বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমকামিতা এবং সমকামিদের বিবাহের আইনগত বৈধতা দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসে সর্ব প্রথম সমকামিদের বিবাহের বৈধতা দেয়। এরপর একে একে কলম্বিয়া, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, স্কটল্যান্ড, ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে এটি বৈধতা পায়। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বৈধতা দেয় তাইওয়ান। সমকামিতা আর অপরাধ নয় বলে রায় দিয়েছে পাশের দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে একই লিঙ্গের মানুষ বিয়ের ঘটনা জায়গা করে নিয়েছে খবরের পাতায়। তবে ধর্মীয় কারনে সমকামিতা বা সমকামিরেদের মধ্যে বিয়ের বিষয়টি অনেকের কাছেই নেতিবাচক। ফলে জন্ম দেয় নানা আলোচনা-সমালোচনার। সম্প্রতি নিউইয়র্কে সমকামি বাংলাদেশি তরুণীর বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। যে বিয়েতে বাংলাদেশি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও পালন করা হয়। এই বিয়ের খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। এ বিষয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক দর্পণ কবির তার ফেসবুক ওয়ালে বিস্তারিত লিখেছেন। পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
“নিউইয়র্কে ইয়াশরিকা জেরা হক নামে এক বাংলাদেশি-আমেরিকান তরুণীর অপর তরুণীকে বিয়ে করার সংবাদে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তোলপাড় চলছে। সমকামি বিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আইনগত বাধা না থাকলেও বাংলাদেশি তরুণীর বিয়ের ঘটনা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। খবর নিয়ে জানা গেছে সমকামি হিসাবে বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে। এ ছাড়া বিয়ে না করে গৃহসঙ্গী (ডেমষ্টিক পার্টনার) হিসাবে অধিকাংশ সমকামি পছন্দ করেন। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী-যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লক্ষাধিক সমকামি বিয়ে বা বিয়ে না করে একত্রে সংসার করছে। দিনদিন সমকামিদের বিয়ে বা একত্রে সংসার করার প্রবণতা বাড়ছে।
উল্লেখ্য, ছেলে-ছেলেতে বা মেয়ে-মেয়েতে বিয়ে করাকে সমকামি বিয়ে’ বলা হয়। সমকামি বিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মপ্রাণ মানুষদের প্রবল আপত্তি থাকলেও ২০১৫ সালের ২৬ জুন ইউএস সুপ্রিমকোর্ট এক মামলার রায়ে সমকামি বিয়ের বৈধতা ঘোষণা করেছিল। এর আগে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এই বিয়ের বৈধতা ছিল। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে সমকামি বিয়ের বৈধতা লাভ করেছিল ২০১১ সালের ১৫ জুন। ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র সমকামি বিয়েতে আইনী বাধা নেই। এর ফলে সবগুলো রাজ্যে সমকামিরা বিয়ে করে সংসার করছেন। বিয়ে ছাড়া লিভ টুগেদার করছেন অধিকাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সাল অব্দি প্রায় ৩৯ হাজার সমকামি বিয়ে নিবন্ধিত হয়েছে। এ ছাড়া বিয়ে না করে লিভ টুগেদার (এক সঙ্গে বসবাস) করছেন ১ দশমিক ২ মিলিয়ন নর-নারী (সমকামি)। এই সমকামি বিয়ে নিয়ে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে নেতিবাচক ধারনা বিদ্যমান। বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ (মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান) প্রবাসীরা সমকামি বিয়ে মানতে নারাজ। এ বিয়ের পক্ষে আইনগত বৈধতা থাকা নিয়ে তাদের মনে চাপা অসন্তোষ রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা মনে করেন, বাংলাদেশিদের মধ্যে ‘সমকামি’নেই বা থাকতে পারে না। তারা আরো মনে করেন, সমকামি হওয়া এক ধরনের মানসিক বিকার। তবে তাদের এই ধারনাকে নীরবে অঘোষিত চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ৭ জুন একটি বিয়ে হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিন এলাকায়। এই বিয়ের কনে একজন বাংলাদেশি পরিবারের মেয়ে। তার নাম ইয়াশরিকা জেরা হক (৩৪)। মায়ের নাম ইয়াসমিন হক এবং বাবার নাম ইয়ামিন হক। পেশায় তিনি আইনজীবী। টেক্সাস নিবাসী বর একজন মার্কিনী নারী। তার নাম রুথ ককলিক (৩১)। তিনি ডক্টরেট ডিগ্রীধারী এবং পেশায় একজন অডিওলজিস্ট। ২০১৫ সালে তাদের পরিচয় হয়েছিল। এরপর প্রেম এবং সবশেষে পরিণয়সুত্রে বাধা পড়েন দুজনে। ঘটা করে ‘বিয়ের অনুষ্ঠান’হয়েছে তাদের। বিয়েতে খরচও হয়েছে মিলিয়ন ডলারের বেশি। এই বিয়েতে বর ও কনের মা, নিকটাত্মীয় ও বন্ধুরা অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও পালন করা হয় এই বিয়েতে। বাংলাদেশি সমকামি মেয়ের বিয়ে করার ঘটনাটি এই প্রথম প্রকাশ পেল। এর আগে বাংলাদেশি নারী বা পুরুষের সমলিঙ্গের সঙ্গে (সমকামি) বিয়ের খবর কমিউনিটিতে প্রকাশ পায়নি।
সংশ্লিস্টগুলোর তথ্যানুযায়ী, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ২০১৩ সালে সমকামি বিয়ে নিবন্ধিত হয়েছে ৪ হাজার ৩১, ২০১৪ সালে ৩ হাজার ১ শ ৯৩, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৫৪, ২০১৬ সালে ২ হাজার ৫৬ এবং ২০১৭ সালে ১ হাজার ৮ শ ৩০টি। এরমধ্যে ২০১৫ সালে পুরুষে-পুরুষে ৮ শ ২১ এবং নারীতে নারীতে ১ হাজার ২ শ ২৩, ২০১৬ সালে পুরুষে-পুরুষে ৮ শ ২৭ ও নারীতে-নারীতে ১ হাজার ২ শ ২৯ এবং ২০১৭ সালে পুরুষে-পুরুষে ৭ শ ৩৩ ও নারীতে-নারীতে ১ হাজার ৯৭টি বিয়ে নিবন্ধিত হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান হয়, পুরুষ-পুরুষের চেয়ে নারী-নারীতে বিয়ের হার বেশি। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে মিলিয়নের বেশি পুরুষ ও নারী সমকামিরা লিভ টুগেদার করছেন। তারা নিজেদের ডোমেষ্টিক পার্টনার বলে পরিচয় দেন।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ