সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পোশাক ও জীবনধারা নিয়ে “স্বর্নালী যুগ” বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করতে যাচ্ছে ফ্যাশন ডিজাইনার বদরুন নাহার রক্সি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে “স্বর্নালী যুগ” নামক বিশেষ আয়োজনটি প্রদর্শিত হবে।
ফ্যাশন ডিজাইনার রক্সি জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বিশেষ এই প্রদর্শনীটি বছরব্যাপী সকল বিভাগীয় শহরে আয়োজন করার ইচ্ছে আছে, আসছে মার্চে ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগীয় শহরে আয়োজন করতে চাচ্ছি। তারপর সারাবিশ্ব ব্যাপী জাতির জনকের পোশাক ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হবে ইনশাআল্লাহ্। “স্বর্নালী যুগ” বিশেষ প্রদর্শনীতে থাকবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত মুজিব কোট, পাজামা, পাঞ্জাবি, শর্টহাতা শার্ট, ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট, নাইট গাউন, শাল, ঘড়ি, টুপি, তাসবিহ, প্রিন্স কোট, সাফারি স্যুট, শেরওয়ানি, টাই, লুঙ্গি, গেঞ্জি, জুতা, স্যান্ডেল, চশমা ও পাইপ সহ সকল কিছুর অনুলিপি। এছাড়াও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকি উপলক্ষ্যে থাকছে মুজিব কোটের ১০০টি ডিজাইন। আর এসব তৈরি হবে দেশীয় কাপড় যেমন সূতি, পাট, খাদি, সিল্ক, জামদানি, ডেনিম, নীট, উপজাতি কাপড় সহ দেশীয় সব ধরণের কাপড়ে, তাছাড়াও ব্যবহার করছি চামড়া, রিসাইকেল ফেব্রিক।ফ্যাশন ডিজাইনার রক্সি আরও জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সোনালি আশ পাট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পোশাক তৈরি করে পাটের ব্যবহারের চাহিদা বাড়ানোর একটি বিশেষ প্রচেষ্টা থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশীয় ঐতিহ্য যেমন তাত, জামদানি, খাদি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিস গুলো তৈরি করে দেশীয় ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা, কারন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ আর বাঙালি সংস্কৃতি এক ও একাকার। তিনি সব সময় দেশীয় ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিতেন, দেশপ্রেম ফুটিয়ে তুলতেন পোশাকে, যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জাতির জনকের মুজিব কোট, সাধারণত কোটে ৫ বোতাম ব্যবহার হলেও জাতির পিতা বাঙ্গালির মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রতীক হিসেবে মুজিব কোটে ৬’বোতাম ব্যবহার করতেন। তাছাড়া থাকবে বিভিন্ন উপাদানে তৈরি চশমা ও পাইপ, বাহারি ডিজাইনের টাই। থাকছে বোতামে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, দেশের মানচিত্র, বর্ণমালার ব্যবহার। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর যখন ইংল্যান্ডে যান সেখানকার একটি স্বনামধন্য টেইলার্স থেকেও মুজিব কোট তৈরি করেছিলেন। আমি যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকেও দুটো মুজিব কোট তৈরি করার অর্ডার দিয়েছি। পাঁচ দিনব্যাপী প্রদর্শনীর সঙ্গে থাকছে একটি সেমিনার এবং বঙ্গবন্ধুর পোশাক ও মুজিব কোট নিয়ে ফ্যাশন শো। এছাড়া তরুণ ডিজাইনারদের জন্য একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে। সারা দেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ও ইন্সটিটিউটের ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ডিজাইন আহ্বান করছি, যাতে তরুণ ডিজাইনাররা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণার সুযোগ পায়। সেখান থেকে বাছাই করা ডিজাইনারদের পুরস্কার প্রদান করা হবে।
প্রদর্শনীতে আরও থাকছে বঙ্গবন্ধুর পোশাক নিয়ে গান (থিম সং), বঙ্গবন্ধু সাধারন পোশাকে কতটা অসাধারণ ছিলেন তা নিয়ে থাকছে একটি ডকুমেন্টরি। প্রদর্শনী উদ্বোধনের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছি, “আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী তার সকল ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় বের করে প্রদর্শনীটির শুভ উদ্বোধন করবেন”। ২০১৩ সালে ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে চিন্তা করি জাতির পিতার পোশাক নিয়ে কাজ করবো, তারপর থেকে একটু একটু করে গবেষণার কাজ শুরু করি, বঙ্গবন্ধুকে জানার পর আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর যুগটাই ছিলো “স্বর্নালী যুগ”। তিনি আজীবন সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য অবিরাম কাজ করে গেছেন, তাই ২০১৬ সালের শেষের দিকে এসে সিদ্ধান্ত নেই জাতির পিতার পোশাক নিয়ে যে প্রদর্শনী করবো তার নাম হবে “স্বর্নালী যুগ”। তারপর সকল কাগজপত্র প্রস্তুত করে জাতির জনকের পোশাক ও জীবনধারা নিয়ে “স্বর্নালী যুগ্য়” প্রদর্শনী করার জন্য অনুমতি চেয়ে জাতির জনকের বড় সন্তান, যোগ্য উত্তরসূরি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সম্মানিত সভাপতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবকিছু সদয় বিবেচনা করে অনুমতি প্রদান করলে ২০১৮ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে আমাকে “স্বর্নালী যুগ” প্রদর্শনীর আয়োজন করার অনুমতি প্রদান করে চিঠি দেন, যা আমার জীবনে অনেক বড় একটা পাওয়া। ছোটবেলা থেকেই আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার মুখে স্বাধীনতার গল্প তথা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গল্প শুনে বড় হয়েছি। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা, ত্যাগ, অবদান এসব শুনতাম সবসময়, বাড়ির দেয়ালে সবসময় বঙ্গবন্ধুর বড় বড় ছবি টানানো দেখতাম, আগস্ট মাস আসলে আব্বু আম্মাকে রোজা রাখতে দেখেছি সবসময়, আর এভাবেই সেই বাল্যকাল থেকেই জাতির পিতার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়, জাতির পিতার আদর্শে জীবন গঠনের শপথ নিয়েই বেড়ে উঠি। যখন আমি ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়তে আসি তখনই ভাবি জীবনের প্রথম কাজটাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে করবো। সবাই রাজনৈতিক বঙ্গবন্ধুকে জানলেও আমার কাছে তিনিই ফ্যাশন আইকন, তিনিই বাংলাদেশ।
আমি চাই তরুণ প্রজন্ম জাতির জনকের জীবনের অন্যান্য দিকের পাশাপাশি তার পোশাক সম্পর্কেও জানবে, এবং তাদের নিজের জীবনেও এর প্রতিফলন ঘটাবে । জাতির জনক যে শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় বরং সবক্ষেত্রেই ছিলেন আদর্শ অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব তা তরুণ প্রজন্মকে জানানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্টাইল তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। এবং প্রতিটি ফ্যাশন ইউনিভার্সিটি – ইন্সটিটিউট এর ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর পোশাক নিয়ে গবেষণা মূলক কাজ করার অনুপ্রেরণা তৈরি করতে। একজন তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে জাতির জনকের আদর্শিক কন্যা হিসেবে তার প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থেকে আমি জাতির পিতার পোশাক নিয়ে কাজ করছি, আর এটা আমি পৌঁছে দিতে চাই তরুণ প্রজন্মের প্রতিটি সদস্যের কাছে । তাদের কাছে এই বার্তা দিতে চাই যে বঙ্গবন্ধু সব দিকের মতো পোশাকেও ছিলেন দেশপ্রেমিক, উন্নত রুচি ও স্টাইলের অধিকারী। এটাই আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস যাতে তরুণরা আরও অনুপ্রাণিত হয় স্বপ্ন দ্রষ্টার স্বপ্ন পূরণে। আর এই লক্ষ্য পূরণে আমি গত চার বছর যাবত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি নিজের মেধা, শ্রম ও আর্থিক সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে, এতোবড় একটা অনুষ্ঠান করার জন্য প্রয়োজন একটা ভালো বাজেটের, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাইনি কোন স্পসরের সাড়া, তারপরও আমি থেমে নেই।
“কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই মমতাময়ী মা, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার নেত্রী, বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনাকে, যিনি আমার মতো একজন তরুণকে ভরসা করে এতো বড় একটা কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন, আমি উনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ ও ঋণী”। তাছাড়া তাদেরকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়, যাদের জন্য কাজটা আমি করতে পারছি, প্রতিটি পদে পদে যারা আমার প্রতি আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ ও ঋণী। তাদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এর মাননীয় সদস্য, শেখ পরিবারের পুত্রবধু শাহানা ইয়াসমিন শম্পা. কন্ট্রোলার অব এ্যাকাউন্টস্ সিদ্দিক হোসেন চৌধুরী যিনি বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেনের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দিয়ে সহযোগিতা করছেন তা কল্পনাতীত। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের প্রত্যেকটা সদস্য, কর্মকর্তা, কর্মচারীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ, উনারা আমাকে সবসময় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তাছাড়া আমার পরিবার, টিম, শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ যারা সবসময় আমার পাশে থেকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ