জহির সিকদারঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মঞ্চ তৈরীর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। বছর ঘুরে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বেশিরভাগ জায়গায় প্রতিমা গড়া শেষ, চলছে রঙের কাজ। আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পাঁচ দিন চলবে দুর্গোৎসব। যা আগামী ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
এ লক্ষ্যে আশুগঞ্জ উপজেলার ০৮ টি ইউনিয়নে সর্বমোট. ১৩ টি মন্ডপে পূজার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মন্দির কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পূজা মণ্ডপ ঘিরে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এদিকে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষের দিকে এখন চলছে রং তুলিতে একনিষ্ঠ চিত্তে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় দেবী দুর্গার বাহনকে সাজানোর কাজ। উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আশুগঞ্জ শাখা কর্তৃক জানানো হয়েছে উপজেলায় মোট( ১৩টি) মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চরচারতলা ইউনিয়নে০৩টি, সদর ইউনিয়নে০৪টি, লালপুর ইউনিয়নে ০৬টি, তালশহর ইউনিয়নে ০১টি সহ মোট ১৩ টি পূজা মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আশুগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক নিতাই চন্দ্র ভৌমিক বলেন, আশুগঞ্জের মানুষ সব সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। এখানে জাতি, ধর্ম,বর্ন নির্বিশেষে সকলেই শারদীয় দুর্গা উৎসব পালন করে আসছি।আমরা উৎসব কে উৎসবমুখর করার জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সাথে প্রস্তুতিমূলক সভা সম্পন্ন করেছি।
উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি এবং পূজার প্রস্তুতি খুবই ভালো। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ০৮ অক্টোবর মহা পঞ্চমীর মধ্য দিয়া শারদীয় দুর্গা উৎসব শুরু হবে এবং ১৩ অক্টোবর শুভ বিজয় দশমীতে মাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গা পূজার সমাপ্তি ঘটবে। জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহিম বলেন, “অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই বাংলাদেশে যার যার ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারবেন। সরকারের এই চেতনার আলোকে জেলায় আসন্ন দুর্গোৎসবকে উৎসবমুখর ও সার্বজনীন করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ভিডিপি, জাতীয় হিন্দু মহাজোট নওগাঁ জেলা শাখা ও পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে কয়েকস্তরের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। আশা করি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আসন্ন দুর্গা উৎসব পালিত হবে।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাক বলেন, আসন্ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২৪ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপনের নিমিত্তে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আসন্ন দুর্গোৎসবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মোট( ৭৫১টি) মণ্ডপে দুর্গা পূজার প্রস্তুতি চলছে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডি আইও ওয়ান আজাদ রহমান বিষয়টি। জানিয়েছেন।
অপরদিকে শেষ সময়ে রঙ-তুলির আঁচড়ে সাজছে দেবীদুর্গা আর মাত্র কয়দিন। আগামী ৯ অক্টোবর শুরু হচ্ছে দূর্গাপূজা। সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে বগুড়ায় মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। বাহারি রঙ আর হাতের সুনিপুণ ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে প্রতিমা। দম ফেলানোর ফুরসত নেই এসব শিল্পীদের। গত বুধবার ২ অক্টোবর শুভ মহালয়া চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। জানা গেছে, আগামী বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। রোববার ১৩ অক্টোবর দশমী তিথি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী এ শারদীয় দুর্গোৎসব। এ বছর দোলায় অর্থাৎ পালকিতে চেপে দেবীদুর্গা মর্ত্যলোকে পদার্পণ করবেন। আবার গজে অর্থাৎ হাতিতে চড়ে কৈলাসে ফিরবেন। রোববার (৬ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব মণ্ডপেই চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। দিনরাত প্রতিমা তৈরির পর শেষ মুহূর্তে রঙ-তুলিতে মনের মাধুরী মিশিয়ে দেবীদুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মীকে সাজাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। অধিকাংশ পূজা মণ্ডপের প্রতিমা তৈরির মূল কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। চলছে সাজ-সজ্জা ও রঙয়ের কাজ। সীমিত পরিসরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে পূজামণ্ডপগুলো। এখন শুধু প্রতিমায় পরিপূর্ণ রূপ দিতে রং তুলির শেষ আঁচড় দেওয়া হচ্ছে। দুই এক দিনের মধ্যেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করা হবে। মৃৎশিল্পী স্বপন প্রামাণিক জানান, তিনি ও তার সঙ্গীরা মিলে এ বছর ২০টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন। মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ আরও আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে তারা রং-তুলির কাজ করছেন। বিভিন্ন রং দিয়ে তারা প্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছেন। এতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তারা মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী বুধবার মহাষষ্ঠীর আগেই তারা সব কাজ শেষ করবেন। স্বপন।আরও জানান, কয়েক দিন থেকেই আকাশের মুখ ভার। বৃষ্টিও হচ্ছে তাই প্রতিমা শুকাতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্যেই প্রতিমাগুলো প্যান্ডেলে পৌঁছে দিতে হবে। তাই বৃষ্টির মধ্যেই আমাদের প্রতিমা তৈরির কাজ যে কোনো উপায়ে শেষ করতে হচ্ছে।
মৃৎশিল্পী স্বপন প্রামাণিক জানান, তারা আগে প্রতিমা তৈরি করে ভালো টাকা আয় করতেন। কিন্তু বর্তমানে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেমন কিছুই থাকে না। প্রতিমা তৈরির কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানেন না বলে এটিই করে যাচ্ছেন। প্রতিমা তৈরির ফাঁকে সুবাস নামে এক কারিগর বলেন, পূজার আর বেশি দেরি নেই। তাই জোর কদমে কাজ চলছে। মাটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি দিনগুলোর মধ্যেই রঙের কাজও শেষ হয়ে যাবে। তারপরেই মা তার বাড়িতে যাবে। এদিকে পূজামণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো ধরনের কার্যক্রম হলে সংশ্লিষ্ট কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জেলার ০৯ টি উপজেলায় ৫৮৪টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ৭৩টি, আশুগঞ্জে১১টি, সরাইলে ৪১ টি, নাসিরনগরে ১২৭টি, কসবায়৪১টি, আখাউড়ায়২১ টি, নবীনগরে১১৪টি, বাঞ্চারামপুরে৩৯টি, বিজয়নগরে ৪৪টি মন্ডপে দুর্গার্পজা অনুষ্ঠিত হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, এ বছর পৌর এলাকায় পুজা মণ্ডপগুলোতে পূজার আয়োজন হচ্ছে। প্রতিমা তৈরিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু জায়গায় মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আশা করছি এবার সবাই ভালোভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, পূজা সুষ্ঠু ও নিরাপত্তার জন্য সরকারি ভাবে যে নির্দেশনা থাকবে তার বাইরে স্বেচ্ছাসেবক দল ও আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনসার রাখা হবে। পাশাপাশি পৌর কমিটির পক্ষ থেকেও মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহিম জানান, দুর্গাপূজা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে চারধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরী থেকে বিসর্জন পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে জেলা পুলিশ। ঝুঁকিপূর্ণ মন্দিরের তালিকা করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া দুর্গাপূজা চলাকালিন মাদক, ইভটিজিং, ছিনতাই, পকেটমার প্রতিরোধে পুলিশের বিশেষ টিম তৎপর থাকবে। যেহেতু দর্শনার্থীদের সমাগম বাড়বে এজন্য সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থাও জোরদার থাকবে। ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও আয়োজকদের সাথে সভা করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাদের। পুলিশ সুপার আরও জানান, সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে এবারের দুর্গাপূজা এমনটাই আশা করছেন তিনি। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবীদুর্গা দশদিন ধরে অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। হিন্দু পঞ্জিকার সপ্তম মাসে এই যুদ্ধ শেষে দেবী দুর্গা মহিষাসুর নামে নির্দয় অসুর রাজকে বধ করেছিলেন। যার মাধ্যমে অত্যাচার থেকে মুক্তি মিলেছিল ও অশুভের ওপর শুভ শক্তি স্থাপিত হয়েছিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ