নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (সোনারগাঁও জাদুঘর হিসেবে পরিচিত) উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। তবে মেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের নিয়ে মেলার আয়োজন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিমিন হোসেন রিমি দেশের সবগুলো তথা ৬৪ জেলার শিল্প সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এ মেলায় একই সঙ্গে একই স্থানে তুলে ধরার পরিকল্পনার কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জাগরণই পারে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে। এক স্থানে ৬৪ জেলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টি তুলে ধরা গেলে মানুষ এক স্থানে এসে সবকিছু অবলোকন করতে পারবেন। তিনি দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশের প্রতি জোর দেন এবং বাঙালিপনা মেলায় তুলে দেয়ার আহ্বান করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, সোনারগাঁও একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। এখানে এ মেলা সেই ঐতিহ্যকে আরো ফুটিয়ে তুলে। কিন্তু কেন জানি এ মেলা আয়োজনে অনেককে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে গণ্যমান্যদের সম্পৃক্ত করা গেলে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম, সোনারগাঁও পৌরসভা চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান ভূইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামছুল ইসলাম ভূইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলী হোসেন।
Nganj-Fair
উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাসের ভূইয়া, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা শাহ আলম রূপম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সোহেল রানা, ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি প্রমুখ।
ফাউন্ডেশন চত্বরে সোনারতরী মঞ্চে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে অতিথিরা মেলায় থাকা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। মেলা উপলক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের চত্বর সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এবারের মেলার অন্যতম আকর্ষণ গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম নকশিকাথা প্রদর্শন।
`বাংলাদেশের গৌরবগাঁথা আমাদের এই নকশিকাঁথা’ শিরোনামে প্রদর্শনীতে সোনারগাঁওসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১২ জন নকশিকাঁথা শিল্পী অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সূূত্রে জানা গেছে, মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। উৎসব চলবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
মেলায় ১৭২টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৪৮ জন কর্মরত কারুশিল্পী মেলায় অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ২৪টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের পাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি, ঘোড়া, পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, নকশি হাতপাখা, মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁয়ের পাটের কারুশিল্প, নাটোরের শোলার মুখোশ শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্তশিল্প ইত্যাদি এ মেলায় স্থান পাচ্ছে।
এছাড়াও লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তী-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি থাকবে।