গতকাল যে মহাদেশ ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা নিপীড়িত ছিল এবং আজ যে মহাদেশকে ইয়াঙ্কি সাম্রাজ্যবাদ শোষণ করছে, অন্যায়ভাবে অনুন্নত করে রেখেছে, সে মহাদেশে এমন একজন লোক ঝড়ের মত আবির্ভূত হয়েছে, যার নাম বিশ্বের বিপ্লবী সংগ্রামে প্রানাবেগ সৃষ্টি করেছে । এমনকি সাম্রাজ্যবাদী দেশে উপনিবেশর আধুনিক শহরগুলোতেও এই নামে কত উদ্দীপনা !
ইয়াঙ্কি সাম্রাজ্যবাদ এই প্রতীকের শক্তিকে, এবং যা তাকে আরও অভিব্যক্ত করতে পারে তাকে ভয় করে । এখানেই ডায়েরীর অন্তর্নিহিত মূল্য । এই ডায়েরী এক অসাধারন ব্যক্তিত্তের প্রানবন্ত অভিব্যক্তি । প্রতিদিনের উত্তাপ ও চাপা উত্তেজনার মধ্যে লেখা গেরিলা যুদ্ধ শিক্ষার পাঠমালা, যেন দাহ্য বারুদ । জারা ভাড়াতে সৈন্য দিয়ে মানুষকে দাসে পরিনত করেছে, জারাএই ডায়েরী প্রকাশ করতে শেষ পর্যন্ত বাধা দিয়েছে, তাদের মুখোমুখি দাঁড়াবার মতো সাহস যে লাতিন আমেরিকার মানুষের আছে তারই প্রকৃত প্রমান এই ডায়েরী ।
মেকি বিপ্লবী, সুবিধাবাদী, যত রকমের বাগারম্বরকারী, যারা নিজেদের মার্কসিস, কমিউনিস্ট আরও অন্যকোন গালভরা নামে পরিচয় দেয়, হয়ত তারাও এই ডায়েরী চেপে রাখত । তারা চে-কে ভ্রান্ত এবং হঠকারী বলতে ইতস্তত বোধ করেনি । যখন তারা তাঁর সম্পর্কে নম্রভাবে বলেছে তখন তাকে আদর্শবাদী বলে বর্ণনা করে তাঁর মৃত্যুকে লাতিন আমেরিকার বিপ্লবী সশস্ত্র যুদ্ধের শেষসঙ্গীত বলে কাব্য করেছে । আবার, তারা তারস্বরে বলেছে, “চে যদি এই চিন্তাধারার পরম উদ্গাতা হন, অভিজ্ঞ গেরিলা যোদ্ধা হয়েও গেরিলা যুদ্ধেই তিনি নিহত হয়ে থাকেন এবং তাঁর আন্দোলনে যদি বলিভিয়া মুক্ত না হয়ে থাকে, তাহলে প্রমানিত হয় তাঁর পথ কত ভুল ছিল।“ চে-র ম্রিত্তুতে এই হতভাগ্যদের কতজন খুশি হয়েছে! তারা এই চিন্তা করে লজ্জিত হয়নি যে তাদের বক্তব্য ও যুক্তি চরম প্রতিক্রিয়াশীল সাশকচক্র ও সাম্রাজ্যবাদের কাথার সঙ্গে হুবুহু মিলে যাচ্ছে ।
( চে গুয়েভারার ডায়েরী থেকে… চলবে )