ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদ শ্রম আইন লঙ্ঘন করে ‘কর্মচারীদের অংশগ্রহণ তহবিল’-এর টাকা ট্রেড ইউনিয়ন ও আইনজীবীর ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের অভিযোগের সত্যতা ও যথার্থতা আছে কিনা তা উদঘাটনে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ এ অভিমত দেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী ও ট্রেড ইউনিয়নের আইনজীবীর নেয়া ১৬’কোটি টাকা ফি ও বিবিধ ব্যয়ের ১০’কোটি’সহ মোট ২৬’কোটি টাকার বিষয়ে প্রতিবেদন দেখার পর আজ এ অভিমত দেন আদালত। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত বিষয়টি আজ নিষ্পত্তি করে দেন।আদালতে ১৬’কোটি টাকা ফি নেয়া আইনজীবী ইউসুফ আলীর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী। আর গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে গত ৩০ জুন জানতে চান হাইকোর্ট। গ্রামীণ টেলিকম ও প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক-কর্মচারীদের আইনজীবীদের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। কোন কর্মচারীকে কত টাকা দেয়া হয়েছে তার তালিকা এবং এ সংক্রান্ত নথিসহ হলফনামা করে প্রতিবেদন দিতে বলেন আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২ আগস্ট বিষয়টি আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আইনজীবী ইউসুফ আলী আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা আদায় বাবদ তিনি ১৬ কোটি টাকা ফি নিয়েছেন। এ ছাড়া ‘বিবিধ ব্যয়’ বাবদ আরো ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা কর্মচারীদের অংশগ্রহণ তহবিল থেকেই ব্যয় হয়েছে। সেদিন আদালত এ আইনজীবীকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হলফনামা করে ফের প্রতিবেদন দিতে বলেন। নির্দেশমত আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে প্রতিবেদন দেন আইনজীবী ইউসুফ আলী।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কর্মচারীদের অংশগ্রহণ তহবিল বাবদ গ্রামীণ টেলিকম থেকে পাওয়া ৪৩৭ কোটি টাকা থেকে আইনজীবী ফি এবং বিবিধ ব্যয় বাবদ ২৬ কোটি ২২ লক্ষ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা কেটে নেয়া হয়। সেখান থেকে গ্রামীণ টেলিকম ও কর্মচারীদের ২৪৩টি মামলা পরিচালনার জন্য ফি বাবদ ১৬ কোটি টাকা দেয়া হয়। বাকি ১০ কোটি ২২ লক্ষ ৬ হাজার ৭৮০ টাকার মধ্যে ৫০ লক্ষ করে এক কোটি টাকা দেয়া হয় ইউনিয়নের দুই নেতাকে, যারা ঋণ করে মামলা পরিচালনায় ব্যয় করেছিলেন। বাকি টাকা ইউনিয়নের সদস্যদের ভবিষ্যত কল্যাণে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়। সেখান থেকে ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও একজন সহ-সভাপতি নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি করে মোট ৯ কোটি টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর করেন।
ট্রেড ইউনিয়নের পদাধিকারীদের এ ধরনের বেআইনি কর্মকান্ডের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম শুরু করেছে।