ইয়াছির আরাফাত খোকন, প্যারিস, ফ্রান্স।। প্যারিসে মুবিদা ক্লাবে ফ্রান্স বিশ্ব শান্তি বৌদ্ধ ধ্যান কেন্দ্রের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে কঠিন চীবর দানোৎসব। রাজধানী প্যারিস ও আশপাশ শহরে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা উৎসাহ–উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে তারা এ ধর্মীয় উৎসব পালন করেন। দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে ভোর থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে শীলগ্রহণ, বুদ্ধপূজা, সংঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, কল্পতরু দান, সবশেষ কঠিন চীবর দান করা হয়। কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শুরু করে সাধারণ ভক্তদের জন্য তিন রত্ন ও পাঁচ শীল গ্রহণ সংঘের দ্বারা পারিত্তা পাঠ রাজকীয় কঠিন চীবর, কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী সংঘকে দান করে আগত অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, ভদন্ত পণ্ডিত প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো পন্ডিত প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরা প্রতিষ্ঠাতা কাম অ্যাবট- বুদ্ধগয়া প্রজ্ঞা বিহার ফ্রান্স, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভদন্ত কে আনন্দ, মহাথেরো সর্বাধিক ভেন কে. আনন্দ, নায়ক মহাথেরা অ্যাবট- ধম্মকাক্কা বিহার, ফ্রান্স,প্রধান সদ্বম্মদেশক ভদন্ত ড. বরসম্বোধি মহাথেরো প্রধান ধম্ম প্রচারক সর্বাধিক ভেন, ভারসম্বোধি মহাথেরা ড অ্যাবট-ফ্রান্স বিশ্ব শান্তি বৌদ্ধ ধ্যান কেন্দ্র, ফ্রান্স, ভদন্ত বিজয়ানন্দ মহাথেরো ধম্মদেশক ধম্ম প্রচারক: ভেন। বিজয়ানন্দ মহাথেরা চিফ রেসিডেন্ট-ফ্রান্স-বাংলা বৌদ্ধ ধ্যান কেন্দ্র, ফ্রান্স এবং অন্যান্য অনেক পণ্ডিত সম্মানিত,মি. শরণ বড়য়া, কঠিন দান অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন বাবু বিজয় বড়ুয়া সভাপতি দান উত্তম শুভ কঠিন জীবন দান উৎসব উদযাপন পরিষদ অনুষ্ঠান যৌথভাবে পরিচালনা করেন বাবু আদেশ বড়ুয়া ও বাবু উন্নয়ন বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, মৈত্রী গুণ অনন্ত, অহিংসার গুণ অনন্ত। প্রেম ও সাম্যের গুণও অনন্ত। এ অনন্ত গুণ দিয়ে আমরা শুধু আমাদের ভূখ- নয়, বিশ্বের সব ভূখ-ের মানুষকে বাসোপযোগী শান্তি নীড়ে নিয়ে আসতে পারি। শুধু প্রয়োজন বিবেকবোধ, সুচিন্তা, সৎকর্ম প্রভৃতি। আজ আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এর অভাব শুধু আমাদের দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও। তাই তো বলি, বিশ্বমৈত্রী ও বিশ্বসৌভ্রাতৃত্ববোধ গঠন করার জন্য মহামতি গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও সাম্য বাণীর তুলনা হয় না। সেজন্য বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু প্রয়োজন আন্তরিক সদিচ্ছা আর প্রীতিবোধের উদ্বুদ্ধি।
আজ যদি সমাজ, দেশ তথা রাষ্ট্রের সব বিবেকবান মানুষ প্রীতিবোধে জাগ্রত হয়, হিংসার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং মানবতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, তাহলে বিশ্বের চেহারা তো এ রকম থাকার কথা নয়। অবাধে হিংসা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজত্ব চলতে পারত না। আমরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে এর লালন করছি বলেই তো আজকের সমাজ ও বিশ্বে এত হিংসা, এত হানাহানি, এত সংঘাত। অতএব, আজকের এ দিনে মহামানব গৌতম বুদ্ধের সেই আড়াই হাজার বছরের পূর্বের সেই বাণীর প্রাসঙ্গিকতাকে আমরা আবার অনুধাবন করতে চাই। অস্ত্র দিয়ে অস্ত্র ঠেকানো নয়, সন্ত্রাস দিয়ে সন্ত্রাস ঠেকানোও নয়। বুদ্ধের ভাষায়, ‘বৈরিতার জন্ম দেয়, হিংসা-প্রতিহিংসার জন্ম দেয়।’ এটাই বৌদ্ধ যুক্তিবাদ ও বৌদ্ধ নীতিবাদের কথা। তাই প্রখ্যাত রোমান কবি সিসেরোও একদিন বলেছিলেন, ‘কঠিনতম আইন অনেক সময় কঠিনতম ভুলের জন্ম দেয়, নিজের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।’ সুতরাং এ শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। সাবধান হতে হবে অনেক বেশি। এ মুহূর্তে আমাদের অনেক ভাবতে হবে। চলুন আমরা সবাই শান্তি ও মঙ্গলের জন্য ভাবি। কল্যাণের পথে অগ্রসর হই সামগ্রিক মানবতার জন্য। আমরা যেন দেশ সমাজ ও বিশ্বমানবতার জন্য কাজ করতে পারি । সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্তু। বিশ্বের সব জীব সুখি হোক।
অনুষ্ঠান পরবর্তী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা নৃত্য, সঙ্গীত এবং সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পীদের গান পরিবেশনা করেন অতিথি জনাব শরণ বড়ুয়া।