নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শাসন চালাতো, এখন সেই শাসকের বিরুদ্ধে আইনের শাসন শুরু হয়েছে। যার কথায় মামলা নেয়া হতো, আবার মামলা হলেও তুলে নেয়া হতো, যার কারণে এলাকার সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম ছিলো। তার নাম সাইমুম সরওয়ার কমল । সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ব্যাপারে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫’বছরে অসংখ্য অপরাধ করেও পার পেয়ে গেছেন তিনি। বিচার হয়নি বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারি মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সোনালী ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

ন‌জিরবিহীন লুটপাট, ঋণ কে‌লেঙ্কা‌রি আর দখলদারিত্বের কারণে আজ দেশের ব্যাংকিং খাতের করুণ অবস্থা। হলমার্কের অভিযুক্ত সেই তানভীরের জবানবন্দিতেই উল্লেখ্য রয়েছে কক্সজারের দাপুটে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল কে ঘুষ প্রদানের তথ্যটি। কিন্তু ক্ষমতা বলে পতিত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হামান মাহমুদের যোগসাজসে হলমার্ক কেলেংকারির বিচার প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখা হয় বিতর্কিত এমপি কমলকে। ইতিমধ্যে সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে মুখে আওয়ামী সরকারের পতন হয়। ব্যাংকিং খাতে অবৈধ সরকারের নিয়ম বহির্ভূত ঋণ সহ অর্থনৈতিক কেলেংকারি চাপাপড়া বিষয় গুলো পুণরায় তদন্তের দাবি উটেছে। এমনকি একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের এতবড় কেলেংকারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা প্রতিহতের দাবিও জোরালো হচ্ছে ক্রমশ। হলমার্ক কেলেংকারির ঘটনাটি পূণরায় তদন্তের দাবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাহ আসনের জোরপূর্বক তিনবারের সাবেক এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল সর্বশেষ ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর সংসদের হুইপ পদটি নানাভাবে এবং দেশ-বিদেশি তদবিরে হাতিয়ে নেওয়ার পরই থেকে সবচেয়ে বেশি দাপট দেখাতে শুরু করেন।

অভিযোগ রয়েছে, সর্বশেষ প্রতিমন্ত্রী পদমর্যদার হুইপ পদটি পাবার পর থেকেই তিনি এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেন যে সর্বত্র যেন ‘খাই খাই করে চলাফেরা করতেন। সকাল থেকে রাত অবধি তদবির বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকতেন এমপি কমল। নিজ এলাকা সংসদীয় আসন কক্সবাজার সদর ৩ আসলে সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কারণ হয়ে থাকতো। হুইপ হবার আগে এমপি হয়েই তিনি রামুর সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সুনীয়া শর্মার উপর চড়াও হয়েছিলেন। অথচ এই শিক্ষক ছিলেন এমপি কমলের কিশোর বয়সের শিক্ষক। নিয়তির এমনই পরিহাস যে, ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করে ফেলে। এমপি কমল তেমনি একটি ছোট্ট বিষয় নিয়েই গলাধাক্ষা দিয়েছিলেন বাল্য কালের প্রবীণ শিক্ষককে। এমন নাক্কারজনক ঘটনাটির ব্যাপক চাপের মুখে পরবর্তিতে ২০১৮ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশ গুপ্তকে লেখা এক চিঠিতে সেই বিষয়টি সমযোতা করে দিতে এমপি কমল অনুরোধও করেছিলেন গেল বছর রামুতে এমপি কমলের বাহিনীর জমি জবর দখলের একটি রামুতে একটি ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আদালতের স্থানীয় এক কর্মচারির দায়ের করা এক মামলাকে কেন্দ্র করে একজন বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে চাকরি করতে না দেয়ার মত হুমকিও দিয়েছিলেন এমপি কমল। তাও একটি প্রকাশ্য জনসভায় এমন যোষণা দিয়েছিলেন একজন বিচারকের বিরুদ্ধে এমপি কমল। এসব ঘটনার টু শব্দ করার মত পরিবেশ তখন ছিল না। কেননা এমপি কমল ৫০০ জনের একটি বিশেষ বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগেই ছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগে সন্ত্রাসী। ১৫জন তার সশস্ত্র দেহরক্ষীর ভূমিকা পালন করত। একটি গ্রুপ তৈরি করেছিল অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমপি কমল এর গুনগান ও কমলের বিরুদ্ধে কোন লেখালেখি হলে তার প্রতিবাদ করা। যারা কমলের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে তাদের চরিত্র হননের মত একের পর এক অভিযোগ দিয়ে পরিবারের সবাই কে হয়রানি করা ছিলো নৈমিত্তিক কাজ। এমপি কমলের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার ব্লগার গ্রুপ। এসব বাহিনীর প্রতিজন সদস্যদের নামে রামু উপজেলা ও কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের কাবিখা ও সরকারি রিলিফের প্রকল্প সহ নামে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে দিয়ে হরিলুটের সুযোগ করে দিত কমল। এমপি কমলের দৃষ্টিতে সংবাদকর্মীরা তার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। যেসব সংবাদকর্মী আপোষহীন পথে হেঁটেছেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি মরিয়া হয়ে লড়েছেন বাদ দেয়নি মামলা হামলা থেকে । এমনকি রামুতে নিজের প্রতিবেশি হয়েও একজন সংবাদকর্মী এমপি কমলের কুদৃষ্টিতে অনেক হয়রানির শিকার হয়েছেন।

হাসান তারেক মুকিম নামের এই সংবাদকর্মী ঢাকায় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় রামু সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেন একই পত্রিকার কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি মো জসিম উদ্দিন ও এমপি কমলের রোষানলের শিকার হয়েছেন। এমপি কমলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির রিপোর্ট করায় কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকা কক্সবাজারবাণীর গণমাধ্যমকর্মী ইয়াছির আরাফাত ও সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে মামলা ও হামলা করার অভিযোগ রয়েছে। দাপুটে এমপি কমলের কাছে সবচেয়ে বেশি হেনস্থার শিকার হয়েছেন কক্সবাজারের প্রবীণ সাংবাদিক ও আইনজীবী তোফায়েল আহমাদ। তিনি কক্সবাজারে বিগত ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন। এমপি কমলের দৈনিক কালেরকষ্ঠ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদের উপর এমনই ক্ষীপ্ত ছিলেন যে, তার ব্লগার বাহিনী নিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক পোষ্ট দেওয়া থেকেও রেহাই দেননি। এমনকি কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার বিষয় সংক্রান্ত কালেরকন্ঠে প্রকাশিত খবর নিয়ে একটি তুচ্ছ সংবাদ নিয়ে সাংবাদিক তোফায়েল আহমদের উপর তেলে বেগুনে ক্ষীপ্ত হয়ে পড়েন এমপি কমল। এ কারণে ক্ষীপ্ত এমপি কমল সাংবাদিক তোফায়েল আহমদের বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য এবং মিথ্যাচার নিয়ে ভিড়িও বক্তব্য প্রদান করেন। আবার সেই ভিভিও একজন এমপি হয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতেও প্রচার করেছিলেন।

জাতীয় সংসদের নির্বাচনের সময় এমপি কমলের প্রদও হলফনামার তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় এর জের ধরে পত্রিকার করবাজারস্থ স্টার্প রিপোর্টার এবং কক্সবাজারের একজন জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস রানার বিরুদ্ধে ও এমপি কমলের বিভিন্ন ভিডিওতে গালাগাল করে দেখাযায় । অথচ নিজেরই প্রদত্ত তথ্য ছিল এমপি কমলে নির্বাচনি হলপনামায়। এখানে সাংবাদিকরা কোনভাবেই কমলের প্রদও হলফনামায় নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে সম্পদের তথ্য কম বা বেশি রিপোর্টে উত্থাপন করা হয়নি । তবুও রেহাই মিলেনি তার ডাহা মিথ্যাচার থেকে একজন এমপি হয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নাজেহাল করেই মূলত তিনি মজা পেতেন এমনটাই বলাবলি লোকমুখে প্রচারিত রয়েছে স্থানীয়ভাবে। কক্সবাজারের সিনিয়র এই সংবাদিকরা জানিয়েছেন, আওয়ামী সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছর সাবেক এমপি কমলের দুর্নীতি, অন্যায়, অপরাধ, স্বৈরাচারিতা নিয়ে কলম ধরলেই অপমান অপদস্ত মামলাও হামলার শিকার হতেহতো। সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজার শহরে সংঘটিত হত্যাকান্ড ও বিএনপি অফিস ভাংচুরসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হুকুমদাতা হিসেবে অভিযোগ উঠেছে। তিনি প্রকাশ্যে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে তার বক্তব্য প্রদান করেন।

সাইমুম সরওয়ার কমলের অন্যায় আবদার না মানায় জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা প্রায় নাজেহালের শিকার হতেন। একজন জেনা প্রশাসক হ্যান্ডশেক করতে হাত এগিয়ে দিলেও তার হাত উল্টো ছুড়ে মারার মত ন্যক্কারজনক ঘটনারও সৃষ্টি করেছিলেন সাবেক এই হুইপ কমল। এমনকি কোন সরকারি কর্মকতার কথায় সায় না দিলে তাকে হয় মারধর করতেন নতুবা জামায়াত-শিবিরের কাতারে ফেলে বদলি করতেন। সরকারি কর্মকর্তাদের মেনে নিতে হয়েছে একই উপজেলা থেকে একে একে তিনজন ইউএনও কে এভাবে নিগৃহীত হয়ে বদলি হতে হয়েছে এভাবে এক ছত্র রাজত্ব কায়েম করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে বিষিয়ে তুলেছিলেন অহমিকায় করা সাবেক হুইপ কমল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে