বিশিষ্ট শিল্পপতি, দৃঢ়চেতা, সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের শিল্পজগতে এক নতুন যুগপ্রবর্তক তিনি। অবিরাম পথচলায় চার দশকে গড়ে তুলেছেন ৪১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান; গড়ে তুলেছেন যমুনা গ্রুপ।

খ্যাতিমান শিল্পোদ্যোক্তা যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ছিলেন দেশের শিল্পভাবনার বিশিষ্ট রূপকার এবং দেশ প্রেমিক সমাজসেবক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন সফল ও ন্যায়নিষ্ঠ করদাতা। শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, বিপণন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্বের জোগান দিতেন। কঠোর পরিশ্রম, মেধা আর দূরদর্শী চিন্তার সমন্বয়ে তিনি একজন শিল্পোদ্যোক্তা হিসাবে ঈর্ষণীয় সাফল্যের কাতারে পৌঁছে গিয়েছিলেন।

ডঃ মোহাম্মদ আলমগীর আলম সেই বর্ননায় তুলে ধরেছেন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল-
যমুনা গ্রুপে আমার কর্মজীবন শুরু ২০০৮ সালের আগস্টের শুরুর দিকে। যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলামের সাথেই আমার সরাসরি কাজের সুযোগ মেলে। কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা হিসেবে লম্বা সময় কাজ করার সুবাদে উনার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনে এসেছি। কাজ করতে এসে যতোই সময় গড়াতে থাকে ততোই উনাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে থাকি। শুরুতে আমি যমুনা ফিউচার পার্কের দায়িত্ব পাই। যমুনা টেলিভিশনের নিচ তলায় আমরা অফিস শুরু করি। উনি খুব ভোরে গুলশানের পার্কে হাঁটতেন। সকালে মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনের যমুনা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে যেতেন।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে দুপুরে খেতে বসতেন আর পরিবারের সবার কাছ হতে কাজ আর অন্যান্য কুশলাদি জানতেন। উনার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এই অদ্ভুত সুন্দর পারিবারিক মিলনমেলা কোনরকম বিরতি বা ব্যতিক্রম ছাড়াই দেখে এসেছি। সেনা কল্যাণ অফিসে যতক্ষণ থাকতেন এক দুই ঘন্টা পর পর ফোন করে খোঁজ নিতেন আমাদের কাজের। বিকেল নাগাদ যমুনা ফিউচার পার্কে আসতেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের সাথে থেকে বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি শুনতেন, নির্দেশ আর পরামর্শ দিতেন এরপর সোজা বাসার পথ ধরতেন ঘরের সবার সাথে রাতের সময় কাটাতে। প্রতিদিন বিকেলে এসেই যমুনা ফিউচার পার্কের ভেতরের প্রত্যেক ফ্লোর আর বাইরের প্রায় চল্লিশ একর জায়গার চারপাশ চক্কর দিতেন। এরপর উনার অফিস রুমে এসে কি দেখলেন সেটা নিয়ে দিক নির্দেশনা দিতেন। এভাবে মাসের পর মাস উনার নিরলস ক্লান্তিহীন নজরদারিতে যমুনা ফিউচার পার্কের প্রতিটি ফ্লোরের ফিনিশিং কাজ শেষ হতে লাগলো।

যমুনা টেলিভিশন প্রখ্যাত সাংবাদিক সাইমন ড্রিংয়ের হাত ধরে বিশাল টিম মাসের পর মাস প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে গেলো। আমরা শুরু করলাম যমুনা ফিউচার পার্কের শপিং স্পেস বিক্রয় কার্যক্রম। এর কিছুদিন পরেই উনি ভারত ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগের বিখ্যাত একটি আন্তর্জাতিক শপিং মল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি দিয়ে মার্কেট সার্ভে করিয়ে নিয়ে ছোট ছোট শপিং স্পেস বিক্রয় বন্ধ করে দিয়ে কয়েকটি স্পেস নিয়ে বড় বড় স্পেস বানিয়ে ভাড়া দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আজ যমুনা ফিউচার পার্কের সুপরিসর ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটগুলোর দিকে তাকিয়ে সবাই দেশের মাটিতে বিশ্বের সেরা আন্তর্জাতিক শপিং মলের স্বাদ নেন, অথচ উনিই কিন্তু এই ডিজাইন আর লে-আউট আমাদের দিয়েছেন। যমুনা ফিউচার পার্ক যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যানের দেশের জন্য রেখে যাওয়া সেরা গৌরবের স্থাপনার অন্যতম। উনার কাছ হতে যেটা জেনেছি সেটা হলো, দেশের মানুষের শপিংয়ের নেশায় বিদেশমূখীতা কমাতে আর বাংলাদেশকে নির্মাণ অবকাঠামোর দিক দিয়ে বিশ্বের কাছে গৌরবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম আন্তর্জাতিক শপিং মলগুলোর অন্যতম হিসেবে এটি তিনি নির্মাণ করেছেন।

যমুনা ফিউচার পার্কের শপিং স্পেসগুলো আমরা দেশের বড় বড় রিটেইল ব্র‍্যান্ডগুলোর কাছে ভাড়া দেওয়া শুরু করলাম। এর মধ্যে সেনা কল্যাণ ভবন থেকে যমুনা গ্রুপের প্রধান কার্যালয় চলে আসলো আমাদের সাথে যমুনা ফিউচার পার্কে। আমরা আমাদের সার্বক্ষণিক অভিভাবক হিসেবে যমুনা গ্রুপের পুরো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকেই পেলাম। শুরুতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শামীম ইসলাম ও গ্রুপ পরিচালক সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম অন্যান্য ইউনিটের পাশাপাশি যমুনা ফিউচার পার্কের পেছনে সময় দিলেও পরে সার্বক্ষণিকভাবে গ্রুপ পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলামকে অভিভাবক হিসেবে সাথে পাই। যতোই সময় গড়ায় দায়িত্ব যেমন বাড়ে, পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যারের ও পরিবারের অন্যান্য সবার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতাও বাড়তে থাকে। খুব কাছে থেকে দেখতে থাকি যমুনা গ্রুপের প্রতিদিনের বেড়ে উঠা। প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যারের দূরদর্শী পরিকল্পনায় চোখের সামনে একের পর এক নতুন নতুন কোম্পানি, মিল, কারখানা, শিল্প অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হতে লাগলো প্রতি বছর। যমুনা গ্রুপের ব্যবসার পরিধি, ব্যবসার ধরণ, টার্ণওভার সম্প্রসারণ হতে লাগলো জ্যামিতিক হারে। যমুনা ফিউচার পার্ক চালু হলো।

শত শত রিটেইল ব্যবসায়ীদের ব্র‍্যান্ড আউটলেটের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ভরে যেতে লাগলো এর প্রতিটি ফ্লোরের শপিং স্পেসগুলো। লক্ষ লক্ষ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হতে থাকলো যমুনা ফিউচার পার্কের পুরো একচল্লিশ লক্ষ বর্গফুটের শপিং স্পেস। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চালু হলো যমুনা টেলিভিশন। নিম্নমানের বিদেশি ইলেকট্রনিকস পণ্যের সয়লাব ঠেকাতে আর কম দামে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদন করে দেশের টাকা দেশে রাখার প্রত্যয়ে সিনাবোতে চালু হলো যমুনা ইলেক্ট্রনিকসের সুবিশাল কারখানা, বিরতির পর রি ব্র‍্যান্ডিং-এর মাধ্যমে আবার উৎপাদনে গেলো যমুনা ফ্যান। চালু হলো একের পর এক টেক্সটাইল সেক্টরের কম্পোজিট ইন্ডাস্ট্রি, বিশ্বময় পরিচিত হয়ে উঠলো টেক্সটাইলের নতুন ব্র‍্যান্ড “হুরেইন”, চালু হলো দেড় লক্ষ বর্গফুটের দেশের একমাত্র হাইপার মার্কেট হোলসেল ক্লাব। কোনাবাড়ির শিল্প কমপ্লেক্সের পরিধি বাড়তে থাকলো, সম্প্রসারণ হলো শফিপুরের শিল্প কমপ্লেক্সেরও। হবিগঞ্জে হাজার হাজার একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠলো দেশের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক “যমুনা ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্ক”। এভাবে সময়ের পরিক্রমায় যমুনা গ্রুপ কর্তৃপক্ষকে নানামুখী অনেক বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে একের পর এক ব্যবসা সফল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন- জীবিকার সংস্থান করতে দেখেছি আমি। আর এই মহাউদ্যোগের পরিকল্পনা প্রণয়ণের ও তার সফল বাস্তবায়নের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন প্রয়াত চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম।

আমার দেখা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম বাবুল ছিলেন একজন স্বপ্নচারী আর স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ। তাঁকে এক যুগ ধরে খুব কাছে থেকে দেখেছি। তিনি স্নেহ করতেন পিতার মতো, শাসন করতেন অভিভাবকের মতো, সবার ভালো মন্দের খবর নিতেন পরিবারের সদস্যদের মতো। মন ছিল একেবারে শিশুর মতো সহজ সরল। যাই মনে আসতো কোন রাখঢাক ছাড়াই অকপটে বলে ফেলতেন কে কি ভাববে তার তোয়াক্কা না করেই। কেউ ভুল করলে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতেন কিন্তু কেউ চুরি বা গর্হিত অপরাধ করলে ছাড় দিতেন না।

পাহাড়সমান উচ্চতায় ছিল তার সাহস আর মনোবল। অনেক দূরদর্শী পরিকল্পনা করতে পারতেন অনায়াসেই। তিনি বহুদূর পর্যন্ত ভবিষ্যতের পরিণাম বলে দিয়ে আমাদের তাক লাগিয়ে দিতেন। যমুনা ফিউচার পার্কে তাঁর সাথে যেসব বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ আসতেন তাঁদের অনেককেই নিচে থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আমি নিজে উনার রুমে নিয়ে এসেছি আর উনাদের মধ্যে কথোপকথনের অংশীদার হয়েছি। এসময় অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করতাম তাঁদের আলাপচারিতায় তাঁর বিজ্ঞতা আর অভিজ্ঞতালব্ধ মন্তব্য। দেশের অনেক রাজনীতিবিদ, মন্ত্রীবর্গ, উপদেষ্টামন্ডলী, উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ প্রায়ই উনার কাছে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা দেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি, দেশের ভবিষ্যৎ এরকম বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতেন আর আমি অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করতাম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর প্রশাসনিক সবক্ষেত্রেই উনার দূরদর্শিতা, নিরেট বাস্তবতাবাদী মনোভাব, অকুতোভয় দুঃসাহসী সৎ অবস্থান আর স্বদেশপ্রেম।

দেশের প্রতি ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি বিদেশে গড়ে তুলেননি কোনও লুকানো সাম্রাজ্য। যমুনা গ্রুপের প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রির অবকাঠামো বিনির্মানে উনি সরাসরি শুরু থেকে শেষ অবধি লেগে থাকতেন। অর্ধ শতাধিক দেশে আর চীনের নানান প্রদেশে ঘুরে ঘুরে নিজে সবকিছুর অর্ডার করে আসতেন। অংশগ্রহণ করতেন বিদেশের বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক শিল্প মেলায় আর ফিরে এসে আমাদের মেলার নতুন পুরাতন অভিজ্ঞতার গল্প বিস্তারিত জানাতেন। আমি প্রায়শই উনার হোটেল বুকিং করতাম, তাই হলফ করে বলতে পারি দেশের বাইরে এই পৃথিবীর অন্য কোন দেশে উনার কোন বাড়ি ঘর বা অন্য কোন সম্পত্তি নেই। উনি সারাজীবন যাই করেছেন দেশেই করেছেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যই করেছেন, দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্যই করেছেন।

যমুনা গ্রুপে আমার কর্মজীবন ২০০৮ সালে শুরু হলেও এই কয় বছরে আমাকে কোম্পানির জন্মলগ্ন থেকে ক্রমে বেড়ে উঠার আদ্যোপান্ত গভীরভাবে জানতে হয়েছে কাজের প্রয়োজনেই। ১৯৪৬ সালে জন্ম নেওয়া নুরুল ইসলাম বাবুল ১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। যমুনা ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শুরু হয় যমুনা গ্রুপের পথচলা। ১৯৭৫ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ একটি সুবৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী হিসেবে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

অ্যারোমেটিক কসমেটিকসের হালাল প্রসাধনী ও সাবান এবং যমুনা ফ্যানের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। প্যাগাসাস ব্র্যান্ডের ব্যবসায়িক সফলতা, যমুনা ফিউচার পার্কের মতো সুবিশাল অত্যাধুনিক শপিং মলের আকর্ষণ, যমুনা ইলেক্ট্রনিকসের পণ্যসম্ভারের সারাদেশে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন, সর্বোপরি ‘যমুনা’ শব্দটিকে গুণগত মানের একটি সেরা ব্র্যান্ডের পরিচিতি এনে দিয়েছে তাঁর নিরলস পরিশ্রম, ব্যবসায়িক সততা, একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা আর সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তাঁর পারস্পরিক সম্পর্কের দায়বদ্ধতার বোধের কারণেই । একের পর এক নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশের শিল্প খাতে বিশাল অবদান রেখে গেছেন যমুনা গ্রুপের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম। তিনি বহুমাত্রিক পণ্য পরিসীমার মাধ্যমে যমুনা গ্রুপকে উন্নীত করিয়েছেন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোর অবয়বেই। উনার মাথায় সবসময় ঘুরপাক খেতো বৈচিত্র্যময় ব্যবসায়িক চিন্তা। ৪৬ বছরে তিনি বৈদ্যুতিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, রাসায়নিক, চামড়া, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইলসহ স্পিনিং, বুনন ও রঞ্জন, কসমেটিকস, বেভারেজ, আবাসন, হাউজিং, ফাইভস্টার হোটেল (জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল), বিনোদন পার্ক, প্রিন্ট (দৈনিক যুগান্তর) ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া (যমুনা টিভি) খাতে অর্থ লগ্নি করে প্রতিষ্ঠা করেছেন চল্লিশের বেশি ব্যবসা সফল কার্জকর প্রতিষ্ঠান যার বেশিরভাগই শিল্প শ্রেণীর আর কিছু সেবাধর্মী।

স্থানীয় ও বৈশ্বিক উভয় বাজারে তিনি সারাজীবন অর্জন করেছেন ব্যবসায়িক সুনাম যার ব্র‍্যান্ড ভ্যালু লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। তিনি জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, ইতালি থেকে প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ আমদানির মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে গুণগত মানের দিক দিয়ে সেরা পণ্য উৎপাদন করে ‘টেক্সটাইলের নতুন বিশ্ব’ গড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। দেশের অন্যতম বড় শিল্প পরিবার যমুনা গ্রুপের অধীনে এখন রয়েছে ৪১টি কার্যকর ব্যবসাসফল প্রতিষ্ঠান। প্রয়াত চেয়ারম্যানের করোনায় আকস্মিক মৃত্যুর পর বিশাল এই শিল্প-বাণিজ্যের হাল ধরেছেন তাঁর চার সন্তান, যাদের বছরের পর বছর ধরে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা নিজেই। স্বপ্নদ্রষ্টার হাতে গড়া বিশাল শিল্প সাম্রাজ্য আর তাঁর রেখে যাওয়া স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছেন নতুন প্রজন্মের এই তরুণ নেতৃত্ব। আর অভিভাবক হিসেবে আছেন তাঁর স্ত্রী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম এমপি ও বড় জামাতা এস এম আব্দুল ওয়াদুদ। অন্য দুই সুযোগ্য জামাতা মোঃ কামরুল ইসলাম ও জাকির হোসেনও সার্বিক পথচলায় আছেন সারথি হয়ে।

করোনা মহামারী থেকে দেশের কোটি কোটি মানুষকে বাঁচাতে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর সাথে সাথে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব নুরুল ইসলাম বাবুল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোষাগারে নগদ দশ কোটি টাকা, সরকারী হাসপাতালের সকল ডাক্তারদের জন্য, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জন্য, র‍্যাবের সদস্যদের জন্য ট্রাকের পর ট্রাক ভরে পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর মাস্ক বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন সেই করোনাই শেষ পর্যন্ত এই দানবীর, দয়ালু আর মহানুভব দেশদরদী শিল্প উদ্যোক্তার জীবন নিল। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার সংস্থান করা এমন শিল্প উদ্যোক্তারা অকালে হারিয়ে গেলে দেশ এগুবে কিভাবে? এক জীবনের তাঁর একার অর্জন আমাদের লক্ষ মানুষের সারা জীবনের সব স্বপ্নের চেয়েও অনেক বড়। হাজার বছরের ইতিহাসে কয় জন এমন স্বপ্ন দেখতে পারেন, আর কয় জনই বা স্বপ্নের চেয়েও লক্ষ গুণ বড় প্রাপ্তির এমন বিশালতার সম্ভার এক জীবনের সফলতার ঝুরিতে ভরতে সক্ষম হয়েছেন? কয় জনের বুকের পাটা এতো বড়? কয় জন এমন স্বপ্ন দেখার আর দেখানোর দুঃসাহস রাখেন? হাজার কিংবা লক্ষ মানুষের ভীড়ে আমি এমন স্বপ্নদ্রষ্টা একজনকেও খুঁজে পাই না। হ্যাঁ কোটি মানুষের ভীড়ে কয়েকটা মুখ সামনে আসে বটে, যারা এক জীবনে হাজার জীবনের স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন জাগায়। আমাদের অনেকের জীবনের সব কীর্তিগুলো একসাথে যোগ করলেও কি আমরা একজন নুরুল ইসলাম বাবুলকে ছুঁতে পারবো? প্রশ্ন রেখে গেলাম।

লেখক – ডঃ আলমগীর আলম, বিপণন পরিচালক-যমুনা গ্রুপ
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে