ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতাঃ অর্পিতা গুহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্ব পাইকপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। পিতা বাদল গুহ একজন সাংবাদিক। মা নন্দিতা গুহ সমাজ কর্মী। এক ভাই ও বোনের মধ্যে অর্পিতা ছোট।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গভঃমডেল গার্লস হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিকের গন্ডি পাড় হতেই পরিবার থেকে সিলেটে আরেক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেয় অর্পিতাকে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই অর্পিতা জন্ম দেয় একটি ছেলে সন্তান। সেই সন্তান কোলে নিয়েই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় সে। এরই মাঝে আরও এক কন্যা সন্তানের মা হয় অর্পিতা। তারপরও থেমে থাকেননি, একে একে সিলেট এমসি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস, সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা), বিএড সম্পন্ন করেন।
এমবিএ’তে পড়ার সময় ২০১২সালে দেশের স্বনামধন্য মডেল ও ডিজাইনার বিবি রাসেলের একটি টকশো দেখে কাপড়ে ডিজাইন তৈরি করতে আগ্রহ জাগে তার। ২০১৩সালে অর্পিতা সিলেটের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তারপরও বিবি রাসেলের অনুপ্রেরণা পাওয়া বিভিন্ন জামা-কাপড়ের ডিজাইন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এরপর বিভিন্ন ডিজাইনে জামা তৈরি করে নিজে ও পরিবার-পরিজনকে ব্যবহার করতে দিতেন। তখন তার ডিজাইন ও কাপড় অনেকেরই প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তাদের প্রশংসায় উৎসাহ পেয়ে গজ কাপড় কিনে টাই-ডাই তৈরি করতো ঘরে বসেই। সেই টাই-ডাই পরিচিত মানুষেরা ছো মেরে কিনে নিয়ে যেত। এরপর থেকে শিক্ষকতার পাশাপাশি শুরু করেন নিজের ডিজাইন করা কাপড়ের ব্যবসা।
শুরু করেন তার মেয়ে অপরাজিতার নামের সাথে মিল রেখে ”অপরাজিতা’স কালেকশন” নামে ফেসবুক পেইজে অনলাইন বিক্রয় কেন্দ্র। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব কাপড়ের অর্ডার আসতে শুরু করে। ব্যাপক সারা পাচ্ছেন ”অপরাজিতা’স কালেকশন”। তার ডিজাইন করা কাপড়ের মধ্যে রয়েছে দেশি তাঁত, মনিপুরী শাড়ি-গামছা, চাদর, পঞ্চগড়ের হ্যান্ডলুম জামা, সিরাজগঞ্জের হাফ সিল্ক ও রাজশাহীর সিল্ক। এগুলোর মধ্যে কিছু সংশ্লিষ্টদের ডিজাইন করে পাঠিয়ে দিলে তারা সরবরাহ করেন। এছাড়াও সিলেটে নিজের বাসায় গড়ে তুলেছেন ছোট পরিসরে একটি কারখানা। যেখানে ৫জন শ্রমিক কাজ করেন। চাহিদা বেশি থাকলে অতিরিক্ত শ্রমিক যুক্ত করা হয়।
নিজের ডিজাইন করা কাপড়ের পাশাপাশি অপরাজিতা’স কালেকশনে যুক্ত করেন বিভিন্ন জায়গায় থেকে সংগ্রহ করা নারীদের নানান রকমের গহনা। যুক্ত করেন নারীদের নানান রকমের প্রসাধনী বিক্রি। এই করোনাভাইরাসের মহামারীতেও থেমে নেই অপরাজিতা’স কালেকশনের কাজ। সিলেট শহরে রিকশায় চড়ে কাপড় ডেলিভারি দিয়ে চলেছেন তার সহকর্মীরা। এছাড়া তো কুরিয়ারের অনলাইনে অর্ডার ডেলিভারিও থেমে নেই।
শুধু সিলেটেই নয়, অর্পিতা তার জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও এই কার্যক্রম চালু রেখেছেন। জেলা শহরের পূর্ব পাইকপাড়ায় আনন্দ নিকেতনে এই কার্যক্রম চলছে। সেখান থেকেও অর্ডার করা কাপড় সরবরাহ করা হয়।
জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ