বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশ ভারত ও মিয়ানমারে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষকের এ ধরনের গবেষণার তথ্য সোমবার নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তাদের আশংকা, যেহেতু এখানে গত ৪০০ বছর ধরে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে, ফলে তা যে কোনো সময় রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার মতো শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প তৈরি করতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে যে ফল্ট লাইনের ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেই একই ফল্ট লাইনে নতুন এই ভূমিকম্পের আশংকা দেখছেন গবেষকরা।ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, এখনই বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে এমন কথা বলা না গেলেও দুটি গতিশীল ভূগাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে। গবেষক দলের প্রধান নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মাইকেল স্টেকলার রয়টার্সকে বলেন, ওই ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে, সে পূর্বাভাস আরও গবেষণা না করে দেয়া সম্ভব নয়। ভারতের পূর্ব অংশ ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সম্ভাব্য সেই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তার ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বসবাস।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও অন্যতম দরিদ্র এই অঞ্চলে এ ধরনের একটি ভূমিকম্প মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তেমন কোনো ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভবন, ভারী শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে বলে গবেষকরা আশংকা করছেন। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার এক বিবৃতিতে বলেছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূ-খণ্ড তৈরি হয়েছে, তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মত কেঁপে উঠতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গায় তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ইমারত, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি। তাদের গবেষণায় প্রায় ৬২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে এই ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় বলা হয়েছে। হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, তেমন মাত্রার ভূমিকম্প সত্যিই হলে তার ক্ষয়ক্ষতি এতটাই ভয়াবহ হবে যে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরির মাধ্যমে গবেষকরা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের ভূ-গঠনিক প্লেট উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের ভূ-গঠনিক প্লেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতারকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই প্লেটের সংযোগ স্থলে ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে অন্তত ৪০০ বছর ধরে। ওই শক্তি একসঙ্গে মুক্তি পেলে তা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে মাইকেল স্টেকলার বলেন, এমন একটি বিপদ যে ঘনিয়ে আসছে সে ধারণা গবেষকদের কারও কারও মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য বা মডেল এতোদিন হাতে ছিল না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি না, ঠিক কবে সেই বিপদ আসবে, কারণ আমরা জানি না শেষ কবে ওই এলাকায় এ রকম পরিস্থিতি হয়েছিল। আমরা বলতে পারছি না- এখনই, না ৫০০ বছর পরে সেই ভূমিকম্প হবে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে দেখতে পাচ্ছি- ওখানে শক্তি জমা হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন ভূপদার্থবিদ ভারতীয় উপমহাদেশের নিচে একটি অঞ্চল চিহ্নিত করেছেন, যেখানে একটি টেকটনিক প্লেট অন্য এটি প্লেটের ওপর ক্রমশ চেপে বসছে। এ ধরনের অঞ্চলকে গবেষকরা সাবডাকশন জোন বলছেন।