ছিটমহল বিনিময়ের ৮ম বর্ষপূর্তি হয়েছে সোমবার। ২০১৫ সালের ৩১শে জুলাই মধ্যরাতের পর থেকে বিলুপ্ত হয় ছিটমহল। ফলে ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর আয়তনের ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। এরমধ্যে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত দাসিয়ারছড়া সবচেয়ে বড়। দেশের উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ায় একেবারে পাল্টে গেছে বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রা। মাত্র ৮ বছরে মুছে গেছে দীর্ঘ ৬৮ বছরের নাগরিকত্বহীন অবরুদ্ধ জীবনের গ্লানি আর বঞ্চনার কালিমা।

জানা গেছে, বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত ১১১টি ছিটমহলের ৩৭ হাজার ৫৩৫ জনকে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব দেয়া হয়। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ১২টি ছিটমহলের ৭ হাজার ৭৪৭ জনের মধ্যে দাসিয়ারছড়ায় নাগরিকত্ব পান ৬ হাজার ৫২৯ জন। এক হাজার ৬৪৩ দশমিক ৪৪ একর আয়তনের এই দাসিয়ারছড়ায় স্কুল স্থাপন, শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা ও স্যানেটারি টয়লেট প্রদান, কমিউনিটি ক্লিনিক, ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ভূমি রেকর্ড, পাকা সড়ক, মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ এবং কৃষিসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব সুবিধা পাওয়ায় খুশি এখানকার অধিবাসীরা। গত ৮ বছরে গড়ে উঠেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা সহজেই এলাকায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।

পাশাপাশি চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নও হয়েছে ছিটমহলের বাসিন্দাদের। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর দাসিয়ারছড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মান্নান খান বলেন, এই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়েছে। এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। দাসিয়ারছড়া ডিজিটাল সেন্টারের প্রশিক্ষক মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের ডিজিটাল সেন্টারে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চলছে নিয়মিত। ধীরে ধীরে এখানকার মানুষ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

দাসিয়ারছড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, দাসিয়ারছড়ায় ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নির্মাণাধীন ও একটির ভবন হয়েছে। এদিকে সরকারের সব ধরনের সেবা সহজেই মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে দাসিয়ারছড়াকে ভাগ করে ফুলবাড়ী সদর, ভাঙ্গামোড় ও কাশিপুর তিন ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দাসিয়ারছড়ার মানুষ পাচ্ছেন বলে জানান ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি দাসিয়ারছড়া শাখার সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, ৮ম বর্ষপূর্তি ও ৯ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে দাসিয়ারছড়ার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তাই দাসিয়ারছড়ার মানুষ দিবসটি উপলক্ষে আনন্দ উল্লাস করছে। বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, এই দিনে ছিটমহলবাসী বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করেছে যা অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের বিষয়। এ দিনে তাই ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে। দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। র‌্যালি, আলোচনাসভা, খেলাধুলাসহ নানা আয়োজন করা হবে। ভবিষ্যতেও দাসিয়ারছড়াসহ বিলুপ্ত সকল ছিটমহলের মানুষ দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন অব্যাহত রাখবে।

অনলাইন নিউজ ডেস্ক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে