পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে প্রতিটি প্রাণীই ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কোনো না কোনো ভুল-ত্রুটি ও গুনাহর সাথে সংশ্লিষ্ট। ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের দ্বারা যদি কোনো গুনাহ না হতো তবে তোমাদের পরিবর্তে আল্লাহ এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করত এবং তওবাও করত’। (মুসনাদে আহমদ : ২৯০৩)।
গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা যেমন মুমিনদের পরিচায়ক তেমনি তওবা করাও মুমিনদের অনন্য বৈশিষ্ট্য। তাই তা হোক সগিরা (ছোট) গুনাহ বা কবিরা (বড়) গুনাহ। রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দা যদি সগিরা গুনাহ করে অনুতপ্ত না হয় এবং তওবা না করে তবে তা আল্লাহর কাছে কবিরা গুনাহ বলে বিবেচিত হয়। পক্ষান্তরে কেউ কবিরা গুনাহ করেও যদি অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে তবে তা আল্লাহর কাছে সগিরা গুনাহ বলে গণ্য হয় এবং তিনি তা ক্ষমা করে দেন’। (তিরমিজি : ১৮৭১)
গুনাহ করা যেমন বান্দার স্বভাব তেমনি গুনাহ মাফ করাও আল্লাহর স্বভাব এবং বিশেষ গুণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তার গুনাহগুলো মিটিয়ে দেয়া হবে এবং তার প্রতিদানকে বহু গুণে বৃদ্ধি করা হবে’। (সূরা তালাক : ৫)
গুনাহ চার প্রকার। যার দুই প্রকার ক্ষমা করা হয়, বাকি দুই প্রকার ক্ষমা করা হয় না।
১. যে গুনাহ বান্দার অনিচ্ছায় হয়ে যায় তা ক্ষমা করা হয় এবং আজাব দেয়া হয় না, নিয়ামতও বন্ধ করা হয় না। (সূরা আহযাব : ৫)
২. বান্দা কবিরা গুনাহ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে আল্লাহ তা ক্ষমা করেন এবং তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (সূরা আল-ইমরান : ১৩৫)
৩. বান্দা গুনাহ করার পর যদি অনুতপ্ত না হয় বা তওবা না করে তাকে তুচ্ছ মনে করে তবে তার গুনাহ তওবা না করা পর্যন্ত ক্ষমা করা হয় না।
৪. যে ব্যক্তির কাছে পাপের কাজ পাপের বলে মনে হয় না এবং তা স্বাভাবিক মনে করে, এ প্রকার গুনাহ ক্ষমা করা হয় না। এসব লোকই জাতির সবচেয়ে হতভাগ্য, যাদের আমল তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়। (ইবনে আবু দুনিয়া, আত-তাওবা: খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ৫৫)
তবে কেউ যদি পরে তার পাপের ব্যাপারে অনুতপ্ত হয় এবং খালেস তওবা করে সংশ্লিষ্ট পাপ থেকে বিরত থাকে তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে। কারণ আল্লাহপাক নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। (সূরা যুমার : ৫৩)
এ তওবা করতে হবে মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগেই। কারণ এ মুহূর্তে মানুষের ঈমান আনা ও তওবা করাতে কোনো লাভ নেই। (সূরা মু’মিন : ১০০)
মুমিন ও মুনাফিকের গুনাহের মধ্যে পার্থক্য হালো মুমিন গুনাহকে পাহাড়সম বোঝা মনে করে আর মুনাফিক তাকে খুবই তুচ্ছ ও স্বাভাবিক মনে করে। (ইবনে আবু দুনিয়া, আত-তওবা : খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ৩৯)
তওবার দরজা কিয়ামতের নিদর্শন, পশ্চিমাকাশে সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খোলা রয়েছে এবং আল্লাহপাক বান্দাকে ক্ষমা করবেন। কিন্তু তওবার রয়েছে তিনটি শর্ত।
১. কৃতকর্মের অনুশোচনা করা।
২. ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
৩. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
তবে যদি তা ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হক আদায় করতে হবে অথবা ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে