দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা আর সহকর্মীদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হলেন, বর্ষিয়ান রাজনীতিক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ সংসদ সদস্যরা। এরআগে তার মরদেহ নেয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোররাতে মারা যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। আগামীকাল বিকালে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে নিজ গ্রামে হবে তার শেষকৃত্য। আওয়ামীলীগ নেতা সংবিধান প্রনয়ন কমিটির সদ্স্য, কিংবা সাবেক মন্ত্রী নানা ভাবেই সংজ্ঞায়িত করা যায় তাকে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তার পরিচয় একজন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এই নেতা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। জীবনভর যিনি আলোচনায় ছিলেন সুবক্তা ও স্পষ্টভাষি হিসেবে। অসুস্থ্য ছিলেন বেশ কিছুদিন ধরেই শুক্রবার ভর্তি করা হয় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে শনিবার নেয়া হয় সিসিইউতে। পরে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। সেখানেই পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন এই নেতা।

তার মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও সুহ্রদরা। শোকাহত স্বজনদের চোখেমুখে তখন কেবলই হতাশা। সকাল নয়টার দিকে সুরঞ্জিতের মরদেহ নেয়া হয় তার জিগাতলার বাসভবনে। সেখানেও ছিল শুভানুধ্যায়ীদের ভিড়। সুরঞ্জিতের মৃত্যুতে তার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছ। তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সোমবার এখানেই শেষকৃত্য হবে প্রয়াত এ নেতার।

 এক নজরে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তঃ

পার্লামেন্টারিয়ান শব্দটি উচ্চারিত হলেই, সবার আগে নাম আসে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। কেউ কেউ তাকে বলেন, সংসদ বিষয়ক অভিধান। সংসদে তার বুদ্ধিদীপ্ত বক্তব্যের বিপরীতে পাল্টা যুক্তি দেয়া ছিলো, বেশ কঠিন। দেশের রাজনীতিতেও তার ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য। দুর্নীতির অভিযোগে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সুরঞ্জিত সেনের সরে যাওয়াও ছিল, দেশের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।

সংবিধানের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা থাকলেই কেবল দৃঢ়কণ্ঠে এমন কথা বলতে পারেন সেই সংবিধানেরই প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি পারতেন। সেজন্যই তিনি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সংবাদ সম্মেলন থেকে সংসদ পর্যন্ত, কোথাও তার কণ্ঠের দৃঢ়তা কমতি ছিলো না।
নিজ দলের সমালোচনা করতেও ছাড়তেন না। আর তার সূচারূ বক্তব্যে কারণে জনপ্রিয় ছিলেন, প্রায় সব মহলেই।

অভিজ্ঞ এই পর্লামেন্টারিয়ানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে। সক্রিয় ছিলেন ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। ছিলেন সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে একতা পার্টি, ১৯৭৯ সালে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালে জয়ী হন উপনির্বাচনে। এরপর ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সালেও ছিলেন আইন প্রণেতা। রাজপথে সব সময়ই ছিলেন সক্রিয়। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় আহত হন তিনি।

তবু বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। ২০১১ সালে রেলমন্ত্রী হবার পর তার সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারীর দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন। যদিও তা গ্রহণ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করা হয় দপ্তরবিহীন মন্ত্রী। ১৯৩৯ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আনোয়ারাপুরে জন্মগ্রহণ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতোকত্তরের পর সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে নেন এলএলবি ডিগ্রি। জীবন সায়াহ্নেও ছিলেন, আওয়ামী লীগের  উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সুনামগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য।

বিডি টাইম্‌স নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে জানাই গভীর সহমর্মিতা ও সমবেদনা 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে