এপেন্ডিসাইটিস একটি অত্যন্ত সাধারণ সার্জিক্যাল সমস্যা। এপেন্ডিসাইটিস হলে প্রথমে নাভীর চারপাশে ব্যথা করে। তারপর সেব্যথা তলপেটের ডান দিকে চলে যায়। ব্যথার সঙ্গে হালকা জ্বর থাকতে পারে, বমি বমি ভাবও থাকতে পারে। এগুলোই এপেন্ডিসাইটিসের সাধারণ লক্ষ্মণ। এ ছাড়াও তলপেটের ডান দিকে বিভিন্ন কারণে ব্যথা হতে পারে। যেমন, কারো যদি ডান আর্টার অথবা প্রস্রাবের নালিতে পাথর থাকে, সেক্ষেত্রেও ব্যথা থাকতে পারে। এ ছাড়া কারো যদি হঠাৎ করে গ্যাস্ট্রোএন্টারেটিস্ট (Gastroenteritis) অর্থাৎ পেট খারাপ হয়, সেক্ষেত্রেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রেএক্টোপিকপ্রেগন্যান্সি (Ectopic pregnancy) যদি হয় অর্থাৎ কারো গর্ভধারণ যদি জরায়ুতে না হয়ে একটি নালীতে হয়ে যায়, বিশেষ করে ডান দিকের নালীতে যদি হয়; সেক্ষেত্রেও কিন্তু তলপেটে হঠাৎ করে ব্যথা হতে পারে। কারো যদি ডান ওভারিতে ব্যথা হয় তাহলেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
কাজেই ডান দিকে ব্যথা হলেই যে এপেন্ডিসাইটিস হবে, বিষয়টি সেরকম নয়। অনেকেই বলে থাকেন, এপেন্ডিসাইটিস হলেই অপারেশন করতে হবে, অপারেশন না করলে এপেনডিক্সটা ফেটে যেতে পারে এবং রোগী মারা যেতে পারে। এপেন্ডিসাইটিস বিভিন্ন রকম হতে পারে, কারো একুউটএপেনডিসাইটিস(Acute appendicitis)হতে পারে। কারো দেখা যায় বারে বারে ব্যথা হয়, সেটাকেরিকোয়াররেন্টএপেন্ডিসাইটিস(Recurrent appendicitis) বলে থাকি। কারো যদি এপেন্ডিসাইটিস হয় এবং তাঁর যদি শারিরীক অবস্থাভালো থাকে, ডায়াবেটিস না থাকে, যদি গর্ভবতী না হন কিংবা শারীরিক দুর্বলতা না থাকে অনেক ক্ষেত্রেওষুধের মাধ্যমেও এপেন্ডিসাইটিস নিরাময় সম্ভব। কিন্তুএপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে যথাসময়ে অপারেশন না করালেএপেনডিকুলারঅ্যাবসাস(Appendicular abscess) বাএপেনডিকুলার লাম্ব(Appendicular lump) হতে পারে। কিংবা ব্রাস্ট এপেনডিস্ক(Burst appendix) হতে পারে। সেজন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এপেন্ডিসাইটিসের ধরন নির্ণয় করতে পারলে দ্রুত অপারেশন করে রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। কেননা সঠিক সময় অপারেশন না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

অনেকক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা হলে তাকে এপেন্ডিসাইটিস বলা হয়। কিন্তু তলপেটের ডানদিকে ব্যথা মানেই কিন্তু এপেন্ডিসাইটিস নয়। বিভিন্ন কারণে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। যেমন, নারীদের মূত্রথলিতে পাথর,এক্টোপিকপ্রেগন্যান্সি(Ectopic pregnancy), প্রস্রাবের সমস্যা বা ইনফেকশন, শ্রোণীর প্রদাহ বাজরায়ু, ডিম্বনালি ও অন্যান্য প্রজনন অংগের সংক্রামণ ইত্যাদি। এরকম সমস্যা হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে হবে। চিকিৎসক যদি অপারেশনের পরামর্শ দেন তাহলে দ্রুততম সময়ে অপারেশন করতে হবে। নইলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। বর্তমানে এপেনডিক্সের অপারেশন অত্যন্ত সহজভাবে করা সম্ভব। অপারেশনের ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপিক করা যায়। কয়েকটি ছিদ্র করেই সেটি করা সম্ভব। এতে সুবিধা হচ্ছে, রোগীর এপেন্ডিসাইটিস আছে কি-না, সেটি ল্যাপারোস্কপিকের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারী), জেনারেল ও কোলো-রেকটাল সার্জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
E-mail:nazmul53yahoo.com, drnazmulhoque.com

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে