সাহায্যে চুল কাটছেন। মেয়েরাও রুপ চর্চা শুরু করেছে বাসাতে কারণ সেখানে ও বিউটি পার্লার এ যাওয়া হচ্ছে না।

” রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! সারাটা দিন খেলা,
এ যে বড় বাড়াবাড়ি, কাজ আছে যে মেলা।’
‘কাজের কথা জানিনে ভাই, লাঙ্গল দিয়ে খেলি,
নিড়িয়ে দেই ধানের খেতের সবুজ রঙের চেলি।”

-পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের রাখাল ছেলের পরিবর্তনের আগমনের বার্তা আজ। এক দিকে সামাজিক দূরত্ব করোনা কালে আর এক দিকে বেশ কয়েক বছর কৃষি খাতে শ্রমিক সংকট বাংলাদেশে।বিশেষ করে ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না বলে পত্রিকায় খবর হচ্ছে। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে চারা রোপণ হতে শুরু করে উৎপাদন, ধান উঠানো, মাড়ানো পর্যন্ত আমূল পরিবর্তন আসবে।আগামীতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে কৃষি কাজে তুলনামূলক কম মানুষের প্রয়োজন হবে।গ্রামের অনেকে আবার কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে তখন নতুন করে শহরমুখী হবে এই মানুষ গুলো। তাই সরকারের এখনই উচিত হবে গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করা।

হাত ধোয়ার প্রচলনটা আজ বাসা বাড়িতে দোকানে, অফিসে, বড় বড় হাজার রকমারির মলে সহ মোটামুটি সর্বস্তরে প্রচলন শুরু হয়ে গেছে। পোশাকে নতুন সংযোজন মুখে মাস্ক হাতে গ্লাভস।

রান্না-বান্না খাওয়া-দাওয়া বাঙালির সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের। বাঙালি খেতে যেমন ভালোবাসে আবার আড্ডায় খাবারের গল্প ছাড়া চলেই না। মাছে ভাতে বাঙালি ডাল,মাংস, লুচি, পরাটা,বিরিয়ানি সহ বহু খাবার তার খাদ্য তালিকায় সংযোজন করেছে। করোনা কালে বাসায় নানান মিষ্টি বানানোর এক প্রতিযোগিতা লক্ষণীয়। বিশেষ করে যে মিষ্টি গুলো আগে হোটেলে রেস্তোরাঁ থেকে আনা হত। এই ধরুন দই, রসগোল্লা, কালো জাম, চলছে জিলাপি বানানোর সে এক মহা কাব্যিক পরমানন্দের উৎসব।

একটি ডাচ রেস্তোরাঁর গল্প। করোনা কালেও নিজেদের ব্যবসা চালু রাখতে হাজির করেছে নতুন একটি ধারণা। প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তাদের জন্য তৈরি করেছে আলাদা ছোট ছোট কেবিন। সেটা আবার রেস্তোরাঁর মূল ভবনের বাইরে। খোলামেলা জায়গায় কাচে ঘেরা ওই কেবিনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুই থেকে তিনজন বসতে পারবে। কাটাতে পারবে আনন্দঘন সময়,খেতে পারবে মজার মজার পছন্দের সব খাবার।এর কর্মীরা হাতে গ্লাভস, মুখে স্বচ্ছ ফেস শিল্ড ব্যবহার করে খাবার পরিবেশন করছেন। মানা হচ্ছে সামাজিক দূরত্বও। ইটেন নামে রেস্তোরাঁটি নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে এভাবেই নতুন বিশ্বকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে ও আগামীতে এ রকম রেস্তোরাঁ দেখা যাবে হয়তো।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শত চেষ্টা করেও পারেনি বাঙালির সংস্কৃতিতে বাঁধা দিতে। চির চঞ্চল ঝর্ণার মত উদ্যাম বাঙালি করোনা কালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যার যা প্রতিভা আছে তা ব্যক্ত করেছেন, পরিস্ফুটিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক প্রতিভা। করোনা ইসু নিয়ে ছোট ছোট নাটিকা তো লেগেই আছে। চলুন একটু কাব্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করি বাঙালি সোসাল মিডিয়ায় কি করছে?-

“পাখির কিচিরমিচির ছন্দ লয়ে,
ভোরের নির্মল বাতাসে,
ওই বুঝি, সূর্য ওঠে রে,
খেয়ালি মনের কথা গুলি কে,
ওই দূর আকাশে, উড়ায় কে রে।

খেয়ালি মনের, মেঘের ও ভেলা তে,
ভাসচ্ছে, সোসাল মিডিয়া তে
হচ্ছে আপলোড, জোনাকির আলো রে,
খোলা জানালা, মন পাখি রে,
উড়তে মানা নেই, লকডাউনে।

খেয়ালি মনের, মেঘের ও ভেলা তে,
গাইছে গান কবিতা আর আবৃত্তি রে,
আঁকছে ছবি জল ও তেলে,
পিছিয়ে নেই অভিনয় তে,
ঘন্টার তালে তালে, সোসাল মিডিয়া তে।

খেয়ালি মনের, মেঘের ও ভেলা তে,

কলম হাতে, লিখছে গল্প আর ছড়া রে,
র্কাটুন আর ব্যঙ্গো তে,
ভাসছে মনের আনন্দে, সোসাল মিডিয়াতে।

বাঁধা দিচ্ছে আড্ডা দিতে, সংক্রমণ রোধে,

বাঙালি যে আমি, আড্ডা বাজ,
থাকবো না কো চুপটি মেরে,
শুরু হল আড্ডা বাজি,
সোসাল মিডিয়ায়, গ্রুপে গ্রুপে।

পিছিয়ে নেই সংগঠন গুলো,
চিত্র তো একটু ভিন্ন,
চলছে পালন, পঞ্জিকা ধরে, সোসাল মিডিয়া তে,
হচ্ছে গান আবৃত্তি, তবলার তালে নৃত্য রে
দূরন্ত বাঙালির সংস্কৃতি তে, বাঁধ ভাঙা জল যে,
করোনা তুমি, পারো নি থামাতে
রবীন্দ্রনাথ নজরুল মাইকেলের বাঙালি কে।।

লেখক : কাজী বর্ণ উত্তম, লেখক ও কলামিস্ট
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে