ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতাঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর একটি গ্রামের নাম।  তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে হরিপুর গ্রামে এক সময় জমিদাররা বসবাস করত। তখন কার সময়ে জমিদার বংশের লোকজন শাসন ব্যবস্থা  চালাত। আর প্রজারা ও তাদের উপর ভীষম আস্থা রাখত। বর্তমানে এই হরিপুর জমিদার বাড়ি   শুধু মাত্র কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিতাস নদীর তীরে এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটিকে কেউ বলে রাজবাড়ি , আবার কেউ বলে জমিদার বাড়ি। নাসিরনগর থেকে মাধবপুর যাওয়ার পথে উপজেলার শেষ সীমান্তে হরিপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে তিতাস নদীর পাড়ে অবস্থিত এই বাড়িটি । বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অসংখ্য দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়।

বাড়ির সামনেই রয়েছে চোখে পড়ার মত দুইটি মট বা গম্বুজ , তিনতলার সুবিশাল এই বাড়িটির পূর্ব পাশে নাসিরনগর-মাধবপুর সড়ক।  অন্যদিকে তিতাস নদীর ফাঁকা জায়গা। অনেক বড় বারান্দা ডিঙিয়ে মূল বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়।

নান্দনিক স্থাপত্য শৈলিতে নিরমিত বাড়িটিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,  প্রায় ১৭৫ বছর পূর্বে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী বাড়িটি নিমার্ণ করেন। বৃটিশ আমলে নির্মিত করা হয় এই বাড়িটি। ১৩৪৩ বাংলার ১২ চৈত্র (দোল পূর্নিমা) তারিখে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর পর্যায়ক্রমে বাড়িটির উত্তরাধিকার হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী। তাদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি আসে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী কাছে। কালক্রমে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওযার পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে তারা বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যান। জমিদাররা বাড়িটি ফেলে যাওয়ার সময় পুরোহিতদের রেখে যায়  তাদের নির্মিত ও সুবিশাল এই বাড়িতে। এখনও জরাজীর্ণ এই জমিদার বাড়িতে পুরোহিতদের বংশধরেরা বসবাস করছে।

বাড়িটির দেয়ালের অধিকাংশ পলেস্তার খসে পড়েছে,আর সেখানে জমেছে শেওলার আবরণ। দৃষ্টি নন্দন কারুকাজের খুব অল্প অংশই বিলীন হতে বাকি আছে।  মেঘনা তথা তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই। প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ৬০টি কক্ষ,রং মহল,দরবার হল,ধানের গোলা,গোয়ালঘর, রান্নাঘর,নাচ ঘর, মঠ, পুকুর,খেলার মাঠ,মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে।

বিশাল আয়তনের বাড়িটির পুরো ভবনের কোথাও কোন রডের গাঁথুনি নেই । লাল ইট আর সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দুপাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ স্বগর্বে মাথা তুলে দাড়িঁয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছে,  জমিদার বংশের ঐতিহ্যের কথা। দু’তলায় উঠার ৬ দিকে ৬টি সিড়িঁ ও তিন তলায় উঠার ২ দিকে ২টি সিঁড়ি রয়েছে। বাড়তি পশ্চিম-উত্তর কোণে ৬টি বেড রুম এবং মল পুকুরের পূর্বপাড়ে ৪টি ও পশ্চিম পাড়ে ৪টি বেড রুম রয়েছে। বাড়ির পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড়ে পাকা ঘাটলার উত্তর দিকে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও দক্ষিণ দিকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর সমাধি মঠ রয়েছে ।

বর্তমানে বাড়িটির ভিতরের অবস্থা অনেক খারাপ। ময়লা, আবর্জনা, গরুর গোবর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর তাই দিন দিন কমে যাচ্ছে পর্যটক। এইভাবে হয়ত একদিন হারিয়ে যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটা।তাই এ ঐতিহ্যবাহি ও ইতিহাসের স্বাক্ষী এ জমিদারী বাড়িটির সুষ্ঠু পরিচর্যা  ও সংরক্ষণের  জন্য সরকারী কিংবা বেসরকারি সংস্থার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। তা না হলে হয়ত কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে জমিদার বংশের তথা জমিদার বাড়ির ইতিহাস ও সংস্কৃতি।

জহির  সিকদার
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে