ডায়াবেটিস আজ বিশ্বব্যাপী এক বড় সমস্যা। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীদের সাধারণত সারা জীবন ধরে ওষুধ ও ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ওজন কমিয়ে ও কিছু নিয়ম মেনে এই রোগ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব। আসুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কি কি খাবেন? কি খওয়া যাবে নাহ? কি করতে হবে, কি করবেন না? তা জেনে নিন।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
জার্মান ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ প্রফেসার স্টেফান মার্টিন জানান, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে অতিরিক্ত ওজন কমানোর মাধ্যমে ডায়বেটিস শতকরা ৯০ ভাগ কমানো সম্ভব। যদি সে রোগীর ডায়বেটিসে ভোগার সময়কাল চার বছরের কম হয়ে থাকে।

নুডলস যখন ‘বিষ’
নুডলস বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের শর্করা রক্তে চিনির মাত্রা মুহূর্তের মধ্যেই বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে শরীরের কোষে ইনসুলিন হরমোন ছড়িয়ে পড়ে। তাই এ জাতিয় খাবার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

দিনে মাত্র ৬০০ ক্যালোরি
২০০ ডায়বেটিস রোগী নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডায়বেটিস রোগীরা কড়া ডায়েটিং করে, অর্থাৎ দিনে মাত্র ৬০০ ক্যালরি প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পর ঔষুধ সেবন বন্ধ করতে পেরেছেন। তাছাড়া দীর্ঘ তিন মাস শর্করা জাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিয়ে শুধু প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়েও একই ফল পাওয়া গেছে।

তিন বেলা প্রোটিন
তিন সপ্তাহ ধরে তিন বেলাই প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে অবশ্যই রক্তে চিনির মাত্রা কমে যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ স্টেফান মার্টিন। মাছ, মুরগি, ডিম, মটরশুটি এবং দুধ জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন।

বাদামও খুব উপকারী
ডায়বেটিস রোগীকে প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম, আখরোট খাওয়ার কথা পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কারণ বাদামের ম্যাগনেশিয়াম ইনসুলিনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

সবজি ও বিভিন্ন সালাদ পাতা
এ সবে ক্যালরি প্রায় নাই বললেই চলে। তবে এতে থাকা পানি পেট ভরায় এবং খুব ধীরে ধীরে রক্তে প্রবেশ করে। সালাদের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিলে অনেকক্ষণ খিদেও পায় না। তাই প্রচুর সালাদ খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

স্ট্রবেরি, আপেল
এ সব ফলে অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক কম শর্করা রয়েছে। কাজেই ওজন কমাতে এবং ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোনো চিন্তা না করে এ ধরনের ফল যত খুশি খাওয়া যায়।

ডায়াবেটিসের জন্য ওটস
ওটস নিম্ন-গ্লাইসমিক খাদ্য। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ওটসে বিটা-গ্লুকান নামের দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা স্থিতিশীল করে ডায়াবেটিস পরিচালনা করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখে এবং অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফাইবার হজমে সময় লাগে, যা রক্ত শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে।

ওটস মূলত কার্বোহাইড্রেটের উত্স, যা রক্তের প্রবাহে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে চিনিতে রূপান্তরিত হয়। তবে, ওটসের কার্বোহাইড্রেটে ফাইবার রয়েছে, যা রক্তের প্রবাহে চিনির ধীর ধীর মুক্তি ঘটায়। জটিল কার্বোহাইড্রেট সহ, ওটসে অল্প পরিমাণে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে।

বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন
ডায়বেটিস রোগীর এক প্লেট খাবারের অর্ধেকটাই হতে হবে সালাদ বা সবজি। আর বাকি অর্ধেকে চার ভাগের তিন ভাগ প্রোটিনযুক্ত খাবার আর এক ভাগ থাকতে পারে শর্করা জাতীয় খাবার। বাইরের কেনা খাবার একেবারেই বাদ রাখুন। এই নিয়মগুলো মেনে চললে ডায়বেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মোটেই কষ্টকর নয়।

হালকা খাবার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডায়েবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ার মূল কারণ, অতিরিক্ত ওজন। ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ওজন কমাতে রাতে হালকা খাবার খাওয়া উচিত। রাতে ফুল প্লেট ভাত, পাস্তা বা নুডল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ জার্মান পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের। কারণ রাতে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে তা রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

স্যাকারিন নয়
ডায়েবেটিস রোগীদের অনেকেই চিনির বিকল্প হিসেবে স্যাকারিন খান। তবে রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে অনেকেই যখন মিষ্টি খাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন, তখন কিন্তু স্যাকারিন তা দমন করতে পারে না। আসল চিনিই কেবল সেক্ষেত্রে উপকারী। এ কথা জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডের ল্যুজানে বিশ্ববিদ্যালয়।

শিশুকে বুকের দুধ পান করান
শিশুকে বুকের দুধ পান করালে তা মা ও শিশু দু’জনের জন্যই উপকারী। যে মা শিশুকে তার দুধ পান করান, পরবর্তী দশ বছর তার ডায়েবেটিস ‘টাইপ টু’ হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৪০ ভাগ কমে যায়। এই তথ্য জানাচ্ছে, জার্মানির মিউনিখ শহরের হেল্মহল্জ সেন্টারের একটি গবেষণা।

সাইকেল চালান
ডেনমার্কের একটি বিশ্ববিদ্যলয়ের ৫২,০০০ জন মানুষকে নিয়ে করা এক সমীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে যারা সাইকেল চালান, তাদের ডায়বেটিস ‘টাইপ টু’-র ঝুঁকি অনেক কম।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে