বাংলাদেশের কিছু তরুণ-তরুণী স্যাটেলাইট তৈরি করে তা মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে। সেই স্যাটেলাইট পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে বাংলার আকাশসীমায় এসে জানান দিচ্ছে ‘আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি।’
বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীদের নির্মিত স্যাটেলাইট থেকে এমন সুরের মুর্চ্ছনা কানে এসে একদিন বাজবে – এমন খবরকে অনেকে হয়তো স্বপ্ন অথবা কল্পনাবিলাস বলে উড়িয়ে দিতে চাইবে। কিন্তু এটি না স্বপ্ন, না কল্পনা -এটিই হবে বাস্তবতা। আপাতত মনে হতে পারে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের জন্য দূরকল্পনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মহাকাশ গবেষণায় উন্নত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশও খুব একটা পিছিয়ে নেই।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী কাফি, মাইসুন ও অন্তরা জাপানে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের পাশাপাশি স্যাটেলাইট তৈরি এবং তা উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০১৭ সালের মে মাসে তাদের তৈরী স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে বুধবার জাপানের কিউসু ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (কেআইটি) এবং বাংলাদেশের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জিডিএলএন সেন্টারে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ সাদ আন্দালিব এবং কেআইটির প্রফেসর মেংগু চো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।বার্ডস নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে এ ন্যানো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। এজন্য এর নাম দেয়া হয়েছে অন্বেষা ৩বি (৩বি-বাংলাদেশ, ব্র্যাক ও বার্ডস প্রজেক্ট)। সভা শুরু করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সের চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন কেন্দ্রের (স্পারসো)সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু আবদুল্লাহ জিয়াউদ্দিন আহমাদ। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও প্রযুক্তির অগ্রগতি সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। এসময় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান এ প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ন্যানো স্যাটেলাইটে বাংলাদেশও হবে একটি উজ্জ্বল নাম – এমন মন্তব্য করেন জাপানের কিউসু ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (কেআইটি)ল্যাবরেটরি অব স্পেসক্র্যাফট এনভায়রনমেন্ট ইন্টের্যাবকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাবেক সহকারি অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমান খান। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। বাংলাদেশের জন্য ন্যানো-স্যাটেলাইট খুবই লাভজনক হবে বলে মনে করেন ড. আরিফ। এর মাধ্যমে দেশের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, কৃষি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ আরও বিভিন্ন খাতে এর ব্যবহার ব্যাপক অগ্রগতি আনবে বলে মনে করেন তিনি।
স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রসঙ্গে কাফি,মাইসুন ও অন্তরা বিডি টাইমস নিউজকে বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি যাতে আমাদের কাজ কারো কাজে লাগে। কিন্তু আমরাই দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বানাতে পারব এটা কল্পনাও করতে পারিনি। আমরা আশা করব, আমাদের এ প্রচেষ্টা বাংলাদেশের কাজে আসবে। অন্বেষা ৩বি এর মাধ্যমে আমরা স্যাটেলাইটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি জিনিস খুব ভালভাবে শিখছি।’ তারা আরও বলেন, ‘অন্বেষা ৩বি স্যাটেলাইট আমাদের শেষ না, এটা দিয়েই আমাদের স্যাটেলাইট গবেষণা শুরু। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই যতক্ষণ না পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রযুক্তির শিখরে পৌঁছে দিতে পারি। আমরা ধন্যবাদ জানাই আমাদের শিক্ষকদের। তাদের আশীর্বাদ ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব ছিল না।’